Advertisement
E-Paper

বুঝেশুনে পা ফেলো, বার্তা পুলিশের

গুজরাতে ওই তরুণীটি নারীপাচার চক্রের খপ্পরে পড়েন। বনগাঁ থানার পুলিশ অবশ্য শেষ পর্যন্ত পাচারকারীদের খপ্পর থেকে তাঁকে উদ্ধার করে। গ্রেফতার করা হয় ওই চক্রের পান্ডাকেও। উদ্ধার হওয়ার পরে ছাত্রীটি তদন্তকারীদের জানান, পাচারকারীরা তাঁকে বিমানে করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় দেহ ব্যবসা করতে পাঠাত।

সীমান্ত মৈত্র

শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৮ ০০:০৫

মোবাইলে মিসড্ কলের সূত্র ধরে মাস কয়েক আগে বনগাঁর এক কলেজছাত্রীর সঙ্গে মুর্শিদাবাদের এক যুবকের পরিচয় হয়। ক্রমে দু’জনের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে। বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ছেলেটি ছাত্রীটিকে নিয়ে গুজরাত চলে যায়।

না, এটা কোনও প্রেমের কাহিনি নয়। বরং আসল গল্পটা এখান থেকেই শুরু।

গুজরাতে ওই তরুণীটি নারীপাচার চক্রের খপ্পরে পড়েন। বনগাঁ থানার পুলিশ অবশ্য শেষ পর্যন্ত পাচারকারীদের খপ্পর থেকে তাঁকে উদ্ধার করে। গ্রেফতার করা হয় ওই চক্রের পান্ডাকেও। উদ্ধার হওয়ার পরে ছাত্রীটি তদন্তকারীদের জানান, পাচারকারীরা তাঁকে বিমানে করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় দেহ ব্যবসা করতে পাঠাত।

এই ভাবে প্রেমের ফাঁদে ফাঁসিয়ে মেয়েদের পাচার করার ঘটনা উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় প্রায়ই ঘটছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। তা ছাড়া আরও নানা কারণে মানুষ পাচারের, বিশেষ করে মহিলা পাচারের ঘটনা ঘটছে। পাচার বন্ধ করতে পদক্ষেপও করেছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পুলিশ।

আজ, সোমবার বিশ্ব মানব পাচার বিরোধী দিবস। এ দিন বারাসতে জেলাপুলিশ, স্কুলছাত্রী ও শিক্ষিকাদের নিয়ে এই সংক্রান্ত সচেতনতা কর্মসূচি পালন করা হবে। সেখানে আয়োজিত এক কর্মশালায় প্রায় ৫০০ ছাত্রী ও শিক্ষিকারা থাকবেন। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হেড কোয়ার্টার) রূপান্তর সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে অচেনা যুবকের সঙ্গে অল্পবয়সী মেয়েরা প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছে। এর জেরে অনেকেই পরবর্তী সময়ে পাচার হয়ে যাচ্ছে। কর্মশালায় ছাত্রীদের তাই সোশ্যাল মিডিয়ায় গড়ে ওঠা সম্পর্কের বিষয়ে বোঝানো হবে।’’

পুলিশ জানিয়েছে, অভাবী পরিবারের মহিলাদের ভাল কাজে পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েও ভিন রাজ্যে পাচার করে দেওয়া হয়। সম্প্রতি গোপালনগর থানার পুলিশ বিহার থেকে দুই বিবাহিত মহিলাকে উদ্ধার করেছে। কাজ দেওয়ার নাম করে বিহারে নিয়ে গিয়ে তাঁদের পাচার করে দেওয়া হয়েছিল। তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, ওই মহিলাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অশ্লীল নাচ নাচতে বাধ্য করা হত।

কিছু দিন আগে অশোকনগর থানার পুলিশ দিল্লি থেকে এক ছাত্রীকে উদ্ধার করে। কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ওই তরুণীর স্থানীয় যুবকের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। সেই সূত্রেই তিনি বাড়ি থেকে পালিয়ে দিল্লিতে তাঁর প্রেমিকের কাছে চলে গিয়েছিলেন।

কেন তরুণী ও কিশোরীদের মধ্যে প্রেম করে বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে?

পুলিশ কর্তারা জানিয়েছেন, অল্পবয়সী মেয়েরা সহজেই প্রলোভনে পা দিয়ে ফেলে। স্কুলে যাওয়ার পথে অচেনা ছেলের খপ্পরে পড়ার ঘটনাও ঘটে। আবার ফোন থেকেও অনেক সময় প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। ফেসবুকের মাধ্যমে অচেনা যুবকের সঙ্গে পরিচয় ঘটে। এ সব থেকেই পরবর্তীতে বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়া বা পালিয়ে গিয়ে পাচার হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে।

পুলিশের তরফে স্কুলগুলিতে পড়ুয়াদের সচেতন করতে নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। স্কুলের সামনে ব্যানার-পোস্টার লাগানো হয়েছে। যে সব ব্যানার-পোস্টারে বলা হয়েছে, স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে ছাত্রীরা যেন অচেনা যুবকের সঙ্গে পরিচয় না করে। কেউ ফোন নম্বর চাইলে যেন তারা তা না দেয়। ফেসবুকেও যেন অচেনা কারও সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি না করে। পুলিশের দাবি, শুধু পুলিশি সচেতনতা দিয়ে এই সমস্যা মিটবে না। পরিবারের সদস্যদেরও এগিয়ে আসতে হবে। তাঁরা যেন অল্পবয়সী মেয়েদের হাতে মোবাইল তুলে না দেন। মেয়েরা মোবাইলে বেশি সময় ব্যয় করছে কিনা, সে দিকেও অভিভাবকদের নজর রাখতে হবে।

হাবড়ার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা বলেন, ‘‘আমরা স্কুলে ছাত্রীদের সচেতন করি। স্কুলে মোবাইল নিয়ে আসাও নিষেধ। কিন্তু স্কুলে বাইরে, আসা-যাওয়ার পথে পড়ুয়াদের উপরে নজর রাখা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। অনেকেই বাড়ির লোকের অজান্তে স্কুলে মোবাইল নিয়ে আসে। জানতে পারলে আমরা তা বাজেয়াপ্ত করি।’’

Trafficking Police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy