Advertisement
E-Paper

পথের দু’ধারে স্টল, যানজট নিত্যসঙ্গী

যানজটের কবলে পড়ে হয়রানি রোজনামচা হয়ে দাঁড়িয়েছে ক্যানিংয়ের বাসিন্দাদের কাছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মহকুমা শহর ক্যানিং, সুন্দরবনের অন্যতম প্রবেশদ্বারও বটে। সে কারণে দেশ-বিদেশের নানা প্রান্ত থেকে পর্যটকদের আনাগোনা লেগেই থাকে। তা ছাড়া, স্কুল-কলেজের পড়ুয়া, অফিস যাত্রীদের চাপ তো রয়েছেই।

সামসুল হুদা

শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:৪৩
পথঘাটে চলাফেরা করাই দায়। যানজট নিত্য সঙ্গী।

পথঘাটে চলাফেরা করাই দায়। যানজট নিত্য সঙ্গী।

যানজটের কবলে পড়ে হয়রানি রোজনামচা হয়ে দাঁড়িয়েছে ক্যানিংয়ের বাসিন্দাদের কাছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মহকুমা শহর ক্যানিং, সুন্দরবনের অন্যতম প্রবেশদ্বারও বটে। সে কারণে দেশ-বিদেশের নানা প্রান্ত থেকে পর্যটকদের আনাগোনা লেগেই থাকে। তা ছাড়া, স্কুল-কলেজের পড়ুয়া, অফিস যাত্রীদের চাপ তো রয়েছেই। কিন্তু যানজটের কবল থেকে মুক্তি মেলেনি শহরের।

এক সময়ে সুন্দরবনের বাসিন্দাদের কলকাতা যাওয়ার একমাত্র মাধ্যম ছিল ক্যানিং রেল স্টেশন। পরে ক্যানিং ও বাসন্তী সেতু নির্মাণ হওয়ায় সড়ক পথে সুন্দরবনের সঙ্গে কলকাতা-সহ জেলার বিভিন্ন প্রান্তে যাওয়ার বাস, ট্রেকার, অটো, ম্যাজিক গাড়ি চালু হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে ক্যানিংয়ের উপর যেমন যানবাহনের চাপ বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে মানুষের ভিড়। একে অপরিসর রাস্তা, তার উপরে আবার রাস্তার দু’ধারে দখলদারদের দাপট। রাস্তার পাশে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে অটো। নির্দিষ্ট কোনও বাসস্ট্যান্ড না থাকায় যত্রতত্র গাড়ি দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠানামা করানো হয়। রাস্তার দু’ধারের স্থায়ী দোকানগুলির সামনে ঝাঁকা-ঝুড়িতে করে ফল, সব্জি, ফুল-সহ অন্যান্য জিনিসপত্র নিয়ে রাস্তায় বসে ব্যবসা করেন বহু হকার। এ সবের কারণে পথচারীদের নাভিঃশ্বাস ওঠার জোগাড় হয়েছে।

পূরবী নস্কর, কাকলি পাল, বিশ্বনাথ দাসের মতো বাসিন্দারা বলেন, “ক্যানিং বাসস্ট্যান্ড-সহ বাজার এলাকায় পথচলা যেন নরক যন্ত্রণার সমান। রাস্তা দখল করে চলছে হকারদের দাদাগিরি। ভিড়ের মধ্যে যদি কোনও কারণে ধাক্কা লাগে, তা হলে শুনতে হয় হকারদের কটূক্তি। আসলে রাজনৈতিক দলের মদতে দিনের পর দিন এ সব চলছে। এ ব্যাপারে প্রশাসনেরও কোনও নজরদারি নেই।” ক্যানিং বাজারের এক ফল বিক্রেতা আবার বলেন, “বাজারে আমাদের নির্দিষ্ট বসার জায়গা নেই। পেটের তাগিদে ফুটপাতে বসে ব্যবসা করি। সে কারণে পুলিশের চোখ রাঙানি সহ্য করতে হয়। দোকানদারদের ধমকানিও জোটে। কয়েক ঘণ্টা ব্যবসা করার জন্য পিছনের দোকানদারকে টাকা দিয়ে এখানে বসতে হয়।” এমন অভিযোগ শুধু ফল বিক্রেতারই নয়, এলাকাবাসীরও এই একই বক্তব্য। টাকা নিয়ে হকারদের দোকানের সামনে বসতে দেওয়ার অভিযোগ অবশ্য মানেননি ব্যবসায়ীরা।

রাস্তার ধারে ধারে গজিয়ে উঠেছে হকারদের স্টল।

কিন্তু সব মিলিয়ে এ সব কারণে রাস্তা অপরিসর হয়ে যাচ্ছে। পথচলতি মানুষের যাতায়াতে সমস্যা হচ্ছে। ক্যানিং থানার ওসি সতীনাথ চট্টরাজ পথঘাট যানজট মুক্ত করার জন্য কিছুটা উদ্যোগী হলেও রাজনৈতিক নেতাদের সদিচ্ছার কারণে তা সম্পূর্ণ হচ্ছে না বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।

ক্যানিংয়ের কংগ্রেস নেতা অর্ণব রায় বলেন, “ক্যানিংয়ের যানজট একটা সার্বিক সমস্যা। সাধারণ মানুষের স্বার্থে ক্যানিং বাসস্ট্যান্ড-সহ সংলগ্ন এলাকা পরিষ্কার করা প্রয়োজন। এ জন্য দলের পক্ষ থেকে মহকুমাশাসকের কাছে দাবি জানিয়েছিলাম। প্রশাসন যদি উদ্যোগী হয়, তা হলে রাজনৈতিক ভাবে সব রকম সাহায্য করব।” ক্যানিং ১ ব্লক বিজেপির সদস্য কৃষ্ণ দেবনাথ বলেন, “যানজট মুক্ত করার জন্য আমরা প্রশাসনকে সব রকম ভাবে সাহায্য করতে প্রস্তুত। তবে হকার উচ্ছেদের ক্ষেত্রে একটু সময় দিলে ভাল হয়।” সিপিএমের জোনাল কমিটির সম্পাদক রুহুল গাজির কথায়, “প্রশাসন আমাদের সাহায্য চাইলে অবশ্যই পাশে থাকব। আমাদের সময়ে হকারদের জন্য বিকল্প জায়গা দিয়েছিলাম। এখন আবার দেখছি হকারেরা রাস্তার উপরে পসরা সাজিয়ে বসেছেন। ক্যানিংয়ের যানজট সত্যিই একটা বড় সমস্যা।” তিনি জানান, সাধারণ মানুষের পথ চলার জন্য যানজট সমস্যার সমাধান দরকার। যেখানে সেখানে বাস দাঁড়াচ্ছে। রুহুল বলেন, “আমাদের সময়ে মাতলা নদীর চরে বাস টার্মিনাস তৈরির উদ্যোগ করা হয়েছিল। কিন্তু সরকার পরিবর্তন হওয়ায় তা আর হয়নি।”

ক্যানিং ১ পঞ্চায়েত সমিতি তৃণমূলের সভাপতি পরেশ দাস আবার বলেন, “ক্যানিংকে যানজট মুক্ত করার জন্য প্রশাসনের সঙ্গে কথা হয়েছে। হকারদের তো নির্দিষ্ট জায়গা আছে। তারা সেখানে বসতে পারে। ফুলের কারবারিদের জন্য মাতলা ১ পঞ্চায়েত এলাকায় জায়গা ঠিক করা হয়েছে। টাকাও অনুমোদন হয়ে গিয়েছে। খুব শীঘ্রই কাজ শুরু হবে।” এ প্রসঙ্গে মহকুমাশাসক প্রদীপ আচার্যের বক্তব্য, “যানজট সমস্যা নিয়ে সব দলের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। পুলিশকে বলা হয়েছে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।”

(চলবে)

—নিজস্ব চিত্র।

amar shohor samsul huda canning southbengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy