Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
PM-YUVA

কেন্দ্রীয় প্রকল্পের অর্থে গবেষণা ও বইপ্রকাশ, তিরিশেই ‘লেখক’ হলেন বাংলার চার

দেশের ৭৫ জন যুবক-যুবতীকে গবেষণার জন্য অর্থ ও প্রশিক্ষণ দিয়েছে কেন্দ্র। বিভিন্ন ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে তাঁদের বই। তার মধ্যেই রয়েছেন বাংলার চার ছেলেমেয়ে।

কেন্দ্রের এই প্রকল্পে গবেষণার সঙ্গে বইপ্রকাশেরও সুযোগ রয়েছে।

কেন্দ্রের এই প্রকল্পে গবেষণার সঙ্গে বইপ্রকাশেরও সুযোগ রয়েছে। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২৩ ০৮:৫৮
Share: Save:

কেন্দ্রীয় সরকার যুব প্রতিভাদের নিজের পছন্দের বিষয়ে বই লেখার সুযোগ করে দিতে দু’বছর আগেই একটি প্রকল্প নিয়ে এসেছে। বিষয় নির্বাচিত হলে ৫০ হাজার টাকা করে ছ’মাস গবেষণা বৃত্তি ছাড়াও বইপ্রকাশের সুযোগ করে দেয়। সেই সুযোগ নিয়ে দেশের ৭৫ জনে যুবক-যুবতীর বইপ্রকাশ হয়েছে সম্প্রতি। আর তার মধ্যে রয়েছেন বাংলারও কয়েক জন। নিজেদের খুশির কথা নিয়ে আরও অনেকের এই সুযোগের কথা একস্বরে বললেন, মৌলি, সুস্মিতা, রাংকিনী, সৌহার্দ্যরা। সকলেরই বয়স ৩০-এর মধ্যে। এটা অন্যতম শর্ত ‘পিএম যুবা মেন্টরশিপ’ প্রকল্পের।

২০২১ সালে এই প্রকল্পের জন্য আবেদন করতে হয়েছিল। এর পরে প্রশিক্ষণ এবং গবেষণা। বই লেখার খুঁটিনাটি শিখে নেওয়ার পরে ওঁরা লিখেও ফেলেন। দুই মলাটে বন্দি হয়ে সেই বই প্রকাশ করেছে ন্যাশনাল বুক ট্রাস্ট। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্পের মধ্যেই বইপ্রকাশের কথা রয়েছে। এমনকি বই বিক্রির পরে রয়্যালিটি বাবদ টাকাও পাবেন যুব লেখকরা।

বনগাঁর মেয়ে মৌলি রায়। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামের এক নিভৃতচারিণী চারুপ্রভা সেনগুপ্তের জীবন। ‘আগুনপাখি চারুপ্রভা’ নামে বই প্রকাশিত হয়েছে। খুবই খুশি তিনি। মৌলি বলেন, ‘‘অনেক দিনের ইচ্ছা ছিল। সেই কাজ করতে পেরেছি, এটাই আনন্দের। আমার বইতে রয়েছে, গ্রামবাংলার সাধারণ এক নারীর অসাধারণ ভাবে এগিয়ে আসার জীবনগাথা। এ গাথার পরতে পরতে রয়েছে লিঙ্গবৈষম্য, বহুকালের পুরুষতান্ত্রিকতায় নারী-নিপীড়ন, স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ, অন্দরমহলে নারীকে দমিয়ে রাখার দুঃখকথা। রয়েছে সেই প্রেক্ষাপটে আটপৌরে গৃহবধূর স্বদেশ মুক্তির যুদ্ধক্ষেত্রে আত্ম-উৎসর্গের চালচিত্র।’’

নিজের পছন্দের কাজ করতে পারে নিয়ে খুশি বাঁকুড়ার মেয়ে রাংকিনী হাঁসদা। ছোট থেকেই কবিতা লেখেন রাংকিনী। সাঁওতালি ভাষায় তাঁর বই ‘হুলগারিয়া রুকনি হাঁসদা’ প্রকাশিত হয়েছে। রাংকিনী বলেন, ‘‘হুল বিদ্রোহে যোগ দেওয়া অনেক নারীর কথা শোনা গেলেও রুকনি হাঁসদার নাম সে ভাবে আলোচিত নয়। তিনি হুল বিদ্রোহে পুরুষের বেশে মৃত্যু পর্যন্ত লড়াই করেছিলেন।’’ এক গল্প শোনালেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী রাংকিনী। তিনি বলেন, ‘‘বিদ্রোহী রুকনিকে নিয়ে আমার বাবার লেখা নাটকে আমার মায়ের অভিনয় আমার মনে খুব ভাল ভাবে গেঁথে গিয়েছিল ছোটবেলায়। লড়াইয়ের ময়দানে ইংরেজ সাহেবদের থেকে গোপন তথ্য জোগাড় করতেন, আহতদের উনি মাতৃস্নেহে সেবা করতেন এবং সিধু-কানহুদের জন্য নিশুতি রাতে খাবার নিয়ে যেতেন। এই প্রকল্পের কথা জানতে পেরে আমি আর কিছু না ভেবে এই বিদ্রোহী নারী রুকনি হাঁসদাকে কাজ করার প্রস্তাব দিই। নির্বাচিত হয়ে যাই। এখন বইও প্রকাশিত। খুব ভাল লাগছে।’’

বইপ্রকাশের পরে খুশি মৌলি, রাংকিনী, সৌহার্দ্য, সুস্মিতা।

বইপ্রকাশের পরে খুশি মৌলি, রাংকিনী, সৌহার্দ্য, সুস্মিতা। — নিজস্ব চিত্র।

মেদিনীপুর শহরের সৌহার্দ্য দে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পরে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার সুযোগ পান। ইতিহাসের তরুণ গবেষক বই লিখেছেন ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের প্রেক্ষাপটে। অযোধ্যার অধীনস্থ কালাকনকরের বিশেন রাজপুত বংশীয় তালুকদার রাজকুমার লালপ্রতাপ সিংহকে নিয়ে কাজ করেছেন। ইংরেজিতে লেখা বইয়ের নাম ‘প্রতাপজং: দ্য আলটিমেট স্যাক্রিফাইস’। সৌহার্দ্য বলেন, ‘‘ছোট থেকেই আমি ডাকটিকিট সংগ্রহ করি। সেটা করতে করতেই লালপ্রতাপ নামটির সঙ্গে পরিচয়। স্ট্যাম্প সিরিজের অন্যান্য স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নিয়ে লেখা বই পেলেও লালপ্রতাপকে নিয়ে তেমন কিছু পাইনি। স্বাধীনতার ৭৫ বছরে শুরু হওয়া কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্পে তাই ওঁর কথা মাথায় আসে। সুযোগও পেয়ে যাই। গবেষণটা করতে পেরে খুবই ভাল লাগছে।’’

ঝাড়গ্রামের ভূমিকন্যা হলেও কর্মসূত্রে কল্যাণীতে থাকেন সুস্মিতা হালদার। পড়ান হুগলির সরকারি আইন কলেজে। পেশা আইন শিক্ষা হলেও নেশায় রয়েছে ইতিহাস চর্চা। কেন্দ্রীয় প্রকল্পে সুযোগ পেয়ে সুস্মিতা কাজ করেছেন লায়েক বিদ্রোহ নিয়ে। ঊনবিংশ শতকের গোড়ার দিকে পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতা ও আশপাশের অঞ্চলের (তৎকালীন বগড়ি পরগনা) লায়েক বিদ্রোহের কাহিনি নিয়েই সুস্মিতার বই ‘লায়েক-গাথার নায়ক-খোঁজে’। যে অঞ্চল নিয়ে কাজ করেছেন সেখানকার ঐতিহ্যের স্বীকৃতির দাবিতেও কাজ করতে চান সুস্মিতা। বলেন, ‘‘আমি লায়েক বিদ্রোহ নিয়ে আরও কাজ করতে চাই। শুরুও করে দিয়েছি। সেই সঙ্গে গড়বেতা যাতে হেরিটেজ মর্যাদা পায় সেই আবেদনও করেছি। চাই বাংলার ইতিহাস আঞ্চলিকতার গণ্ডি পেরিয়ে যেন জাতীয় স্তরের ইতিহাসে জায়গা করে নেয়।’’

সুস্মিতার সেই ইচ্ছাপূরণও সম্ভব কেন্দ্রের এই প্রকল্পে। কারণ, প্রকাশিত সবক’টি বই-ই বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদের প্রস্তাব রয়েছে প্রকল্পে। এই প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের আবেদনের সময় অবশ্য পার হয়ে গিয়েছে। চলতি মাসেই জানা যাবে কারা গবেষণার জন্য নির্বাচিত হলেন। এর পরে গবেষণার প্রশিক্ষণ ও বই লেখা। প্রকাশিত হবে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Narendra Modi Book History
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE