Advertisement
E-Paper

কলেজ ভোটের আগেই অশান্তি, বোমায় জখম পুলিশ

কলেজ ভোটে মনোনয়নপত্র তোলা ও জমা দেওয়ার দ্বিতীয় দিনে উত্তপ্ত উত্তর ২৪ পরগনার নানা এলাকা। মিনাখাঁর কলেজে তৃণমূল এবং এবিভিপির বিরুদ্ধে মারধর, বোমাবাজি, গুলি চালনার অভিযোগ উঠেছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে গেলে পুলিশকে লক্ষ্য করেও বোমা মারা হয়। বোমার স্প্লিন্টারে জখম হয়েছেন দুই পুলিশ কর্মী। পুলিশের তিনটি গাড়িতে ভাঙচুর চলে। পুলিশের একটি সার্ভিস রিভলভারও লুঠ করে নেওয়া হয়। সেটি অবশ্য পরে উদ্ধার করেছে পুলিশ। স্বরূপনগরের একটি কলেজে আবার তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সঙ্গে মারপিট বাধে এসএফআইয়ের।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:১৩
ভাঙচুর হওয়া পুলিশের গাড়ি।

ভাঙচুর হওয়া পুলিশের গাড়ি।

কলেজ ভোটে মনোনয়নপত্র তোলা ও জমা দেওয়ার দ্বিতীয় দিনে উত্তপ্ত উত্তর ২৪ পরগনার নানা এলাকা। মিনাখাঁর কলেজে তৃণমূল এবং এবিভিপির বিরুদ্ধে মারধর, বোমাবাজি, গুলি চালনার অভিযোগ উঠেছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে গেলে পুলিশকে লক্ষ্য করেও বোমা মারা হয়। বোমার স্প্লিন্টারে জখম হয়েছেন দুই পুলিশ কর্মী। পুলিশের তিনটি গাড়িতে ভাঙচুর চলে। পুলিশের একটি সার্ভিস রিভলভারও লুঠ করে নেওয়া হয়। সেটি অবশ্য পরে উদ্ধার করেছে পুলিশ। স্বরূপনগরের একটি কলেজে আবার তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সঙ্গে মারপিট বাধে এসএফআইয়ের।

আগামী ২৯ জানুয়ারি উত্তর ২৪ পরগনায় কলেজ ভোট। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, মিনাখাঁর বামনপুকুরের হুমায়ুন কবীর মহাবিদ্যালয়ের সামনে সকাল থেকেই জমায়েত শুরু করে টিএমসিপি। সেখানে তৃণমূলের স্থানীয় নেতাদেরও দেখা গিয়েছে। বাসন্তী রোডে তারা এবিভিপি-র লোকজনকে আটকে দেয় বলে অভিযোগ। মারধরও করা হয়। রাস্তায় বহু গাড়ি আটকে পড়ে।

প্রতিবাদে ওই রাস্তারই একটু দূরে জমায়েত শুরু করে এবিভিপি-র লোকজন। দু’দলের জমায়েতে থেকেই বোমা ছোড়া হয়। গুলিও চলে। সকাল ১০টার পর থেকেই চলছিল এই পরিস্থিতি। কিছু ক্ষণের মধ্যেই পুলিশ আসে। অভিযোগ, কালীতলার দিকে পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করেও বোমা ছোড়া হয়। জখম হন জুলু রহমান ও রঞ্জিত ঘোষ নামে দুই পুলিশ কর্মী। জুলুকে পরে ভর্তি করা হয়েছে মিনাখাঁ হাসপাতালে।

এ দিকে, পুলিশ কর্মীরা সে সময়ে সংখ্যায় খুব বেশি ছিলেন না। এক পুলিশ কর্মীকে টানাহেঁচড়া করে চার জন অপহরণের চেষ্টা করে বলেও অভিযোগ। বাকি পুলিশকর্মীরা লাঠি উঁচিয়ে তাদের প্রতিহত করেন। সাংবাদিকদের লক্ষ্য করেও বোমা ছোড়া হয়। পুলিশের তিনটি গাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর চলে। পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে চলে যাচ্ছে বুঝতে পেরে পুলিশ কর্মীরা তখনকার মতো এলাকা ছাড়েন। বেলা ৩টে নাগাদ আরও পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। বাসন্তী রোডে দীর্ঘ ক্ষণ যান চলাচলও বন্ধ ছিল সকাল থেকে। বিকেলের পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। কলেজের অধ্যক্ষ সুভাষ বিশ্বাস জানান, গোলমাল যা হয়েছে, তা কলেজ চত্বরের বাইরে। কিছু মনোনয়নপত্রও এ দিন জমাও পড়েছে।

এ বিষয়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতা মসিয়ুর রহমান বলেন, “বিজেপির লোকজন এসে ভাঙচুর শুরু করে। বোমা-গুলি ছোড়ে। পুলিশ এসে বাধা দিতে গেলে পুলিশের উপরেও আক্রমণ করেছে ওরা। আমাদের কিছু গাড়ি, মোটর বাইক ভেঙে দিয়েছে ওরা।”

চিকিৎসা চলছে জখম পুলিশ কর্মীর। ছবি: নির্মল বসু।

কিন্তু অভিযোগ উঠছে, বহিরাগতদের নিয়ে হামলা চালিয়েছে টিএমসসিপি। তৃণমূলের স্থানীয় নেতারাও ছিলেন সেখানে। এ বিষয়ে বসিরহাটের সাংসদ ইদ্রিশ আলি বলেন, “আমাদের নেতারা কেউ যাননি। কলেজ থেকে ৫ কিলোমিটার দূরের ঘটনা। আমাদের ছেলেরাও কিছু করেনি। এবিভিপি ওই কলেজে বিশেষ কাউকে দাঁড় করাতে পারেনি। তাই নিজেরাই ঝামেলা পাকিয়ে আমাদের বদনাম করছে।” তিনি আরও জানান, যে সময়ে সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে বোমা ছোড়া হয়েছে, সে সময়ে টিএমসিপি-র কেউ এলাকাতেই ছিল না। এবিভিপির জমায়েত চলছিল।

এই অভিযোগ অবশ্য মানেনি এবিভিপি। সংগঠনের ইউনিট সম্পাদক পার্থরঞ্জন মণ্ডলের বক্তব্য, কলেজ ভোট উপলক্ষে সকাল ১০টায় মালঞ্চ থেকে তাঁরা দলের সমর্থকদের নিয়ে একটি বাসে চেপে মিনাখাঁর দিকে আসছিলেন। সে সময়ে তৃণমূলের কিছু বহিরাগত লোকজন কালীতলার কাছে বাস দাঁড় করায়। সেখান থেকে নামিয়ে মারধর করা হয় এবিভিপির ছেলেদের। তাঁর দাবি, পুলিশ এসে এবিভিপির ছেলেদের উদ্ধার করে কলেজে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। সেই রাগেই তৃণমূলের লোকজন পুলিশের উপরে হামলা করেছে।” তা হলে এ দিন এবিভিপির লোকজনের হাতে লাঠি-বোমা-আগ্নেয়াস্ত্র দেখা গেল কেন? পার্থর দাবি, বোমা বা আগ্নেয়াস্ত্র ছিল না। কিন্তু তৃণমূলের হামলার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতেই বাধ্য হয়ে লাঠিসোঁটা ধরতে হয়েছিল। তাদের দুই ছাত্রের খোঁজ মিলছে না বলেও দাবি ওই এবিভিপি নেতার।

পুলিশ জানায়, দু’পক্ষই হামলা-পাল্টা হামলার অভিযোগ করেছে। তার তদন্ত শুরু হয়েছে। এক জনকে আটক করা হয়েছে। পুলিশের উপরে আক্রমণের ঘটনারও তদন্ত হচ্ছে।

অন্য দিকে, স্বরূপনগরের শহিদ নুরুল ইসলাম স্মৃতি মহাবিদ্যালয়েও এ দিন মনোয়নপত্র তোলা নিয়ে অশান্তি ছড়ায় এসএফআই ও তৃণমূল ছাত্র পরিষদের মধ্যে। সেখানে আবার স্থানীয় সিপিএম নেতাদের দেখা গিয়েছে। সিপিএমের স্থানীয় নেতা হামালুদ্দিন আহমেদ বলেন, “কলেজে ঢুকতে গেলে আমাদের ছেলেদের মারধর করেছে তৃণমূল। পুলিশের সামনেই হামলা হয়েছে। যার প্রতিবাদে তেঁতুলিয়া মোড়ে অবরোধও হয়।” হামালুদ্দিনের দাবি, গোলমালের খবর পেয়ে দলের নেতারা গিয়েছিলেন। তাঁদেরও মারধর করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ঘণ্টা খানেক অবরোধ চলার পরে এক জন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে অবরোধ ওঠে। অন্য দিকে, তৃণমূল নেতা রমেন সর্দার বলেন, “আমরা গণ্ডগোল করিনি। ওরা কয়েক জন তো মনোনয়নও জমা দিয়েছে এ দিন। সব আসনে প্রার্থী দিতে না পেরে মিথ্যা রটাচ্ছে।”

southbengal nomination minakha college
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy