Advertisement
E-Paper

ঘর ছেড়ে স্বপ্ন সফল সাইনুরের

আশ্রয় মেলে বর্ধমানে অমিতাদেরই এক আত্মীয়ের বাড়িতে। আর তার পরে আসানসোলের এক মহিলা হোমে ঠাঁই পান তিনি। সেই থেকে এটাই তাঁর স্থায়ী ঠিকানা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৮ ০১:৫১
হোমে পড়াচ্ছেন সাইনুর তরফদার। নিজস্ব চিত্র

হোমে পড়াচ্ছেন সাইনুর তরফদার। নিজস্ব চিত্র

লড়াইটা মোটেই সহজ ছিল না। ঘরের চাপ তো ছিলই। সঙ্গে ছিল সমাজের চোখরাঙানিও। কিন্তু কোনও কিছুই দমাতে পারেননি সাইনুর তরফদারকে। নিজের উচ্চশিক্ষার স্বপ্নকে সফল করতে ঘর ছাড়তেও দ্বিধা করেননি তিনি। আর আজ নিজের স্বপ্নপূরণের পরে তাঁর লক্ষ্য, সমাজে আরও যারা তাঁর মতো এমন পরিস্থিতির শিকার হচ্ছেন, তাদের পাশে দাঁড়ানো।

কেমন ছিল সেই লড়াই? বছর সাতেক আগের কথা। উত্তর ২৪ পরগনার হিঙ্গলগঞ্জের বাসিন্দা সাইনুর তখন বিএ প্রথম বর্ষের ছাত্রী। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে ভাল নম্বর নিয়ে পাশ করা সাইনুরের লক্ষ্য স্নাতকোত্তরের পরে ইংরেজি সাহিত্যে গবেষণা করা। কিন্তু কলেজে পড়তে পড়তেই মা তাঁর বিয়ে ঠিক করেন। দুই দাদার অভাবের সংসারে সাইনুরের পড়ার খরচ জোগানো মুশকিল হয়ে উঠছিল। পড়াশোনা চালিয়ে যেতে ঘর ছা়ড়ার সিদ্ধান্ত নেন সাইনুর। কিন্তু বাড়ি ছেড়ে থাকবেন কোথায়? সব শুনে সাহায্যে এগিয়ে আসেন কলেজের বন্ধু অমিতা মুখোপাধ্যায়। সাইনুর জানান, কলেজে যাওয়ার নাম করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে সে দিন প্রথমে তিনি অমিতার বাড়িতে ওঠেন। পরে আশ্রয় মেলে বর্ধমানে অমিতাদেরই এক আত্মীয়ের বাড়িতে। আর তার পরে আসানসোলের এক মহিলা হোমে ঠাঁই পান তিনি। সেই থেকে এটাই তাঁর স্থায়ী ঠিকানা।

আসানসোলের ওই হোমের কর্ণধার সাহানা মণ্ডলের কথাতেও উঠে আসছিল সাইনুরের লড়াইয়ের কাহিনি। তিনি বলেন,‘‘ওঁর মুখ থেকে সব শোনার পরে মনে হয়েছিল এই লড়াইতে ওঁর পাশে থাকা উচিত। আগামী দিনে ওঁর লড়াই এ রকম আরও অনেক মেয়েকে সাহস জোগাবে।’’ সাহানা জানান, আসানসোলে আসার পরে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে পাশ করার পরে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরাজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর হন। তার পরে পুরুলিয়ার একটি কলেজ থেকে বিএড-ও পাশ করেছেন। বর্তমানে স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় বসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। সেই সঙ্গে চেষ্টা চালাচ্ছেন ইংরেজি সাহিত্যে গবেষণা করার।

আর বাড়ির লোকজন? সাইনুর জানান, স্নাতক পাশ করার পরে নিজেই বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। মা-দাদারা তাঁকে বাড়ি নিয়ে যেতে চাইলেও নিজের পায়ে না দাঁড়িয়ে বাড়ি ফিরবেন না বলে পণ করেছেন তিনি। পড়াশোনা ও টুকিটাকি খরচ জোগাতে তাঁকে জেলার চাইল্ডলাইনে একটি অস্থায়ী কাজও জুটিয়ে দিয়েছেন সাহানা মণ্ডল। সাইনুরের কথায়, ‘‘এই কাজের সঙ্গে হোমে ঠাঁই পাওয়া ছোট মেয়েদের পড়ানোর দায়িত্বও নিয়েছি। বেশ ভালই আছি।’’ হোমে গিয়েও সেই ছবি দেখা গেল। নিজের লড়াই থেমেছে। কিন্তু এখন লড়াই, মাঝপথে পড়া বন্ধ করে মেয়েদের বিয়ে দেওয়া থেকে অভিভাবকদের আটকানো। তেমন হলে তাকে উদ্ধার করে নিজের আশ্রয়ে রেখে পড়াশোনা করানো।

Women Women's Day Women's Day Special
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy