Advertisement
E-Paper

এক টুইটেই ঠান্ডা

টুইটারে ঠাণ্ডা সিট বেদখলকারীরা

সীমান্ত মৈত্র

শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৮ ০২:৩৫
1-1 অভিযান: ট্রেনের কামরায় সিট দখল করেছে নাকি কেউ, নজরদারি পুলিশের।

1-1 অভিযান: ট্রেনের কামরায় সিট দখল করেছে নাকি কেউ, নজরদারি পুলিশের।

টুইট-অস্ত্রে বেকায়দায় জবরদখলকারী।

বনগাঁ লোকালের যাত্রী, তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার এক কর্মী রবিবার রেলমন্ত্রকে টুইট করে জানিয়েছিলেন, লোকাল লোকালে কিছু নিত্যযাত্রী কী ভাবে সিট দখল করে রাখেন। তার জেরে অন্য যাত্রীরা বসতে জায়গা পান না। বসলেও উঠিয়ে দেওয়া হয়। উড়ে আসে কটূক্তি, গালিগালাজ, এমনকী হুমকিও।

সেই টুইটের জবাব মেলে দ্রুত। রেলমন্ত্রক থেকে রেল পুলিশকে বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। এই খবর প্রকাশিত হয়েছিল আনন্দবাজার পত্রিকায়। তারই জেরে মঙ্গলবার সকাল থেকে বনগাঁ স্টেশনে দাপট দেখাল রেল পুলিশ ও জিআরপি।

খবরের কাগজ, রুমাল, দেশলাইয়ের খোল কিংবা চিরুনি রেখে যাঁরা বছরের পর বছর আসন দখল করে দুর্নাম কুড়িয়েছেন, তাঁরা অবশ্য এ দিন সতর্ক ছিলেন। জবরদখলকারীদের দৌরাত্ম্য তেমন দেখা যায়নি। যে দু’চারটে জিনিসপত্র দিয়ে কিছু সিট বুকিং করা হয়েছিল, সে সব তুলে বাজেয়াপ্ত করে জিআরপি। পুলিশ কর্মীদের গম্ভীর গলায় ‘‘এ সব রেখে কে সিট বুক করেছে’’— প্রশ্ন শুনে যাঁরা কামরায় ছিলেন, তাঁরা আকাশ-বাতাসে তাকিয়ে থেকেছেন। আর রুমাল-চিরুনির মালিকদের কেউ ট্যাঁ-ফুঁ করেননি।

দূর-হঠো: সাধারণ কামরা থেকে মালপত্র নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বনগাঁয় দু’টি ছবি তুলেছেন নির্মাল্য প্রামাণিক

মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে বনগাঁ প্ল্যাটফর্মে জিআরপি ও আরপিএফ যৌথ ভাবে অভিযানে নেমেছিল। সকাল ৭টা নাগাদ প্ল্যাটফর্মে গিয়ে দেখা গেল, দু’টি দলে ভাগ হয়ে জিআরপি ও আরপিএফ কর্মীরা ট্রেনের কামরায় নজরদারি চালাচ্ছেন। ২ নম্বর প্ল্যাটফর্মে বনগাঁ-মাঝেরহাট লোকাল দাঁড়িয়েছিল। পুলিশ কর্মীরা জানলা দিয়ে উঁকি মেরে দেখেন, সিট দখল করা হয়েছে কিনা। কোনও কোনও কামরায় উঠেও তল্লাশি চালান তাঁরা। এক ব্যক্তি নিজের ব্যাগ সিটে রেখে গেটে দাঁড়িয়েছিলেন। পুলিশ কর্মীরা জানতে পেরে তাঁকে ধমক দিয়ে বলেন, ‘‘যান, নিজের জায়গায় বসুন।’’

কিছু যাত্রী যাত্রী কামরায় গেটের কাছে মালপত্র রেখেছিলেন। এই দৃশ্যও রোজ দেখা যায় বনগাঁ লাইনে। জিআরপি কর্মীরা মালপত্র নিয়ে ভেন্ডার কামরায় চলে যাওয়ার নির্দেশ দেন। চলন্ত ট্রেনে এক ব্যক্তি মালপত্র নিয়ে ওঠার চেষ্টা করলে তাঁকেও পুলিশ কর্মীরা থামিয়ে দেন। সকাল ৯টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে যখন প্ল্যাটফর্ম ছাড়ছেন পুলিশ কর্মীরা, তখন যাত্রীদের নজরে সমীহ।

তবে সংশয়ও আছে কারও কারও।

এক যাত্রীর আক্ষেপ, ‘‘সর্বোচ্চ মহলের নির্দেশে এত কড়াকড়ি। রোজ তো আর রেলমন্ত্রক নির্দেশ দেবে না। তা হলে দু’দিন বাদেই পরিস্থিতি আগের মতো হবে কিনা, কে বলতে পারে।’’ আর এক যাত্রীর কথায়, ‘‘এমন নজরদারি যদি মাঝে মাঝেই হয়, তা হলে নিত্যযাত্রীদের দাদাগিরি কমবে। সিট দখল নিয়ে যে অসভ্যতা হয়, সেটা করতে আর কেউ সাহস পাবে না।’’

বাংলাদেশ থেকে এক মহিলা কয়েকজন আত্মীয়ের সঙ্গে এ দেশে এসেছেন চিকিৎসা করাতে। যাবেন কলকাতায়। এ দিন বনগাঁ স্টেশনে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘‘আগেও কলকাতায় চিকিৎসা করানোর জন্য বনগাঁ থেকে ট্রেন ধরেছি। সকালের দিকে ট্রেনে জায়গা পাইনি। খবরের কাগজ, রুমাল দিয়ে সিট রাখা ছিল। আজও সিট পাব ভাবিনি।। কিন্তু এ তো দেখলাম, পরিস্থিতি পুরো বদলে গিয়েছে।’’

জিআরপি জানিয়েছে, এ দিনের অভিযানে কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। কিছু ব্যাগ, কাগজ বাজেয়াপ্ত হয়েছে। নিত্যযাত্রীরা আগে থেকে সর্তক হয়ে গিয়েছিলেন। তার মধ্যেও যারা বেআইনি ভাবে সিট রেখেছিল, ধরপাকড়ের সময়ে তারা কেউ ধারে কাছে ঘেঁষেনি। বেআইনি সিট দখলের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চলবে বলে আশ্বাস মিলেছে জিআরপি, আরপিএফের তরফে। পুলিশের নজরদারি কবে ফের ফিকে হতে শুরু করবে, তা নিয়ে যেমন আলোচনা ছিল, তেমনই কলকাতা পর্যন্ত যাত্রাপথে সিট দখল নিয়ে আলোচনায় সরগরম ছিল ট্রেনের কামরা।

তারই মধ্যে দুই যাত্রীর চাপা গলায় কথা কানে এল। প্রথমজন: ‘‘দত্তদা খবরদার, সিট রাখা ক’দিন একদম ভুলে যান।’’ আরও ক্ষীণ কণ্ঠে জবাব মিলল, ‘‘এই টুইটারটা কী রে মুখুজ্জে? যত নষ্টের গোড়া তো ওটাই!’’ সোশ্যাল মিডিয়া আর টুইটারের মহিমা নিয়ে শুরু হয়ে গেল পরবর্তী আলোচনা।

Twitter Rail Daily Passenger
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy