Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

ভাঙা ঘাটে জারি বিপজ্জনক ভাসান

তৈরির তিন বছরের মধ্যেই বিপজ্জনক ভাবে ঝুলে পড়েছিল খড়দহের রাসখোলা ঘাটের ভাসান-ঘাট। এর জন্য আগের বছরও প্রতিমা বিসর্জনে সমস্যা হয়েছিল। মেরামত না করে এ বারও বিসর্জন হল সেখানে। এই ভাসানের ঘাটটি কেএমডব্লিউএসএ তৈরি করেছিল। গত বছরই ঘাটটির সংস্কারের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি। এ বছর পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।

নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চলছে ঝুঁকির ব্যবহার।  নিজস্ব চিত্র

নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চলছে ঝুঁকির ব্যবহার। নিজস্ব চিত্র

জয়তী রাহা
শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০১৪ ০২:১৬
Share: Save:

তৈরির তিন বছরের মধ্যেই বিপজ্জনক ভাবে ঝুলে পড়েছিল খড়দহের রাসখোলা ঘাটের ভাসান-ঘাট। এর জন্য আগের বছরও প্রতিমা বিসর্জনে সমস্যা হয়েছিল। মেরামত না করে এ বারও বিসর্জন হল সেখানে।

এই ভাসানের ঘাটটি কেএমডব্লিউএসএ তৈরি করেছিল। গত বছরই ঘাটটির সংস্কারের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি। এ বছর পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। খড়দহ পুরসভা সূত্রে খবর, আশপাশে বিসর্জনের উপযুক্ত আর কোনও ভাসান ঘাট না থাকায় ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও বাধ্য হয়ে এখানেই ভাসানের ব্যবস্থা করতে হয়েছে। এ বছরেও খড়দহ ও টিটাগড়ের বারোয়ারি ও বাড়ির পুজো মিলিয়ে শ’খানেক ভাসান হয় এ ঘাটে।

চার বছর আগে গঙ্গার ঘাট সংস্কারে হাত দিয়েছিল কেএমডব্লিউএসএ। সেই সময়েই বহু পুরনো এই ভাসান ঘাটের সংস্কার হয়। বছর না ঘুরতেই গঙ্গার ষাঁড়াষাঁড়ি বাণের ধাক্কায় ভেঙে পড়ে ঘাট সংলগ্ন সেতুর খানিকটা অংশ। এর জন্য প্রযুক্তিগত ত্রুটির কথা স্বীকারও করে কেএমডব্লিউএসএ। তারা জানায়, কোনও পিলার না দিয়ে পাঁচিল তুলে সেতুটি তৈরি হওয়াই ভেঙে পড়ার মূল কারণ। কংক্রিটের পিলার হলে, ৪০ ফুট দীর্ঘ এই ঘাট তৈরিতে খরচ পড়ত পাঁচ-ছয় কোটি টাকা। সেই মুহূর্তে অত টাকা বরাদ্দ ছিল না। তা ছাড়া চড়া পরায় গঙ্গা অনেক দূরে ছিল।

ফলে কোনও সমস্যা হবে না বলে মনে করা হয়েছিল।

প্রতি বছর একটু একটু করে তলিয়ে গিয়ে ঘাটটির অনেকটা অংশই গঙ্গায় চলে গিয়েছে। সংলগ্ন স্নানঘাটের সিঁড়ির শেষে বাঁধানো শানটিও নিশ্চিহ্ন। বিপজ্জনক ওই ঘাটের সামনে পুরসভার সাঁটানো নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করেই দিব্যি যাতায়াত চলছে। শুধু তাই নয়, ঘাটের ধার দিয়ে বিকল্প রাস্তা করে বালির বস্তা ফেলে ভাসানের ব্যবস্থা হয়েছিল বলে জানিয়েছে প্রশাসন।

যদিও বিকল্প ব্যবস্থা যে যথেষ্ট বিপজ্জনক বলে মানছেন স্থানীয় পুজো কমিটি থেকে পুর-কর্তৃপক্ষ। তাঁরা জানান, বালির বস্তার ঢাল দিয়ে ট্রাক নামানো যাবে না। পুরসভার পক্ষ থেকে কুড়ি জন লোক নিয়োগ করা হয়েছিল ওই পথে প্রতিমা বয়ে গঙ্গায় নিয়ে যেতে। পায়ের চাপে বালির বস্তা ফেটে যাচ্ছিল। ফেটে যাওয়া বস্তার বালি জোয়ারের জল ধুইয়ে নেমে যাওয়ায় ছোট বড় গর্ত তৈরি হয়েছিল। ভাঁটার সময়ে গঙ্গা দূরে সরে যাওয়ায় প্রতিমা বয়ে গঙ্গায় বিসর্জনের পথ যথেষ্ট ঝুঁকির ছিল। অন্য কোনও বিকল্প ঘাট না থাকায় গত তিন বছর ধরে এই ব্যবস্থাই চলে আসছে।

খড়দহ পুরসভার উপ-প্রধান শ্যামলকুমার দেব বলেন, “ওই ঘাটের বিকল্প নেই। অথচ সংস্কার করার মতো অত অর্থও পুরসভার নেই। পুরসভার নিষেধাজ্ঞার বিজ্ঞপ্তি সত্ত্বেও মানুষ সেখানে যান।”

কেএমডব্লিউএসএ-র তরফে এক আধিকারিক জানান, রাসখোলার পরিস্থিতি যা তাতে আগে ভাঙন আটকানোর চেষ্টা করতে হবে। তার পরে ঘাটের সংস্কার নিয়ে ভাবা হবে। তবে শুধু রাসখোলাই নয়, চার বছরের মধ্যে খড়দহের দিকে গঙ্গার ভাঙন ক্রমে বেড়ে চলেছে। দেখতে হবে খড়দহে ভাসান ঘাটের উপযুক্ত জায়গা অন্য কোথাও হতে পারে কি না। যেখানেই ভাসান ঘাট হোক না কেন এ বার জল থেকে পিলার তুলেই ভাসান ঘাট তৈরি করা হবে। এই সব মিলে অনেক বড় মাপের কাজ হতে চলেছে ওখানে। এর জন্য কেন্দ্রিয় সরকারের কাছে ১২ কোটি টাকার ডিপিআর (ডিটেলড প্রজেক্ট রিপোর্ট) জমা পড়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

jayati raha khardaha pujo
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE