Advertisement
০৭ মে ২০২৪
Titagarh Municipality

WB Municipal Election 2022: প্রায় বিরোধী শূন্য শিল্পাঞ্চলে মিলেমিশে কাজ করার ডাক

ঠিক তাঁর পিছনেই তখন নৈহাটির প্রাক্তন পুর প্রধান, প্রবীণ তৃণমূল নেতা অশোক চট্টোপাধ্যায়ের পা ছুঁয়ে প্রণাম করছেন জয়ী প্রার্থীরা।

বাধা: পরিচয়পত্র ছাড়া ভোট গণনা কেন্দ্রে ঢোকার চেষ্টা করায় এক রাজনৈতিক দলের কর্মীকে আটকাচ্ছেন পুলিশকর্মীরা।

বাধা: পরিচয়পত্র ছাড়া ভোট গণনা কেন্দ্রে ঢোকার চেষ্টা করায় এক রাজনৈতিক দলের কর্মীকে আটকাচ্ছেন পুলিশকর্মীরা। বুধবার, ব্যারাকপুরে রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ কলেজের কাছে। ছবি: সুমন বল্লভ

বিতান ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০২২ ০৭:১১
Share: Save:

শেষ রাউন্ডের পর সবে তখন জয়ের খবর এসেছে। তা শুনে চোখ মুছে নিলেন টিটাগড় পুরসভার দু’বারের পুরপ্রধান ষাটোর্ধ্ব প্রশান্ত চৌধুরী। পি কে বিশ্বাস রোডে ১৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের অন্যতম কঠিন লড়াইয়ের ওয়ার্ডও বটে। এই প্রথম বার সেখানে তৃণমূল জিতল। টানা তিরিশ বছরের পুর প্রতিনিধি সিপিআই-এর তারিক আলমকে হারিয়েছেন প্রশান্তবাবু। নিজেই বলেন, ‘‘প্রতি প্রশাসনিক বৈঠকে দিদি (মুখ্যমন্ত্রী) ধমক দেন। এ বার এলে বলব স্বাধীনতার পরে এই প্রথম ১৬ নম্বর ওয়ার্ড আমাদের হয়েছে দিদি।’’

ঠিক তাঁর পিছনেই তখন নৈহাটির প্রাক্তন পুর প্রধান, প্রবীণ তৃণমূল নেতা অশোক চট্টোপাধ্যায়ের পা ছুঁয়ে প্রণাম করছেন জয়ী প্রার্থীরা। তাঁদের মাথায় হাত রেখে অশোকবাবু বলে চলেছেন, ‘‘বিরোধী শূন্য পুরসভা, সবাইকে মিলেমিশে কাজ করতে হবে।’’ কার্যত বিরোধী শূন্য গোটা ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল। গণনার আগেই ব্যারাকপুর সংসদীয় এলাকায় আটটি পুরসভার মধ্যে তিনটি পুরসভার পাঁচটি ওয়ার্ড বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তৃণমূলের দখলে চলে এসেছিল। ফল প্রকাশ হতে দেখা গেল, গারুলিয়া পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডে নির্দল প্রার্থী মকসুদ হাসান আর ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী নিমাই সাহা ছাড়া বাকি সব পুরসভার সব ক’টি ওয়ার্ডই তৃণমূলের দখলে।

এ দিন সকাল থেকেই গণনাকেন্দ্রের বাইরে এস এন ব্যানার্জি রোডে ডিজে-র সঙ্গে সবুজ আবির উড়িয়ে জয়োল্লাসে মেতেছিলেন ১৯৮টি ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থীদের অনুগামীরা। তত ক্ষণে ব্যারাকপুরের বিধায়ক রাজ চক্রবর্তীর অফিসে সবুজ রসগোল্লা বিলি চলছে। গণনা কেন্দ্রের বাইরের বিশাল জমায়েতে করোনা-বিধি মানার কোনও চিহ্নই ছিল না।

রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ কলেজের গণনা কেন্দ্রে বিরোধী শিবিরের হাতে গোনা কয়েক জন এলেও তৃতীয় রাউন্ডের পরেই কেউ ছিলেন না। গণনাকেন্দ্রের ভিতরে টানটান উত্তেজনাও ছিল না। উত্তর ব্যারাকপুর পুরসভার ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে লড়াই ছিল তৃণমূল প্রার্থী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য ও দু’বারের তৃণমূল কাউন্সিলরের। ওই কাউন্সিলর দেবাশিস দে টিকিট না পেয়ে নির্দল প্রার্থী। তাঁদের ফলের জন্যই মুখিয়ে ছিলেন তৃণমূল সমর্থকেরা। দু’জনেই পরস্পরকে টেক্কা দিচ্ছিলেন। শেষে ৭৭ ভোটে জয়ী হন তৃণমূল প্রার্থী।

এ দিনও পাখির চোখ ছিল ভাটপাড়া। দিনভর নিজেকে ঘরবন্দি রেখেছিলেন বিজেপির রাজ্য সহ সভাপতি তথা ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিংহ। গণনাকেন্দ্রের সামনের মাঠে নৈহাটির বিধায়ক পার্থ ভৌমিকের সঙ্গে তৃণমূল প্রার্থীদের বসে থাকা নিয়ে বিধিভঙ্গের অভিযোগও তোলেন তিনি। তিনি বলেন, ‘‘ছাপ্পা ভোট দিয়ে, বিরোধী এজেন্ট তুলে এই ফল। অভিযোগ জানিয়েছি রাজ্যপালকে।’’ ২০১৫ সালের নির্বাচনেও তো ছাপ্পার অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ওয়ার্ডভিত্তিক জয়ের ব্যবধানও দেড় থেকে দু’হাজার করে বেশি ছিল। তবুও ভাটপাড়ায় তিনটি ওয়ার্ড বিরোধীদের দখলে ছিল। অর্জুনের অভিযোগ, ‘‘যেটুকু ভোট মানুষ দিয়েছিলেন, সেটা গণনা হল কই? অধিকাংশ ইভিএমের সিম ভাঙা হয়েছে। তাই গণনা শুরু হতে না হতেই শেষ হয়ে গিয়েছে।’’

অভিযোগ প্রসঙ্গে পার্থবাবু বলেন, ‘‘পুরভোটে মানুষের রায় আমাদের পক্ষে। সৌজন্যে, লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্প। ছাপ্পা ভোট এ বারে অন্তত হয়নি। বিরোধীরা তো ভোট দিতেই যাননি। অর্জুনের আস্ফালন শোনার জন্য তাঁর এলাকায় কেউ রইলেন না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Titagarh Municipality TMC CPI
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE