Advertisement
E-Paper

রাজনীতির রোষে পুড়ল ৩০টি বাড়ি, নিগ্রহ পুলিশকে

ভোট-পরবর্তী হিংসায় বুধবার অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠল বসিরহাট। দুপুর থেকে দফায় দফায় অশান্তির আগুনে পুড়ল সিপিএম এবং তৃণমূল দু’পক্ষের অন্তত ৩০টি বাড়ি। ভাঙচুর-লুঠপাট চালানো হল আরও কিছু বাড়ি-দোকানে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৬ ০৪:২০
ভোট পরবর্তী হিংসায় বুধবার উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বসিরহাটের পানিগোবরা।

ভোট পরবর্তী হিংসায় বুধবার উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বসিরহাটের পানিগোবরা।

ভোট-পরবর্তী হিংসায় বুধবার অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠল বসিরহাট। দুপুর থেকে দফায় দফায় অশান্তির আগুনে পুড়ল সিপিএম এবং তৃণমূল দু’পক্ষের অন্তত ৩০টি বাড়ি। ভাঙচুর-লুঠপাট চালানো হল আরও কিছু বাড়ি-দোকানে। ঘরছাড়া হতে হল অন্তত ২৫০ জনকে। প্রহৃত হন বসিরহাট উত্তর কেন্দ্রের প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক এটিএম আব্দুল্লা রনি-সহ অন্তত ২৫ জন। গোলমাল থামাতে গিয়ে নিগৃহীত হতে হয় বসিরহাট থানার আইসি তপন মিশ্র-সহ কয়েক জন পুলিশকর্মীকে। তপনবাবুকে বসিরহাট জেলা হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করানো হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, গোলমালে গুলি চলে। বোমাবাজিও হয়। তবে, তাতে কেউ হতাহত হননি।

পুলিশ জানায়, পানিগোবরা গ্রামে ওই গোলমালে জড়িত সন্দেহে ২২ জনকে আটক করা হয়েছে। এলাকায় পুলিশি টহল চলছে।

পানিগোবরা এলাকাটি বসিরহাট উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রে পড়ে। সেখানে জয়ী হয়েছেন জোটপ্রার্থী সিপিএমের রফিকুল ইসলাম। এক সপ্তাহ আগে ওই গ্রামের উত্তরপাড়ায় একটি মোটরবাইকের সঙ্গে যন্ত্রচালিত ভ্যানের ধাক্কা লাগে। দুই চালক দু’টি দলের সমর্থক হওয়ায় ঘটনাটি নিয়ে রাজনৈতিক চাপান-উতোর চলছিলই। মীমাংসার জন্য দু’পক্ষ বুধবার সালিশি ডেকেছিল। এ দিনই আবার দলের নিষেধ অগ্রাহ্য করে রফিকুলের সমর্থনে ওই এলাকায় বিজয়-মিছিলের তোড়জোড় করছিলেন সিপিএম কর্মীরা। মিছিলের শুরুতেই সিপিএম সমর্থকেরা কয়েক জন তৃণমূল কর্মীকে মারধর করেন বলে অভিযোগ। এর পরেই শুরু হয় গোলমাল।

পুলিশ সূত্রের খবর, গোলমালের খবর পেয়ে কয়েক জন দলীয় কর্মীকে নিয়ে ঘটনাস্থলে যান প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক এটিএম আবদুল্লা রনি। সিপিএমের মিছিল থেকে তাঁর পথ আটকানো হয়। এ নিয়ে দু’পক্ষের বচসা বাধে। তার মধ্যেই মিছিল থেকে রনি-সহ কয়েক জনকে বাঁশ-উইকেট দিয়ে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। সিপিএমের পাল্টা অভিযোগ, রনি-সহ তৃণমূলের কয়েক জন মিছিল লক্ষ করে গুলি ছোড়ে, দলীয় কর্মীদের বাড়িতে হামলা চালায়। তখন স্থানীয় মহিলারাই রনি ও তাঁর সঙ্গীদের ধরে মারধর করেন।

গোলমাল এখানেই থেমে থাকেনি। তা আরও ছড়ায়। দু’পক্ষের অন্তত ৩০টি বাড়িতে আগুন ধরানো হয়। তৃণমূল কর্মীরা টাকি রোডের বিভিন্ন জায়গায় গাছের গুঁড়ি ফেলে এবং টায়ারে আগুন ধরিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। বিক্ষোভকারীদের সরাতে গিয়ে নিগৃহীত হন বসিরহাট থানার আইসি-সহ কয়েক জন পুলিশকর্মী। র‌্যাফ গিয়ে পরিস্থিতি সামলায়।

রনিকে বারাসত হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। তাঁর দাবি, ‘‘কয়েকদিন ধরেই ওই গ্রামে তৃণমূল কর্মীদের মারধর করা হচ্ছে শুনে গিয়েছিলাম। তখনই সিপিএমের মিছিল থেকে হামলা হল।’’ পরে হাসপাতালে গিয়ে বসিরহাটের সাংসদ ইদ্রিশ আলি অভিযোগ করেন, ‘‘রনিকে দা দিয়ে খুনের চক্রান্ত করা হয়েছিল। তিনি সরে যাওয়ায় দায়ের কোপ পড়ে আমাদের এক দলীয় কর্মীর মাথায়।’’

পরে জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘আমাদের প্রার্থী ওই জায়গায় হেরে গিয়েছেন এটা ঠিক। তাই বলে এ ভাবে হামলা করবে সিপিএম? ভদ্রতার একটা সীমা রয়েছে। সিপিএম যদি মনে করে লাল চোখ দেখাবে, তা হলে আমরাও প্রতিরোধ করতে বাধ্য হব।’’ আজ, বৃহস্পতিবার বিকেলে পানিগোবরা গ্রামে দলের তরফে একটি প্রতিনিধি দল যাবে বলে জানান জ্যোতিপ্রিয়বাবু।


পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ। বুধবার বসিরহাটে।

পক্ষান্তরে, গোলমালের সব দায় তৃণমূলের ঘাড়েই চাপিয়েছেন সিপিএম বিধায়ক। তাঁর অভিযোগ, ‘‘রনিরা এসে হামলা না করলে এই অশান্তি হতো না। তৃণমূলের জন্য এখানে গণতন্ত্র বিপন্ন।’’ দলের পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ওখানে গোলমালের কথা শুনেছি। আমাদের পার্টি অফিসে হামলা হয়েছে। তবে, বিশদে জানি না। খোঁজ না নিয়ে বলতে পারব না।’’

ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়।

Police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy