Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

ঝুলন্ত বধূর দেহ, পাশে নিথর শিশু

চিৎ করে বিছানায় শোয়ানো কাঁথা চাপা চার বছরের শিশুকন্যার দেহ। পাশেই ওড়নার ফাঁসে ঝুলন্ত অবস্থায় তার মা। জানলার পর্দা সরিয়ে সাত সকালে এই দৃশ্য দেখে আঁতকে উঠেছিলেন প্রতিবেশী বধূ। তাঁর চিৎকারে লোক জড়ো হয়ে যায়। পুলিশ আসে।

এই বাড়িতেই থাকতেন শম্পা আর তাঁর মেয়ে। নিজস্ব চিত্র।

এই বাড়িতেই থাকতেন শম্পা আর তাঁর মেয়ে। নিজস্ব চিত্র।

দিলীপ নস্কর
মগরাহাট শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৬ ০১:৪১
Share: Save:

চিৎ করে বিছানায় শোয়ানো কাঁথা চাপা চার বছরের শিশুকন্যার দেহ। পাশেই ওড়নার ফাঁসে ঝুলন্ত অবস্থায় তার মা।

জানলার পর্দা সরিয়ে সাত সকালে এই দৃশ্য দেখে আঁতকে উঠেছিলেন প্রতিবেশী বধূ। তাঁর চিৎকারে লোক জড়ো হয়ে যায়। পুলিশ আসে। পরে পুলিশ গিয়ে ঘরের খিল খুলে দেহ দু’টি উদ্ধার করে।

বুধবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে মগরাহাটের কড়ামনুরাজ গ্রামে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃত বধূর নাম শম্পা হালদার (২৩)। তাঁর মেয়ে সুমিত ওরফে মিষ্টি। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর পাঁচেক আগে শালগড়িয়া গ্রামের শম্পার সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল মোজা তৈরির কারখানার শ্রমিক রাজেশ হালদারের। বিয়ের কিছু দিন পর থেকেই স্বামী- স্ত্রীর মধ্যে অশান্তি শুরু হয়।

কী নিয়ে হতো অশান্তি?

প্রতিবেশীদের থেকে পুলিশ জানতে পেরেছে, কেনাকাটার শখ ছিল শম্পার। সে শখ যে খুব আকাশছোঁয়া, তা-ও নয়। কখনও শাড়ি-জামা, কখনও বাসনকোসন। কিন্তু সামান্য রোজগারে স্ত্রীর সেই সব শখ মেটানোর সামর্থ্য ছিল না স্বামীর। কিন্তু তাই নিয়েই বনিবনার অভাব হচ্ছিল। পাড়ায় কোনও শাড়ি ব্যবসায়ী বা বাসনকোসনওয়ালা এলে শম্পাকে ঠেকিয়ে রাখা দায় হতো। টাকা না থাকলে বহুবার ধার করেও কেনাকাটা করেছেন তিনি। কিন্তু এই করতে করতে পরিবারের আর্থিক অবস্থা ধসে পড়ছিল। আর সঙ্গে বাড়ছিল অশান্তি।

এ দিন দুপুরে মৃতার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, প্রতিবেশীদের ভিড়। শম্পার বৃদ্ধ শ্বশুর সুধীরবাবু ঘরের বারান্দায় আনমনা হয়ে বসেছিলেন। বললেন, ‘‘নাতনিটা বড্ড আদরের ছিল। ওকেও যে কেন মারল, কে জানে।’’ তিনি জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ মিষ্টির কান্না শুনেছিলেন। কিন্তু এমন তো কত দিনই হয়, কাজেই গা করেননি।

শম্পাদের সকালে দেরিতে ওঠা অভ্যাস। বুধবার সকালে মগরাহাট বাজারে যাওয়ার কথা ছিল প্রতিবেশী বধূ টুম্পা হালদারের সঙ্গে। তিনি সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ এসে ডাকাডাকির পরে কোনও সাড়াশব্দ না পেয়ে জানালের পর্দা সরিয়ে ওই দৃশ্য দেখেন। সুধীরবাবুর এক বৌমা বৃহস্পতি জানালেন, রবিবার শম্পার বাবা-মা জামাইষষ্ঠীর নিমন্ত্রণ করতে এসেছিলেন। সে দিন রাজেশ তাঁর শ্বশুর-শাশুড়িকে সংসারের অশান্তির কথা জানিয়েছিলেন। বলেছিলেন, স্ত্রীর চাহিদা মেটাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে তাঁকে। এ-ও প্রস্তাব দিয়েছিলেন, সে রকম বুঝলে স্ত্রী যেন বাপের বাড়িতে গিয়ে থাকেন। সংসার খরচ রাজেশই বহন করবেন।

শম্পার মা মেয়েকে সামান্য বকাবকি করে চলে গিয়েছিলেন সে দিন। সোমবার সকালে কলকাতায় কাজে বেরিয়ে যান রাজেশ। তিনি বলেন, ‘‘ওর টাকার চাহিদা দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় আমি আর পেরে উঠছিলাম না। তা নিয়ে অশান্তিও হতো। কিন্তু মেয়েকে আদরের কোনও ত্রুটি রাখিনি। তাকেও কেন এ সবের মধ্যে টেনে এনে মারল, বুঝতে পারছি না। ওর তো কোনও দোষ ছিল না।’’

শম্পার কাকা স্বপন সর্দার অবশ্য বলেন, ‘‘আমাদের অনুমান দু’জনকে খুন করা হয়েছে। থানায় লিখিত অভিযোগ জানাব।’’’

পুলিশ জানিয়েছে শম্পার দেহ ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া গেলেও শিশুটির কী ভাবে মৃত্যু হয়েছে, তা বোঝা যাচ্ছে না। আপাতত অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Hanging body Infant Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE