E-Paper

শিক্ষায় দুর্নীতিতে চিন্তিত ফাজিলে প্রথম ইয়ামিন

বাসন্তীর কলাহাজরা গ্রামের বাসিন্দা বাকিবিল্লাহ গায়েন ফাজিলে দ্বিতীয় হয়েছে। তার প্রাপ্ত নম্বর ৫৫৯।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০২৫ ০৮:৫৪
ফাজিল পরীক্ষায় রাজ্যের মধ্যে প্রথম বাসন্তীর ইয়ামিন শেখ।

ফাজিল পরীক্ষায় রাজ্যের মধ্যে প্রথম বাসন্তীর ইয়ামিন শেখ। নিজস্ব চিত্র।

মাদ্রাসা বোর্ডের ফাজিল পরীক্ষায় প্রথম হল বাসন্তীর ইয়ামিন শেখ। তার প্রাপ্ত নম্বর ৫৬২। বাসন্তীর খেরিয়া সিদ্দিকীয়া সিনিয়র মাদ্রাসার ছাত্র সে। বাসন্তীর কাঁঠালবেড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা ইয়ামিনের বাবা ইব্রাহিম শেখ ক্যানিং-গদখালি রুটে ছোট যাত্রীবাহী গাড়ির চালক। মা নুন্নেসা গৃহবধূ। তাঁদের তিন সন্তান। ইয়ামিন বড়। অ্যাসবেস্টসের ছাউনি দেওয়া মাটির ঘরে আর্থিক অনটনের মধ্যেই পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে সকলে। ইয়ামিন জানায়, মাদ্রাসার শিক্ষকরাই ছিলেন তার ভরসা, কোনও গৃহশিক্ষক ছিলেন না। এর আগে আলিমেও সপ্তম হয়েছিল ইয়ামিন। ভবিষ্যতে অধ্যাপনা করার ইচ্ছে ইয়ামিনের।

রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে চিন্তিত ইয়ামিন বলে, “শিক্ষায় যদি এই ধরনের দুর্নীতি, মিথ্যা ঢুকে যায়। এক জনের ভুলে যদি সমস্ত শিক্ষকের চাকরি যায়, তা হলে রাজ্যের সমস্ত শিক্ষা ব্যবস্থাই ভেঙে পড়বে। দ্রুত সমস্যার সমাধান হোক, সেই আশা করছি।” নিজের পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে সে বলে, “ভাল ফল হবে জানতাম, কিন্তু প্রথম হবো, সে আশা করিনি। এ সবই সম্ভব হয়েছে আমার পরিবারের গুরুজন ও মাদ্রাসার শিক্ষকদের জন্য।”

বাবা ইব্রাহিম বলেন, “ছেলে ছোট থেকেই পড়াশোনায় ভাল। সামান্য গাড়ি চালিয়ে যা পাই তা দিয়ে ওদের পড়াশোনার খরচ চালাই। ভাঙা বাড়ি সারাই পর্যন্ত করতে পারিনি।” মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মইনুল হক বলেন, “পড়াশোনা নিয়ে খুবই সিরিয়াস ইয়ামিন। আমরা চেষ্টা করেছি, যাতে ওর পড়াশোনায় কোনও সমস্যা না হয়।”

বাসন্তীর কলাহাজরা গ্রামের বাসিন্দা বাকিবিল্লাহ গায়েন ফাজিলে দ্বিতীয় হয়েছে। তার প্রাপ্ত নম্বর ৫৫৯। সে হুগলির ইসলামনগর নাসরুল উলুম সিদ্দিকিয়া সিনিয়র মাদ্রাসার ছাত্র। বাকিবিল্লাহ চায় ভবিষ্যতে প্রফেসর হতে।

ভাঙড়ের কালেরাইট মোহাম্মাদিয়া দারুস সুন্নত সিনিয়র মাদ্রাসার ছাত্র রায়হান হোসেনও ৫৫৯ নম্বর পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছে। করোনায় বাবাকে হারানোর পরে সংসারের হাল ধরতে হয়েছিল রায়হানকে। এক দিকে ছোট বোন, মা আর সংসার সামলানো, অন্য দিকে বাবার রেখে যাওয়া আইসক্রিম কারখানার দায়িত্ব। সব সামলেই এই ফল করেছে তবু সব কিছু ছাপিয়ে রাজ্য মাদ্রাসা বোর্ডের ফাজিল পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থান পেল ভাঙড়ের ছয়ানি গ্রামের কিশোর। তার কথায়, “শিক্ষক হতে চাই। আর্থিক অনটনের কারণে অনেক ছেলেমেয়ের পড়াশোনা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। আমি তাদের পাশে দাঁড়াতে চাই।” রায়হানের মা রাজিয়া বিবির গলায় আশঙ্কার সুর, “ছোটবেলাতেই বাবাকে হারিয়ে সব দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে। এত কষ্ট করে পড়াশোনা করে আজ এই সাফল্য। কিন্তু ওর স্বপ্ন পূরণ হবে কিনা, জানি না।”

বাসন্তীর খেরিয়া সিদ্দিকীয়া সিনিয়র মাদ্রাসার আরও এক ছাত্র মহম্মদ আল হাবিব তরফদার রাজ্যের মধ্যে চতুর্থ স্থান অধিকার করেছে। তার প্রাপ্ত নম্বর ৫৫৭। গোসাবার পাঠানখালি গ্রামের বাসিন্দা আল হাবিবেরও লক্ষ্য প্রফেসর হওয়া। ফাজিল পরীক্ষায় যুগ্ম চতুর্থ হয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার উস্তির সপ্তগ্রাম দারুল উলুম সিনিয়র মাদ্রাসার ছাত্রী মোসাম্মাত আমাতুল্লাহ তাসনীম। তার প্রাপ্ত নম্বর ৫৫৭। আগামী দিনে কলা বিভাগে পড়াশোনা করে অধ্যাপক হতে চায় সে।

ভাঙড়ের কালেরাইট মোহাম্মাদিয়া দারুস সুন্নত সিনিয়র মাদ্রাসার বুরহানউদ্দিন মোল্লা সপ্তম স্থান পেয়েছে (৫৪৫ নম্বর) এবং কামরুজ্জামান মিস্ত্রি দশম (৫৪১ নম্বর) হয়েছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

madrasah

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy