Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
deforestation

মানুষের প্রাণের কথা ভেবেই গাছ কাটতে হবে

আমার মনে হয়, যশোর রোড সম্প্রসারণ খুবই জরুরি। কারণ, সড়ক পথে কলকাতায় যেতে হলে যানজটের মধ্যে পড়তে হয়। দীর্ঘ সময় লেগে যায়।

বিপজ্জনক: এমন ডাল ভেঙেই বার বার দুর্ঘটনা

বিপজ্জনক: এমন ডাল ভেঙেই বার বার দুর্ঘটনা

শালিনী চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৯:৪১
Share: Save:

মানুষের স্বার্থে যশোর রোড চওড়া করা, উড়ালপুল তৈরি করা খুবই জরুরি। তবে পাশাপাশি এটাও দেখতে হবে, গাছ কাটার পরিবর্তে যেন নতুন গাছ লাগানো হয়। গাছ কেটে রাস্তা চওড়া করার সিদ্ধান্ত আগেই নেওয়া উচিত ছিল। তা হলে হয় তো অসময়ে আমার মাকে হারাতাম না।

সালটা ছিল ২০১২ সালের ৬ মে। আমার বয়স তখন মাত্র চোদ্দো। মা বৈশাখী চট্টোপাধ্যায় অটোয় যশোর রোড ধরে যাচ্ছিলেন। গাইঘাটার মণ্ডলপাড়া এলাকায় অটোর উপরে একটি গাছের ডাল ভেঙে পড়েছিল। মা এবং আরও কয়েক জন মারা যান।

ছোট বয়সে মাকে হারানো আমার জীবনের বড় ক্ষতি। ওই ঘটনা আমার জীবনটাই বদলে দিয়েছে। মাথায় এখনও ঘোরে সে সব কথা। এখনও মনে হয় ধাক্কাটা কাটিয়ে উঠতে পারিনি। মা সাংস্কৃতিক কর্মী ছিলেন। বনগাঁর মানুষের কাছে পরিচিত মুখ। তাঁর মৃত্যুর পরে চারিদিকে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল। রাস্তা চওড়া করা, যশোর রোডের পাশের মরা শুকনো বিপজ্জনক ডাল গাছ কাটার দাবি উঠেছিল। কিন্তু তারপরেও ডাল ভেঙে মৃত্যু বন্ধ হয়নি।

ওই ঘটনার পরে প্রায় ১১ বছর পেরিয়ে গিয়েছে। এখনও শুনি, যশোর রোডে গাছের ডাল ভেঙে কেউ মারা গিয়েছেন, কেউ জখম হয়েছেন। বুকের ভিতরটা মোচড় দিয়ে ওঠে। ভাবি, কেউ না কেউ তাঁর স্বজনকে হারালেন।

এখন আইন নিয়ে পড়াশোনা করি। ফাইনাল সিমেস্টারের ছাত্রী। সম্প্রতি বনগাঁ আদালতে শিক্ষানবিশ আইনজীবী হিসাবে কাজ শুরু করেছি। তবে মায়ের মৃত্যুর পর থেকে আমি বা আমার বাবা তন্ময় চট্টোপাধ্যায় যশোর রোডে কখনও অটোয় যাতায়াত করি না। বাবা আর ঠাকুমা অনিমাকে নিয়ে আমার পরিবার। বাবা বাড়ি ফিরতে দেরি হলে খুব অস্বস্তি হয়।

আমার মনে হয়, যশোর রোড সম্প্রসারণ খুবই জরুরি। কারণ, সড়ক পথে কলকাতায় যেতে হলে যানজটের মধ্যে পড়তে হয়। দীর্ঘ সময় লেগে যায়। যশোর রোডের পাশে থাকা মৃতপ্রায় গাছগুলি কেটে ফেলা উচিত। বদলে, নতুন করে আরও বেশি সংখ্যায় গাছ লাগানো উচিত। আমার মা গাছগাছালি, প্রকৃতি ভালবাসতেন। আমিও চাই, যশোর রোডের যে গাছগুলি এখনও জীবিত, সেগুলিকে সংরক্ষণ করা হোক।

সেই সঙ্গে যশোর রোডের পাশে থাকা প্রাচীন গাছের ঝুলে থাকা বিপজ্জনক ও শুকনো মরা ডাল নিয়মিত কাটার ব্যবস্থা করুক প্রশাসন। নিয়মিত গাছের পরিচর্যা করলে হয় তো কোনও পরিবারের সদস্যের প্রাণ অকালে চলে যাবে না।

(গাছের ডাল পড়ে মৃত বৈশাখী চট্টোপাধ্যায়ের মেয়ে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

deforestation Jessore Road
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE