Advertisement
E-Paper

মোবাইল কিনতে চেয়ে হামলার ছক

কেতাদূরস্ত মোবাইল কেনার শখ। কিন্তু টাকা নেই। টাকা আসবে কোথা থেকে? কেন? বড়লোক ‘কাকা’ তো আছে। তাকে চমকিয়ে টাকা পাওয়া যাবে। এই মতলবেই হামলা চালিয়েছিল ভাইপোরা। কিন্তু চপার হাতে ‘বাড়াবাড়ি’ করে ফেলায় মারা যান কাকা। দুই ভাইপোকে গ্রেফতার করে এই তথ্যই সামনে এসেছে পুলিশের কাছে। আর এক অভিযুক্ত এখনও অধরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:৪৮
আদালতের পথে ধৃতেরা। ছবি: নির্মল বসু।

আদালতের পথে ধৃতেরা। ছবি: নির্মল বসু।

কেতাদূরস্ত মোবাইল কেনার শখ। কিন্তু টাকা নেই। টাকা আসবে কোথা থেকে? কেন? বড়লোক ‘কাকা’ তো আছে। তাকে চমকিয়ে টাকা পাওয়া যাবে।

এই মতলবেই হামলা চালিয়েছিল ভাইপোরা। কিন্তু চপার হাতে ‘বাড়াবাড়ি’ করে ফেলায় মারা যান কাকা। দুই ভাইপোকে গ্রেফতার করে এই তথ্যই সামনে এসেছে পুলিশের কাছে। আর এক অভিযুক্ত এখনও অধরা।

খুনের ঘটনাটি ঘটেছিল গত ২৭ জানুয়ারি। পর দিন ছিল বাদুড়িয়া থানার আটুরিয়া গ্রামের কদমতলার বাসিন্দা সাফিনুর গাজির বিয়ের পাকাদেখা। রাতে বাবা-মায়ের সঙ্গে সে সব নিয়ে আলোচনার পরে সবে খেতে বসবেন, এমন সময়ে একটা ফোন পেয়ে মাকে বলেছিলেন, “মা তুমি ভাত ঢেকে রাখো, আমি এখনই আসছি।”

আর ফেরেননি বছর ছাব্বিশের যুবক। পর দিন‌ বাড়ি থেকে একটু দূরে সব্জি খেতের মধ্যে গলা কাটা অবস্থায় উদ্ধার হয় সাফিনুরের দেহ। তদন্তে নেমে প্রাথমিক ভাবে থই পাচ্ছিল না পুলিশ। কেন খুন করা হয়েছে তা ভেবে উঠতে পারেনি পরিবারের লোকজনও। এলাকায় ঘুরে সাফিনুরের কোনও শত্রু আছে বলেও পুলিশ জানতে পারেনি। খুনের কারণ বুঝতে পুলিশকে হিমশিম খেতে হয়।

সাফিনুরের বাবা ব্যবসায়ী। মাঝে মধ্যে বাবার কাজে হাত লাগালেও সাফিনুর মূলত চড়া সুদে টাকা ধার দেওয়ার কারবার করত। ধার এবং শোধের টাকা খাতায় লিখে রাখত। মামলায় তদন্তকারী এক অফিসার বলেন, “হিসেবের খাতার পাতায় সাফিনুরের এক দূরসম্পর্কের ভাইপো রাজু গাজির নামের পাশে তার ফোন নম্বর লেখা ছিল। ওই খাতা থেকে জানা যায়, সাইকেল বন্ধক বাবদ ৫০০ টাকা নিয়েছিল রাজু। সেই টাকা সুদে বেড়ে ৯০০ টাকায় দাঁড়িয়েছিল। ২৮ জানুয়ারি যে দিন সাফিনুরের দেহ উদ্ধার হয়েছিল, সে দিন ওই টাকা শোধ করার কথা খাতায় লেখা ছিল। এখানেই খটকা লাগে পুলিশের। তা হলে টাকা শোধ না করে লোক লাগিয়ে কাকাকে কি খুন করেছে রাজু? শুরু হয় রাজুর খোঁজ। কিন্তু তত ক্ষণে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে ওই কিশোর। রাজুর সঙ্গে ওঠাবসা ছিল সাফিনুরের আর এক দূরসম্পর্কের ভাইপো সাইফুল গাজির। পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে আটক করে। প্রথমে কিছু বলতে না চাইলেও শেষে সাইফুলই পুলিশের কাছে মুখ খোলে।

পুলিশ কর্তাদের দাবি, সাইফুল জানায়, মোবাইল কেনার টাকা জোগাড় করতে গিয়ে কাকাকে কুপিয়ে খুন করেছিল ভাইপোরা। ধরা পড়ার পরে সে কথা স্বীকারও করেছে বছর কুড়ির দুই ভাইপো রাজু গাজি এবং সাইফুল গাজি। মাধ্যমিকের গণ্ডী পেরোয়নি কেউই। কাজ করে সেলাইয়ের কারখানায়। খুনের ঘটনায় যুক্ত তাদের আর এক সঙ্গীর খোঁজে তল্লাশি শুরু করছে পুলিশ। এ বিষয়ে বাদুড়িয়া থানার ওসি কল্লোল ঘোষ বলেন, “মোবাইল কেনার টাকা জোগাড় করতে কাকাকে খুনের ঘটনায় আমরা বিস্মিত। বিশেষ করে ছোট ছোট ছেলেরা এমন ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে পড়াটা চিন্তার বিষয়।” ধৃতদের শুক্রবার বসিরহাটের এসিজেএমের আদালতে তোলা হলে বিচারক তাদের পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।

সাইফুল প্রথমে দাবি করেছিল, ঘটনার রাতে কয়েক জন দুষ্কৃতী তাদের মাথায় রিভলবার ধরে সাফিনুরকে ডেকে আনতে বলে। সাফিনুর আসতেই তাঁকে কুপিয়ে খুন করে পালায়। কাউকে বললে তাদেরও ‘দেখে নেওয়া হবে’ বলে হুমকি দিয়ে যায় আততায়ীরা। সকলের মুখ ঢাকা থাকায় কাউকে চেনা যায়নি।

পুলিশ সাইফুলের কথা শোনার পরে তাকে ছেড়ে দেয়। তবে ওই যুবকের গতিবিধির উপরে নজরদারি শুরু হয়। তত ক্ষণে রাজুর মোবাইল ফোনের কললিস্ট পৌঁছেছে পুলিশের হাতে। তা পরীক্ষা করে পুলিশ জানতে পারে, রাজু আছে মুম্বইয়ে। বাদুড়িয়ার পুলিশ মুম্বইয়ের পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তাড়া খেয়ে রাজু ফিরে আসে স্বরূপনগরের শাঁড়াপুল-ডাকবাংলো এলাকায়। এক মামার বাড়িতে এসে আশ্রয় নেয় সে। এ দিকে, সাইফুলের উপরে তখনও নজর রেখেছিল পুলিশ। ফলে রাজুর খোঁজ সহজেই পুলিশের হাতে এসে পৌঁছয়। বৃহস্পতিবার রাতে তাদের গ্রেফতার করে থানায় আনার পরে জেরার মুখে প্রথমে দু’জনে একই গল্প বললেও শেষে ভেঙে পড়ে।

পুলিশের দাবি, কাকা হয়েও তার কাছে চড়া সুদে সাইকেল বন্ধক রাখায় সাফিনুরের উপরে ক্ষোভ ছিল রাজুর। এ দিকে, হালফ্যাশনের একটা মোবাইল কেনার শখ চেপেছিল সাইফুল এবং তাদের আর এক সঙ্গীর মাথায়। টাকা জোগাড়ের পরিকল্পনায় বসে তিন জন। ঠিক হয়, এক ঢিলে দুই পাখি মারতে হবে। সারা দিনে সুদের টাকা জোগাড় করে বাড়ি ফেরেন সাফিনুর। সে সময়ে তাঁর কাছে ৪০-৫০ হাজার টাকা থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। একবার অন্ধকারের মধ্যে ধরতে পারলে পাওনা টাকা থেকে মুক্তি পাবে রাজু। অন্য দিকে, টাকা মিললে মোবাইলের শখ মিটবে সাইফুলদের। পুলিশের দাবি, এই ছিল ওই যুবকদের ছক। সাইফুলের অবশ্য দাবি, খুনের পরিকল্পনা তাদের ছিল না। কিন্তু অপটু হাতে চপার চালাতে গিয়ে কোপ বসে যায় কাকার গলায়। তার পরে তাকে বাঁচিয়ে রাখলে বিপদ বাড়তে পারে মনে করে আরও বেশি করে কোপানো হয়।

এ দিন আদালতের পথে রাজু বলে, “পরিকল্পনা মতো টাকা শোধ করে দেব বলে একটা ফোন থেকে কাকাকে ডাকি। ঠিক ছিল, কাকার কাছে থাকা টাকা কেড়ে নিতে পারলে আমার দেনা শোধ হবে। সাইফুলরাও তাদের মোবাইল কিনতে পারবে। কিন্তু সাইফুলরা যে কাকা আসার সঙ্গে সঙ্গে তাকে কোপাবে, সেটা বুঝতে পারিনি।” বলতে বলতেই কান্নায় ভেঙে পড়ে রাজু। খুনের পরে রক্ত মাখা জামা-প্যান্ট ধুয়ে আলাদা আলাদা জায়গায় ফেলে দেয় তারা। একটি পুকুরের মধ্যে চপার এবং সাফিনুরের মোবাইল ফোনটিও ছুড়ে ফেলে। সে সব উদ্ধারের চেষ্টা করছে পুলিশ।

কিন্তু সাইফুলকে মেরে কী উদ্দেশ্যসিদ্ধি হয়েছিল সাইফুলদের? উত্তরে দুই সদ্য যুবক আরও বড় দীর্ঘশ্বাস ফেলে জানায়, মাত্র দেড় হাজার টাকা পাওয়া গিয়েছিল কাকার পকেট থেকে।

baduria mobile southbengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy