Advertisement
১৯ মে ২০২৪

মোবাইলে গেম খেলতে খেলতেই ছিটকে পড়ে ওরা

মঙ্গলবার বিকেলের সেই ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে আতঙ্কে আঁতকে উঠছিল হাসপাতালে ভর্তি থাকা নবম শ্রেণির ছাত্র আমিনুল হালদার।

এখানেই পড়ে বাজ। নিজস্ব চিত্র

এখানেই পড়ে বাজ। নিজস্ব চিত্র

সামসুল হুদা
ভাঙড় শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৯ ০০:৪৬
Share: Save:

অনলাইনে মোবাইলে গেম খেলতে মশগুল ছিল ছেলেরা। সে সময়েই বাজ পড়ে। বাঁচানো যায়নি দু’জনকে। জখম হয় আরও একজন।

মঙ্গলবার বিকেলের সেই ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে আতঙ্কে আঁতকে উঠছিল হাসপাতালে ভর্তি থাকা নবম শ্রেণির ছাত্র আমিনুল হালদার। মঙ্গলবার দুপুরে হোমরা পলতা হাইস্কুলের নবম শ্রেণির সুজাউদ্দিন মোল্লা, আনিসুর রহমান লস্কর ও আমিনুল স্কুলে টিফিনের সময়ে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে ফাঁকা মাঠের ধারে বসে মোবাইলে অনলাইন গেম খেলতে ব্যস্ত ছিল। খেয়ালই করেনি, আকাশ মেঘে ঢেকে গিয়েছে। আমিনুল জানায়, হঠাৎ বৃষ্টি নামে। ঘন ঘন বাজ পড়ছিল। সকলে ছুটে গিয়ে একটি গাছের তলায় আশ্রয় নেয়। হঠাৎ প্রবল শব্দ, আলোর ঝলকানি। পাশের একটি বাবলা গাছে বাজ পড়ে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় সুজাউদ্দিনের। গুরুতর জখম অবস্থায় আনিসুর ও আমিনুলকে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যান স্থানীয় লোকজন। সেখানে আনিসুরকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।

আমিনুলের কথায়, ‘‘টিফিনের সময়ে তিন বন্ধু মিলে স্কুল থেকে একটু দূরে ফাঁকা মাঠের ধারে হাওয়া খেতে গিয়েছিলাম। মোবাইলে গেম খেলতে খেলতে ওই ঘটনা। মোবাইলটা বন্ধ হয়ে যায়। ছিটকে পড়ি আমরা। তারপর আর কিছু মনে নেই।’’

বুধবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, স্কুলের পিছন দিকে ইটের আঁকাবাঁকা রাস্তা চলে গিয়েছে মাঠের দিকে। রাস্তার ধারে কয়েকটি বাবলা গাছ। যে গাছটিতে বাজ পড়েছিল, সেটির ছাল উঠে গিয়েছে। গাছের মাঝখান থেকে ফেটে গিয়েছে।

এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা এনসান লস্করের পরিবার দূর থেকে জানলা দিয়ে দেখতে পান, তিনটি ছেলে গাছ তলায় দাঁড়িয়ে আছে। হাত নেড়ে ছেলেদের বাড়িতে এসে আশ্রয় নিতে বলেছিলেন তাঁরা। কিন্তু তার আগেই বাজ পড়ে এই বিপত্তি।

সুজাউদ্দিন ও আনিসুরের বাড়িতে বুধবার গিয়েছিলেন স্কুলের শিক্ষক- শিক্ষিকারা। দুই ছাত্রের আকস্মিক মৃত্যুতে এ দিন স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছিল।

সুজাউদ্দিনরা দুই ভাই এক বোন। বাবা আইনুল মোল্লা হোমরা পলতা হাইস্কুলের সামনে মশলা-মুড়ি বিক্রি করেন। আনিসুররা দুই ভাই। আনিসুর বড়। বাবা আহমদ আলি লস্কর পেশায় স্কুলশিক্ষক। মঙ্গলবারই অস্ত্রোপচারের পরে আনিসুরের মা হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছিলেন। অসুস্থতার কারণে ছেলের মৃত্যুসংবাদ দেওয়া হয়নি তাঁকে।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক শতদল মিস্ত্রি বলেন, ‘‘অত্যন্ত মর্মান্তিক ঘটনা। স্কুলে টিফিনের সময় সব ছেলেমেয়েরা বাইরে খেলছিল। বজ্রপাত-সহ বৃষ্টি শুরু হওয়ায় আমরা সকলকে ক্লাস রুমে ঢুকিয়ে দিয়েছিলাম। ওরা স্কুল থেকে দূরে থাকায় জানতে পারিনি। পরে খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করি। কিন্তু দু’জনকে বাঁচানো গেল না।’’

সুজাউদ্দিনের দাদা হাবিবুল্লা মোল্লা বলেন, ‘‘টিফিনের সময়ে আমি স্কুলের সামনে মশলা-মুড়ি বিক্রির কাজে হাত লাগিয়েছিলাম। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ছুটে গিয়ে দেখি, ভাই মাটিতে পড়ে আছে। ততক্ষণে আর দেহে প্রাণ নেই।’’

আনিসুরের বাবার কথায়, ‘‘আমি বাড়িতে ছিলাম না। স্ত্রীকে আনতে হাসপাতালে গিয়েছিলাম। সেখানেই ছেলের মৃত্যুসংবাদ পাই। বুঝতে পারছি না, কী করে ওর মাকে খবরটা জানাব!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lightning Bhangar ভাঙড়
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE