Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

থানায় গিয়ে নিজের বিয়ে রুখল নাবালিকা

‘স্যার, আমি পড়তে চাই। কিন্তু মা জোর করে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে...’ দীর্ঘ ১২ কিলোমিটার পথ সাইকেলে এসে একাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রী তখন রীতিমতো হাঁফাচ্ছে। চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। শুক্রবার দুপুরে কৃষ্ণগঞ্জ থানায় কর্তব্যরত এক পুলিশকর্মী ওই ছাত্রীর মুখ থেকে সব কথা শুনে খবর দেন ওসি সমিত ভট্টাচার্যকে। শেষ পর্যন্ত পুলিশের হস্তক্ষেপে বন্ধ হল ওই নাবালিকার বিয়ে। ছাত্রীটির মা থানায় এসে লিখিত দিয়ে যান, সাবালিকা না হওয়া পর্যন্ত তিনি মেয়ের বিয়ে দেবেন না।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কৃষ্ণগঞ্জ শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৪ ০০:১৯
Share: Save:

‘স্যার, আমি পড়তে চাই। কিন্তু মা জোর করে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে...’

দীর্ঘ ১২ কিলোমিটার পথ সাইকেলে এসে একাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রী তখন রীতিমতো হাঁফাচ্ছে। চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। শুক্রবার দুপুরে কৃষ্ণগঞ্জ থানায় কর্তব্যরত এক পুলিশকর্মী ওই ছাত্রীর মুখ থেকে সব কথা শুনে খবর দেন ওসি সমিত ভট্টাচার্যকে। শেষ পর্যন্ত পুলিশের হস্তক্ষেপে বন্ধ হল ওই নাবালিকার বিয়ে। ছাত্রীটির মা থানায় এসে লিখিত দিয়ে যান, সাবালিকা না হওয়া পর্যন্ত তিনি মেয়ের বিয়ে দেবেন না।

নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জের একেবারে বাংলাদেশ সীমান্তঘেঁষা কাদাঘাটা গ্রামে মা ও বোনের সঙ্গে মামার বাড়িতে থাকে ওই ছাত্রী। তার বাবা প্রায় আট বছর আগে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছেন। ওই ছাত্রীর মা মাসখানেক আগে মেয়েকে ডেকে জানিয়ে দেন যে তার জন্য পাত্র ঠিক করা হয়ে গিয়েছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তিনি বিয়ের আয়োজন করবেন। মায়ের ভয়ে সেই মুহূর্তে সে প্রতিবাদ করতে পারেনি। বিষয়টি নিয়ে সে সহপাঠীদের সঙ্গে আলোচনা করে। তাদেরই কেউ কেউ যুক্তি দেয় যে, একমাত্র পুলিশই তার বিয়ে আটকাতে পারে।

শুক্রবার দুপুরে থানা থেকে ফিরে ওই ছাত্রী বলে, “আমি এখন কিছুতেই বিয়ে করব না। পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করে মায়ের কষ্ট দূর করতে চাই। কিন্তু মা চাইছিলেন তাড়াতাড়ি বিয়ে দিলেই বোধহয় সমস্যা মিটে যাবে। তারপরেই পুলিশের কাছে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। একবার মনে হচ্ছিল যে, মায়ের বিরুদ্ধে থানায় যাব! কিন্তু বিশ্বাস করুন, বিয়েটা আটকাতে এ ছাড়া আমার আর কোনও উপায় ছিল না।”

ওই ছাত্রীর মা জানান, গ্রামেরই এক যুবকের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে ঠিক করেছিলেন তিনি। বিয়ের কথাবার্তা চললেও এখনও বিয়ের দিন ঠিক হয়নি। কিন্তু মেয়ের ইচ্ছের বিরুদ্ধে কেন বিয়ে দিচ্ছিলেন? ওই ছাত্রীর মা বলেন, “স্বামী আট বছর ধরে নিখোঁজ। তারপর থেকে দুই মেয়েকে নিয়ে ভাইদের বাড়িতে আছি। তাই ভাল পাত্র পেয়ে যাওয়ায় বিয়েটা দিয়ে দিতে চাইছিলাম।” তাই বলে নাবালিকার বিয়ে দেবেন? তিনি বলেন, “আর মাত্র ছ’মাস পরেই মেয়ের বয়স ১৮ হবে। তাছাড়া আমাদের এলাকায় এমন বয়সের তো কত মেয়েরই বিয়ে হয়।”

মেয়ের থানায় যাওয়ার বিষয়টি ওই মহিলা মেনে নিতে না পারলেও ভাগ্নির পাশে দাঁড়িয়েছেন ওই ছাত্রীর মামারা। ওই ছাত্রীর ছোট মামা বলেন, “আমরাও চাই না এখনই ভাগ্নির বিয়ে হয়ে যাক। ও যখন পড়তে চাইছে তখন পড়ুক না। দিদি আমাদের কিছু না জানিয়েই বিয়ের ঠিক করেছিল। আমরা দিদিকে এ বার বুঝিয়ে বলব যাতে সে এখনই বিয়ে না দেয়।” সব শুনে কৃষ্ণনগর সদর মহকুমাশাসক মৈত্রেয়ী গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “মেয়েটির সাহস সত্যিই প্রশংশনীয়। এ ভাবে যদি সব মেয়ে এগিয়ে আসে তা হলে আমাদের কাজটাও অনেক সহজ হবে। মেয়েটির পড়ার ব্যাপারে আমরা সব রকম সহযোগিতা করব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE