Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

মনের জোরে পরীক্ষার হলে লতা, নবকুমার

দু’জনেই জন্ম থেকে প্রতিবন্ধী। দু’জনেই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। প্রতিবন্ধকতা জয় করার সিদ্ধান্ত নিয়ে আর পাঁচজনের মতো নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে বাবা-মায়ের পাশে থাকতে চায় ওরা।

লড়াই: পরীক্ষার হলে নবকুমার। নিজস্ব চিত্র

লড়াই: পরীক্ষার হলে নবকুমার। নিজস্ব চিত্র

দিলীপ নস্কর
মথুরাপুর শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৮ ০৩:২৫
Share: Save:

দু’জনেই জন্ম থেকে প্রতিবন্ধী। দু’জনেই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। প্রতিবন্ধকতা জয় করার সিদ্ধান্ত নিয়ে আর পাঁচজনের মতো নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে বাবা-মায়ের পাশে থাকতে চায় ওরা।

একজন মথুরাপুর রামমাটি গোপালনগরের লতা হালদার। জন্ম থেকে মূক-বধির। বাবা মারা গিয়েছেন। মায়ের সামান্য আয়ে সংসার চলে। লতার শরীরের অন্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও ঠিক ভাবে কাজ করে না। চলাফেরা করতে সমস্যা হয়। সামান্য কথা বললেই হাঁপিয়ে ওঠে। তবে সব প্রতিবন্ধকতা জয় করেই উচ্চ শিক্ষিত হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায় সে।

এ দিন সে তার পরীক্ষাকেন্দ্রে মা সুমিতা হালদারের সঙ্গে এসেছে। প্রথম দিনের পরীক্ষা ভালই দিয়েছে বলে জানায় লতা। তার মা জানান, ‘‘আমরা গরিব। ওর রোগের চিকিৎসা করাব, তেমন টাকা আমাদের নেই। জন্মের পরে ও শুধু কথা বলতে পারত না। কিন্তু ওর বয়স যত বাড়ছে, দেখছি, শরীরের অন্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও বিকল হচ্ছে। সত্যি বলতে কী, ওকে পড়ানোর ইচ্ছে তেমন ভাবে আমাদের ছিল না। কিন্তু ওর দৃঢ় ইচ্ছে আমাদের হার মানিয়েছে।’’

লতার মতোই আর একজন হল নবকুমার অধিকারী। জন্ম থেকেই নবকুমারের ডান হাত-পা নেই। মথুরাপুর এলাকার উত্তর দুর্গাপুর গ্রামের ওই পরীক্ষার্থী এ দিন পরীক্ষাকেন্দ্রে বসে বাঁ হাতেই পরীক্ষা দিল। তার দিনমজুর বাবা-মায়ের ইচ্ছে, ছেলে প্রতিবন্ধী হলেও কষ্ট করে পড়াশোনা চালিয়ে যাক। নবকুমার জানায়, ‘‘হাঁটাচলা করতে খুব কষ্ট হয়। তবুও আমার জেদ, যত কষ্টই হোক, বাবা-মায়ের মুখ রাখতে অনেক দূর পর্যন্ত পড়াশোনা করতেই হবে। নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই আমি।’’

মথুরাপুর আর্য বিদ্যাপীঠ হাইস্কুলের ওই দুই ছাত্রছাত্রীর এ বার সিট পড়েছে ওই এলাকার মথুরাপুর হাইস্কুলে। সকাল ১০টায় পরীক্ষা শুরুর সময়ে আলাদা আলাদা রুমে দুই প্রতিবন্ধীর পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকলেও অতিরিক্ত ১ ঘণ্টা এক ঘরেই দু’জনের পরীক্ষার ব্যবস্থা করেন হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অবনী পাত্র। তিনি বলেন, ‘‘ওদের কোনও সমস্যা না হয়, সে দিকে নজর রাখা হয়েছিল।’’ আর্য বিদ্যাপীঠ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অনিমেষ মান্না বলেন, ‘‘প্রতিবন্ধী দুই ছাত্রছাত্রীর কথা ভেবে আগে থেকেই কাউন্সিল থেকে পরীক্ষার সময়ে অতিরিক্ত এক ঘণ্টা চাওয়া হয়েছিল। তা মঞ্জুরও হয়েছে। গরিব পরিবারের দুই প্রতিবন্ধী তাদের সমস্যা কাটিয়ে উচ্চ শিক্ষার দিকে তাকিয়ে অটল রয়েছে। ওদের পাশে আমরা আছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Higher Secondary Examination Handicap
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE