Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

কালীপুজোর রাতে শব্দবাজির তাণ্ডব নেই হাবরায়

ইঙ্গিতটা মিলেছিল লক্ষ্মীপুজোর রাতেই। সেই রাতে হাবরা শহরের মানুষ প্রত্যক্ষ করেছিলেন পুলিশ-প্রশাসনের সদিচ্ছা থাকলে শব্দবাজির দৌরাত্ম্য বন্ধ করা সম্ভব। লক্ষ্মীপুজোর রাতে শহর ও সংলগ্ন এলাকায় শব্দবাজি ফাটলেও তা ছিল অন্য বছরগুলোর তুলনায় অনেকটাই কম। শহরের মানুষ নির্ভয়ে গভীর রাত পর্যন্ত রাস্তায় চলাচল করেছেন। বারুদের গন্ধহীন ছিল পথ-ঘাট। লক্ষ্মীপুজোর রাতে শব্দবাজির দাপট এই শহরকে কুখ্যাতি দিয়েছিল দীর্ঘ বছর ধরে। বাসিন্দারা জানিয়েছেন, মূলত লক্ষ্মীপুজো ও কালীপুজোর রাতে এখানে শব্দবাজির দাপট চলে রাতভর।

নিজস্ব সংবাদদাতা
হাবরা শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৪ ০০:১৩
Share: Save:

ইঙ্গিতটা মিলেছিল লক্ষ্মীপুজোর রাতেই। সেই রাতে হাবরা শহরের মানুষ প্রত্যক্ষ করেছিলেন পুলিশ-প্রশাসনের সদিচ্ছা থাকলে শব্দবাজির দৌরাত্ম্য বন্ধ করা সম্ভব। লক্ষ্মীপুজোর রাতে শহর ও সংলগ্ন এলাকায় শব্দবাজি ফাটলেও তা ছিল অন্য বছরগুলোর তুলনায় অনেকটাই কম। শহরের মানুষ নির্ভয়ে গভীর রাত পর্যন্ত রাস্তায় চলাচল করেছেন। বারুদের গন্ধহীন ছিল পথ-ঘাট। লক্ষ্মীপুজোর রাতে শব্দবাজির দাপট এই শহরকে কুখ্যাতি দিয়েছিল দীর্ঘ বছর ধরে। বাসিন্দারা জানিয়েছেন, মূলত লক্ষ্মীপুজো ও কালীপুজোর রাতে এখানে শব্দবাজির দাপট চলে রাতভর। লক্ষ্মীপুজোটা ভালয় ভালয় কাটলেও আশঙ্কা ছিল কালীপুজো নিয়ে। কিন্তু বাসিন্দাদের অভিজ্ঞতা, শব্দবাজি ফেটেছে তুলনায় কম। পুলিশকে ধন্যবাদ দিয়ে সাধারণ মানুষের বক্তব্য, “পুলিশ যে ইচ্ছে করলে অনেক কিছুই করতে পারে, দু’টি পুজোর রাতে তা প্রমাণিত হল।”

কী ভাবে সম্ভব হল শব্দবাজির দাপট কমানো?

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অন্যান্য বছরের অভিজ্ঞতা মনে রেখে এ বার লক্ষ্মীপুজোর আগে থেকেই নিষিদ্ধ শব্দবাজির বিরদ্ধে পদক্ষেপ শুরু করা হয়েছিল। ফলও মেলে হাতে-নাতে। প্রচুর শব্দবাজি আটক হয়। বেআইনি ভাবে শব্দবাজি বিক্রির অভিযোগে পুলিশ কয়েক জনকে গ্রেফতারও করে। লক্ষ্মীপুজোর দিন কয়েক আগে দক্ষিণ হাবরার একটি বাড়ি থেকে প্রচুর শব্দবাজি আটক করে পুলিশ থানায় নিয়ে আসে। ওই বাজি নামানোর সময় বিস্ফোরণে সাত জন পুলিশ কর্মী ও দু’জন সাধারণ মানুষ জখম হন। পরে পুলিশ ওই বাজি বিক্রেতাকে গ্রেফতারও করে।

সাধারণ মানুষের মধ্যে ওই ঘটনাটি প্রভাব ফেলেছিল। স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ঘটনার পরে হাবরাতে এসে সাধারণ মানুষের কাছে আবেদন রাখেন, শব্দবাজি না ফাটানোর জন্য। ব্যবসায়ীদের কাছেও তিনি আবেদন করেছিলেন, শব্দবাজি বিক্রি না করতে। সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের সচেতন করতে পুরসভা ও পুলিশের পক্ষ থেকে প্রচার কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি চলছিল ব্যাপক ধরপাকড়। অন্য বছরে পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকা থাকে উদাসীন, বলছিলেন এক ব্যবসায়ী। কালীপুজোর রাতে অনেকেই রাস্তায় বেরোতে সাহস পান না। এ বার ছবিটা অনেকটাই বদলেছে।

কালীপুজোর জন্যও পুলিশ-প্রশাসন পদক্ষেপ করেছে। হাবরা পুরসভার চেয়ারম্যান তৃণমূলের সুবীন ঘোষ বলেন, “খাদ্যমন্ত্রীর নির্দেশে স্থানীয় জিরাট রোডের পাশে একটি বাজি বিক্রির বাজার তৈরি করা হয়েছিল। শহরের মধ্যে একমাত্র ওই বাজারেই বাজি বিক্রি করা হয়েছিল। ফলে শব্দবাজির বিক্রির উপর নজরদারি চালানো গিয়েছে। তা ছাড়া, আমাদের প্রচারে মানুষও কিছুটা সচেতন হয়েছেন।” জ্যোতিপ্রিয়বাবুর কথায়, “সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের কাছে অনুরোধ করেছিলাম, শব্দবাজি বিক্রি ও না ফাটানোর জন্য। আমাদের আবেদনে সাড়া দেওয়ায় সকলের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।” অস্থায়ী যে বাজির বাজার করা হয়েছে, সেখানে স্থায়ী বাজির বাজার তৈরি করে দেওয়া হবে বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।

হাবরা থানা সূত্রে জানানো হয়েছে, জিরাট রোডের কাছে যে অস্থায়ী বাজি বিক্রির বাজার তৈরি করা হয়েছে কালীপুজো উপলক্ষে সেখানে পুলিশ পাহারা দিচ্ছে। কেউ যাতে শব্দবাজি বিক্রি করতে না পারে, সে জন্য নজর রাখা হচ্ছে। মাইকে প্রচারও করা হচ্ছে। অন্য কোথাও বাজি বিক্রি করা যাবে না বলে ঘোষণা করেছে পুলিশ। অন্যত্র বাজি বিক্রির খবর পেলেই পুলিশ সেখানে গিয়ে অনুরোধ করছে, নির্দিষ্ট বাজারটিতে গিয়ে বাজি বিক্রির জন্য। তা ছাড়া, শব্দবাজি ফাটানো ও বিক্রি বন্ধ করতে আলাদা মোবাইল টহল চলছে হাবরা শহর জুড়ে। তারই ফল মিলেছে কালীপুজোর রাতে।

কী বলছেন শহরবাসী?

জয়গাছির বাসিন্দা বৃদ্ধা প্রতিমা মণ্ডল বললেন, “শব্দবাজির তাণ্ডব ছাড়া কালীপুজোর রাত হাবরা শহরে শেষ কবে কাটিয়েছি মনে করতে পারছি না। অন্য বছরগুলিতে কালীপুজোর গভীর রাত পর্যন্ত শব্দবাজির আওয়াজ পাওয়া যায়। এ বার তেমন ছিল না।”

আক্রামপুরের গৃহবধূ পলি সমাদ্দার বলেন, “হাবরা বাজার এলাকায় পুলিশি টহল যতটা থাকে, আমাদের এলাকায় ততটা থাকে না বলে এখানে অন্য বছরে শব্দবাজির দৌরাত্ম্য ব্যাপক ভাবে দেখা যায়। এ বার অবশ্য শব্দবাজি তেমন ফাটেনি। এলাকায় শব্দবাজি বিক্রি বন্ধ করলেও কিছু মানুষ বাইরে থেকে গোপনে শব্দবাজি কিনে এনে তা ফাটান। পুলিশ এ সব কী বন্ধ করবে? মানুষকেই সচেতন হতে হবে।” হিজলপুকুরের বাসিন্দা, স্কুলের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় দাস বলেন, “পুলিশ ইচ্ছে করলে অনেক কিছুই পারে। এ বার লক্ষ্মীপুজো ও কালীপুজোর রাতে শব্দবাজির দাপট কমে যাওয়ায় তা বোঝা গেল। পুলিশকে এ জন্য ধন্যবাদ।” হাটথুবার বাসিন্দা চিকিত্‌সক শঙ্করপ্রসাদ সরকারের কথায়, “কালীপুজোয় শব্দবাজিহীন এমন নিশ্চিন্ত রাত আমরা ভাবতেই পারি না। তবে পুজো উদ্যোক্তরা প্রতিমা আনা ও বিসর্জনের সময় যে তারস্বরে বাজনা বাজান, তা-ও পুলিশকে বন্ধ করতে হবে। ওই শব্দেও হৃদরোগীদের সমস্যার আশঙ্কা থাকে। এক ওষুধ বিক্রিতার অভিজ্ঞতায়, “পুজোর মাইক না বাজলে বোঝাই সম্ভব ছিল না, বৃহস্পতিবার কালীপুজো ছিল হাবরায়। শব্দবাজির আওয়াজই পাওয়া যায়নি।”

জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, “দুর্গাপুজোর সময় থেকেই জেলার মধ্যে হাবরা, দত্তপুকুর-সহ যে সব জায়গায় শব্দবাজির প্রকোপের অভিযোগ আছে, সেখানে বিশেষ অভিযান চালানো হয়। প্রচুর শব্দবাজি আটক হয়। বাজি ফাটানো ও বিক্রির অভিযোগে গ্রেফতারও করা হয় কয়েক জনকে। দমকলের সাহায্য নিয়ে বহু বাজি নষ্ট করা হয়। তারই সুফল মিলেছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE