Advertisement
০৩ মে ২০২৪
Election Violence Victim

খুনের বদলা খুন কখনও নয়, বলছেন ভাঙড়ের স্বামীহারা স্ত্রী

মনোনয়ন-পর্বে মৃতদের পরিবারের এক জনকে পুলিশের হোমগার্ডের চাকরি ও ২ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয় সরকারের পক্ষ থেকে।

সদ্যোজাত সন্তানকে কোলে নিয়ে নিহত আইএসএফ কর্মী হাসান আলি মোল্লার স্ত্রী।

সদ্যোজাত সন্তানকে কোলে নিয়ে নিহত আইএসএফ কর্মী হাসান আলি মোল্লার স্ত্রী। — নিজস্ব চিত্র।

শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০২৩ ০৮:৩৪
Share: Save:

আর যেন কোনও মায়ের কোল খালি না হয়, কোনও সন্তান যেন পিতৃহারা না হয়— বলছেন ভাঙড়ের নিহতদের স্বজনেরা। ভোট নিয়ে রাজনৈতিক সন্ত্রাস, হিংসা বন্ধ হোক চাইছেন।

মনোনয়ন-পর্ব থেকে গণনার দিন পর্যন্ত কখনও আইএসএফের সঙ্গে তৃণমূলের,কখনও পুলিশের সঙ্গে আইএসএফের সংঘর্ষ হয়। মারা গিয়েছেন সাত জন। মনোনয়নের শেষ দিন মৃত্যু হয় তিন জনের। এঁদের মধ্যে দু’জন তৃণমূল ও এক জন আইএসএফ কর্মী। ভোটের আগের রাতে মারধরে জখম মোসলেম শেখ পরে মারা যান হাসপাতালে। গণনার রাতে পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয় তিন জনের।

মনোনয়ন-পর্বে মৃতদের পরিবারের এক জনকে পুলিশের হোমগার্ডের চাকরি ও ২ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয় সরকারের পক্ষ থেকে। মৃত আইএসএফ কর্মী মহিউদ্দিন মোল্লার স্ত্রী নুরবানু খাতুনকে ইতিমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে ২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ও হোমগার্ডের চাকরি দেওয়া হয়েছে। নুরবানু বলেন, ‘‘অভাবের সংসারে সরকারের দান গ্রহণ করতে হয়েছে। তবে আগে তো কেউ কখনও কিছু দেয়নি। স্বামী বেঁচে থাকলেও ওরা কিছু দিত না। ওদের দান গ্রহণও করতাম না।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমি চাই না, আমার মতো কেউ অকালে স্বামীহারা হোক। সন্তানেরা পিতৃহারা হোক। ভোট নিয়ে রাজনৈতিক হিংসা, সন্ত্রাস বন্ধ হোক।’’

বামনঘাটা অঞ্চলের মৃত তৃণমূল কর্মী রাজু নস্করের স্ত্রী রুমা বলেন, ‘‘আমার স্বামী দীর্ঘ দিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। আমি লোকের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালাতাম। স্বামীর মৃত্যুর পরে সরকারের পক্ষ থেকে ২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়েছে। হোমগার্ডের চাকরির জন্য কাগজপত্র জমা নিয়েছে। যদিও এখনও চাকরির কাগজ হাতে পাইনি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমি চাই না, পঞ্চায়েত বোর্ড গঠন নিয়ে আবার নতুন করে অশান্তি হোক। শান্তিপূর্ণ ভাবে যেন সব কিছু মেটে।’’ তাঁর স্বামীকে পিটিয়ে, ইট দিয়ে থেঁতলে খুন করা হয়েছিল। রুমার কথায়, ‘‘এই হিংস্রতা মেনে নেওয়া যায় না। আমার মতো কোনও স্ত্রী যেন স্বামীহারা না হয়। কোনও মা যেন সন্তানহারা না হয়। হিংসা বন্ধ হোক। স্বামীর খুনিরা শাস্তি পাক, তবে খুনের বদলা খুন চাই না।’’

গণনার রাতে পুলিশের গুলিতে মারা যান আইএসএফ কর্মী হাসান আলি মোল্লা। স্বামী মারা যাওয়ার সময়ে তাঁর স্ত্রী তানজিরা ন’মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। এখন সন্তান এসেছে কোলে। দরমার বেড়া দেওয়া, প্লাস্টিকের ছাউনি দেওয়া একচালা ঘর দেখিয়ে বলেন, ‘‘ওরা (তৃণমূল) ঘর দেয়নি। পাঁচ বছর আগে তালিকায় নাম এলেও ঘরের টাকা হাতে পাইনি। ব্যাগের কাজ করে কোনও রকমের সংসার চালাতেন স্বামী। আমপানে চাল উড়ে যায়। ত্রিপল পর্যন্ত দেয়নি। সেই রাগে, দুঃখে এ বার পার্টিতে (আইএসএফ) গেলেন উনি। সেটাই কাল হল!’’ তরুণীর কথায়, ‘‘এলাকায় শান্তি ফিরে আসুক। খুনোখুনির রাজনীতি এ বার বন্ধ হোক।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bhangar Post Poll Violence
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE