Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

চাকরি দেওয়ার ভুয়ো রেল-সাইট, ধৃত তিন ঠগবাজ

বাড়তি একটি ‘এস’-এর জোরেই সরকারি চাকরি দেওয়ার নামে নামে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়েছে একটি প্রতারণা চক্র। শেষমেশ অবশ্য আমডাঙার পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে তিন জন। প্রতারিত এক সাইবার কাফের মালিকের অভিযোগের সূত্রে। প্রতারকদের বুদ্ধির দৌড় দেখে হতবাক পুলিশও। রেলের ওয়েবসাইটে ‘রেজাল্ট’ শব্দটি ব্যবহার হয়।

প্রতারণা-কাণ্ডে ধৃতরা। —নিজস্ব চিত্র

প্রতারণা-কাণ্ডে ধৃতরা। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:২২
Share: Save:

বাড়তি একটি ‘এস’-এর জোরেই সরকারি চাকরি দেওয়ার নামে নামে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়েছে একটি প্রতারণা চক্র। শেষমেশ অবশ্য আমডাঙার পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে তিন জন। প্রতারিত এক সাইবার কাফের মালিকের অভিযোগের সূত্রে। প্রতারকদের বুদ্ধির দৌড় দেখে হতবাক পুলিশও। রেলের ওয়েবসাইটে ‘রেজাল্ট’ শব্দটি ব্যবহার হয়। প্রতারকরা তাদের সাইটে রেখেছিল ‘রেজাল্টস’ শব্দটি। সামান্য এই তফাত ধরতে না পেরে ভুয়ো সাইটে নিজেদের নাম দেখে সকলে ধরে নিত, চাকরি পেয়ে গিয়েছে। ভুয়ো নিয়োগপত্র নিয়ে অফিসে হাজির হয়ে হতে হতো বেইজ্জত।

এই চক্রেরই ৩ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে সোমবার। সুজয় মাইতি, রাজীব সিংহ ও নরোত্তম বর্মণ। উদ্ধার হয়েছে বিভিন্ন দফতরের ভুয়ো নিয়োগপত্র ও ডাক্তারি শংসাপত্র-সহ বিভিন্ন জাল নথি তৈরির নানা সরঞ্জাম, ল্যাপটপ এবং কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক। ধৃতদের মঙ্গলবার বারাসত আদালতে তোলা হয়। তাদের ১০ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখা হবে।

সুজয়কে ধরা হয় আমডাঙায়। তাকে জেরা করে দক্ষিণেশ্বরের ফ্ল্যাট থেকে গ্রেফতার করা হয় ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা রাজীবকে। জলপাইগুড়ির যুবক নরোত্তমও ধরা পড়ে সেখানেই। রাজীব বিজ্ঞানে স্নাতক, কম্পিউটারে বিশেষ দক্ষ। জাল সাইটের কারিকুরি সে-ই করত। খদ্দের ধরত মাধ্যমিকের গণ্ডি না-পেরোনো সুজয়, নরোত্তমরা। চক্রের বাকিদের খুঁজছে পুলিশ। উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, “চক্রটির নিখুঁত কাজ দেখে পুলিশও অবাক।” আমডাঙার ওসি গৌতম মিত্রের দাবি, রেল শুধু নয়, টাকা হাতানো হতো বনবিভাগ ও রাজ্য সরকারের প্রাথমিক শিক্ষা দফতরে চাকরি দেওয়ার নামেও। রেলে চাকরির জন্য দিতে হতো প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা। অন্য সরকারি দফতরেরও ভুয়ো সাইট খুলেছিল প্রতারকরা। সেখানে চাকরি মিলত আড়াই লক্ষে। সন্দেহ এড়াতে টাকা নেওয়া হতো খেপে-খেপে।

এ পর্যন্ত ৬ জন প্রতারিতের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছে পুলিশ। তাঁরা জানিয়েছেন, খবরের কাগজেও বিজ্ঞাপন দিত চক্রটি। এক জন জানান, কলকাতায় নিয়ে গিয়ে তাঁর পরীক্ষা দেওয়ারও ব্যবস্থা করেছিল চক্রটি। সেখানে জনা তিরিশের সঙ্গে বসিয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়। ঘণ্টা বাজিয়ে খাতা জমা নেওয়া হয়। যাঁরা পরীক্ষা দিচ্ছিলেন, সকলেই প্রথম পর্যায়ের সাড়ে ৬ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু কেউই তখন মুখ খোলেননি।

জালিয়াতি সামনে এল কী ভাবে?

পুলিশ জানিয়েছে, দেবর্ষি ঘোষ নামে কামদেবপুরহাটের এক সাইবার কাফের মালিক সোমবার সন্ধেয় আমডাঙা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তিনি জানান, সুজয় তাঁর কাফেতে প্রায়ই এসে রেলে চাকরি-প্রাপকদের তালিকার ‘প্রিন্ট আউট’ নিত। সুজয়ের কাছে নিজের চাকরির জন্য দরবার করে বসেন দেবর্ষি। সুজয় জানায়, মোট ৩ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা লাগবে। রেলের পরীক্ষায় তাঁর নামে অন্য ব্যক্তি বসবে। রেজিস্ট্রেশন বাবদ দেবর্ষির কাছ সাড়ে ৬ হাজার টাকা এবং কিছু নথি নেওয়া হয়। কিছু দিন পর দেবর্ষিকে হাওড়ায় ডেকে ভুয়ো সাইটে তাঁর নাম দেখায় চাকরি-প্রাপকদের তালিকায়। এ বার আরও ১ লক্ষ টাকা, অ্যাডমিট কার্ড, মার্কশিট চায় সুজয়। জানায়, মেডিক্যাল পরীক্ষা হবে। ফিরে নিজের কাফেতে ফের ওই নামের তালিকা দেখতে গিয়েই আসল ও নকল সাইটের বিষয়টি নজরে আসে দেবর্ষির। বোঝেন প্রতারিত হয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE