Advertisement
E-Paper

নেই জেটি, চলছে ঝুঁকির পারাপার

কাঁধে মালপত্তর, হাতে জুতো, হাঁটু পর্যন্ত তোলা প্যান্ট, শাড়ি। সঙ্গে সাইকেল থাকলে মাথায় তুলতে হয়। আর মোটরসাইকেল হলে জল-কাদা দিয়ে ঠেলে নিয়ে যেতে হয়। পুজালি পুর এলাকার অছিপুর ফেরিঘাটে এ ভাবেই চলে যাতায়াত। এ ভাবেই দলে দলে বাচ্চা-বুড়ো প্রতি দিন ভুটভুটি চড়ে যান উলুবেড়িয়ায়। কারণ, এখানে কোনও ভাসমান জেটি তৈরি হয়নি।

জয়তী রাহা

শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৪ ০২:০৩
অছিপুর ফেরিঘাটে এ ভাবেই নিত্য যাতায়াত।  ছবি:অরুণ লোধ

অছিপুর ফেরিঘাটে এ ভাবেই নিত্য যাতায়াত। ছবি:অরুণ লোধ

কাঁধে মালপত্তর, হাতে জুতো, হাঁটু পর্যন্ত তোলা প্যান্ট, শাড়ি। সঙ্গে সাইকেল থাকলে মাথায় তুলতে হয়। আর মোটরসাইকেল হলে জল-কাদা দিয়ে ঠেলে নিয়ে যেতে হয়। পুজালি পুর এলাকার অছিপুর ফেরিঘাটে এ ভাবেই চলে যাতায়াত। এ ভাবেই দলে দলে বাচ্চা-বুড়ো প্রতি দিন ভুটভুটি চড়ে যান উলুবেড়িয়ায়। কারণ, এখানে কোনও ভাসমান জেটি তৈরি হয়নি।

অছিপুরঘাটের নিত্যযাত্রী মন্টু মল্লিক জানান, এখানকার পরিস্থিতি বেশ বিপজ্জনক। জোয়ারের সময় নদীর জল বেড়ে হাঁটু উপরে উঠে আসে। ভাটায় জল নামলেও কাদার উপরে দিয়েই যাতায়াত করতে হয়। কাদা পেরিয়ে এসে কলে হাত-পা ধুয়ে তবে ফের যাত্রা শুরু।

মহিলাদের ক্ষেত্রে সমস্যা আরও বেশি। রাতের অন্ধকারে সমস্যা হয় আরও। ঘাটের কাছে হাইমাস্ট আলো থাকা সত্ত্বেও তাতে বিশেষ সুবিধা হয় না বলে জানালেন নিত্যযাত্রীরা। কিন্তু এই জেটিহীন ঘাটে নৌকা চলাচলের দায়িত্বে আছেন কারা? স্থানীয় পুজালি পুরসভা নয়। হাওড়া জেলাপরিষদও নয়। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলাপরিষদের সভাধিপতি শামিমা শেখ জানান, বিভিন্ন কারণে এ বছরে নৌকা চালানোর ডাক দেওয়া হয়নি। খুব শীঘ্রই কয়েকটি ঘাটের ডাক হবে। এর মধ্যে অছিপুর আছে কি না দেখতে হবে। তবে জেটি তৈরির দায়িত্ব যে তাঁদের তা স্বীকার করে নিচ্ছেন তিনি।

পুজালির অন্য একটি ফেরিঘাট রাজীবঘাটেও জেটি নেই। তাই সেখান থেকে চেঙ্গাইলে যাতায়াত কষ্টকর। নিত্যযাত্রীরা জানাচ্ছেন, বজবজ পুর এলাকায় দু’টি ফেরিঘাট রয়েছে। একটি থেকে বাউড়িয়া এবং অন্যটি থেকে উলুবেড়িয়ায় যাতায়াত করা হয়। প্রথমটিতে জেটি থাকলেও অন্যটিতে নেই। মহেশতলা পুর এলাকার নুঙ্গির বাটানগরে পাশাপাশি দু’টি ঘাটই জেটিহীন। সেখান থেকে ভুটভুটিতে চেপে হীরাপুর এবং সারেঙ্গায় যাওয়া যায়। দক্ষিণ ২৪ পরগনার এই বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, ঘাটগুলিতে আগে নৌকা চলত। এখন চলে ভুটভুটি। এটুকুই যা উন্নতি। জেটি তৈরির কোনও চেষ্টাই হয়নি।

ফেরিঘাটগুলি থেকে যাত্রী পরিষেবা শুরু হয় সকাল ৬টায়। রাত ৮-৩০ থেকে ন’টার মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়। এক একটি নৌকা প্রায় চল্লিশ জন যাত্রী নিয়ে যাতায়াত করে। সঙ্গে মোটরসাইকেল, সাইকেলও থাকে। প্রতি শনিবার উলুবেড়িয়ার হাটের জন্য বাটানগর, সারেঙ্গা, চড়িয়াল, বজবজ, খড়িবেড়িয়া, চটা এলাকা থেকে শুধুমাত্র অছিপুর ফেরিঘাট দিয়েই দশ-বার হাজার যাত্রী যাতায়াত করেন। নুঙ্গি ফেরিঘাটের যাত্রীরা জানান, নৌকার হ্যারিকেনের আলোয় কোনও রকমে যাত্রী ওঠা-নামা চলে। জেটি না থাকায় কাঠের পাটাতন পেতে ওঠা-নামা করতে হয়।

হুগলি জলপথ নিগমের এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, বজবজ-বাউড়িয়া ফেরি সার্ভিস চালায় হুগলি জলপথ। বজবজ-বাউড়িয়ায় লঞ্চ চলে। দু’দিকেই জেটিও রয়েছে। হাওড়া জেলাপরিষদের সহ সভাপতি অজয় ভট্টাচার্য বলেন, “রাজীবঘাট ও নুঙ্গির দু’টি ফেরি সার্ভিসের ডাক হাওড়া জেলাপরিষদ থেকে হয়। যেহেতু নুঙ্গি ও রাজীবঘাট দক্ষিণ ২৪ পরগনার অন্তর্গত। তাই দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাপরিষদেরই জেটি তৈরি করার কথা।” অজয়বাবু জানান, এত দিন নৌকা চলাচলের ক্ষেত্রে ন্যূনতম পরিষেবা এবং যাত্রীদের নিরাপত্তা দেখা হত না। জেলাপরিষদ শুধু ডাক দিয়ে টাকা নিত।

মাত্র এক বছর এই জেলাপরিষদ গঠন হয়েছে। আমরা পরিষেবা আধুনিক করার চেষ্টা শুরু করছি। ধীরে ধীরে ফল মিলতে শুরু করবে বলে তিনি আশ্বাস দেন। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলাপরিষদের সভাধিপতি শামিমা শেখ এবং অজয়বাবু দু’জনেই জানান, জেটি তৈরি ব্যয়বহুল। জেলাপরিষদের একার পক্ষে সম্ভব নয়। তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জলপরিবহণ ব্যবস্থা উন্নত করার

যে নির্দেশ দিয়েছেন তা মেনে পর্যটন ও পরিবহণ দফতরের সঙ্গে ইতিমধ্যেই হাওড়া ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা দুই জেলাপরিষদেরই বৈঠক হয়েছে। জেটি তৈরির কাজ সংশ্লিষ্ট দফতরের মাধ্যমে রাজ্য করতে পারে। ভবিষ্যতে যাত্রী নিরাপত্তায় পিপিপি-র মাধ্যমে ভুটভুটি তুলে ছোট লঞ্চ চালানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। সব ঘাট এক সঙ্গে করা সম্ভব নয়। ধাপে ধাপে সবগুলিই করা হবে।

achipur ghat lonch service
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy