Advertisement
E-Paper

জোর যার, ভেড়ি তার

শীর্ষ নেতৃত্বের দফায় দফায় চোখ রাঙানি উপেক্ষা করেও বাসন্তী আছে বাসন্তীতেই। মারপিট, বোমাবাজি গুলির লড়াই অব্যাহত। এক স্কুল ছাত্র-সহ দু’জনের গুলিতে মৃত্যুর ঘটনা কী রক্তারক্তির ইতিহাসে দাঁড়ি টানতে পারবে? ভেড়ির দখলকে কেন্দ্র করে হিংসার চোরাস্রোতের উপরে কি নিয়ন্ত্রণ আনতে পারবেন তৃণমূল নেতৃত্ব? খোঁজ নিল আনন্দবাজার। আজ, শেষ কিস্তি।মূলত এই ভে়ড়ি এলাকার দখলই বাসন্তীতে যত অশান্তির গোড়ায়। এক সময়ে ভেড়ির দখলকে কেন্দ্র করে রক্তপাতের ইতিহাস আছে উত্তর ২৪ পরগনার শাসনে।

শুভাশিস ঘটক

শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:২৮
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

যে দিকে দু’চোখ যায়, বিঘের পর বিঘে মেছো ভেড়ি। মাছ ব্যবসার অনেকটাই চলে কালো টাকায়। খাতাপত্রেও লাভের অঙ্ক চোখ কপালে তোলার মতো।

মূলত এই ভেড়ি এলাকার দখলই বাসন্তীতে যত অশান্তির গোড়ায়। এক সময়ে ভেড়ির দখলকে কেন্দ্র করে রক্তপাতের ইতিহাস আছে উত্তর ২৪ পরগনার শাসনে। বাসন্তীর চড়াবিদ্যা এবং লাগোয়া এলাকাগুলিতেও শাসক দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের পিছনে ভেড়ি ব্যবসার কাঁচা টাকার লেনদেনই মূল কারণ, এমনটাই মত দলের একাংশের। পুলিশ কর্তারাও মনে করেন সে কথা।

কুম়ড়োখালি এলাকার এক ভেড়ি মালিকের কথায়, ‘‘কলকাতায় যেমন প্রোমোটার-রাজ, এখানে তেমনই ভেড়িরাজ। ভেড়ির দখল রাখতে পারলে বাকি সব পকেটে রাখা যায়।’’ ওই ব্যবসায়ী জানান, মাছ আর কাঁকড়া— বিদেশের বাজারে এই দু’য়েরই দাম প্রচুর। চাহিদাও ভাল। সে সবেরই চাষ হয় ভেড়িতে। এ ছাড়া আছে ভেটকি। মাছ চাষে দু’শো-তিনশো শতাংশ মুনাফা, জানালেন ব্যবসায়ীরা।

এ ছাড়া আছে পঞ্চায়েতের দখলদারি নিয়ে লড়াই। সরকারি প্রকল্পগুলিতে এখন লক্ষ লক্ষ টাকা ঢোকে পঞ্চায়েতে। সেই টাকার ‘কাটমানি’ খাওয়ার জন্যও মুখিয়ে থাকে এক শ্রেণির নেতা-কর্মী— জানাচ্ছেন তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশও।

সরকারি খাস জমিও কম নেই বাসন্তীতে। সেখানে চাষাবাদ থেকেও মোটা টাকা আয়ের পথ আছে।

আর এ সবের মিলিত ফলেই খোদ মুখ্যমন্ত্রীর চোখ রাঙানিকে উপেক্ষা করে দলের নিচুতলার মধ্যে নিরন্তর লড়াই চলে বাসন্তীর গ্রামে।

তৃণমূলের এক নেতা জানালেন, বাম আমলে চড়াবিদ্যায় যুযুধান ছিল আরএসপি আর সিপিএম। ২০০৮ সালে পঞ্চায়েত ভোটে চড়াবিদ্যা-লাগোয়া আমঝড়ায় সিপিএমের একজন এবং আরএসপি-র দু’জন গুলিতে খুন হন। কয়েক দিন পরেই তৎকালীন মন্ত্রী তথা আরএসপি নেতা সুভাষ নস্করের চড়াবিদ্যার বাড়িতে হামলা চালায় দুষ্কৃতীরা। বোমায় মারা যান সুভাষবাবুর এক আত্মীয়া।

রাজ্যে পালা বদলের পরে ২০১৩ সালে চড়াবিদ্যা পঞ্চায়েতের দখল নেয় তৃণমূল। আরএসপি এবং সিপিএমের সমর্থকদের একাংশ দল বদলে নাম লেখায় ঘাসফুল শিবিরে। দলের মূল সংগঠন এখানে পরিচিত ‘মাদার’ নামে। আর আছে তার বিরুদ্ধে শিবিরের ‘যুব’ সংগঠন। এই দু’পক্ষের মধ্যেই লড়াই। তৃণমূলের দুই বিধায়কেরও তাতে মদত আছে বলে জানেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। খবর আছে পুলিশের কাছেও। কিন্তু কাঁচা টাকার দখলদারি নিয়ে নিচুতলার টানাপড়েনে লাগাম টানতে ব্যর্থ সব পক্ষ।কিন্তু এত কাণ্ডের মূলে যে ভেড়ির ব্যবসা, তার কাগজপত্র ঠিকঠাক থাকলে কী যখন তখন দখল নেওয়া যায়? ব্যবসায়ীদের একাংশ জানাচ্ছেন, ভেড়ির ব্যবসার বেশির ভাগটাই চলে মুখে মুখে। লেখাপড়ার ধার ধারে না কেউ। আর তাই, ‘জোর যার, ভেড়ি তার।’

TMC Basanti Inner conflict বাসন্তী তৃণমূল
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy