Advertisement
E-Paper

ফ্রিজ়ারের অভাব! ছত্তীসগঢ়ের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ২৪ ঘণ্টা ধরে স্ট্রেচারে পড়ে থেকে পচন ধরল দুর্ঘটনায় নিহত পাঁচ বঙ্গবাসীর মৃতদেহে

গত রবিবার ছত্তীসগঢ়ে এসইউভি-র সঙ্গে একটি ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। তাতে মৃত্যু হয় বাংলার পাঁচ জনের। জখম হন আরও পাঁচ যাত্রী। সংঘর্ষের অভিঘাত এতটাই ছিল যে, দুমড়েমুচড়ে যাওয়া গাড়ি থেকে তাঁদের বার করতেই হিমশিম খান উদ্ধারকারীরা।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২৫ ১৯:৫৪
Chhattisgarh Road Accident Case

—প্রতীকী চিত্র।

ফ্রিজ়ারের অভাবে দেহ সংরক্ষণ করা যায়নি। পথদুর্ঘটনায় নিহত বাংলার পাঁচ বাসিন্দার দেহ তাই পড়েছিল ছত্তীসগঢ়ের স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামনে স্ট্রেচারেই। পরে একটি দেহের ‘ভাগ্যে’ বরফ জুটলেও বাকি চারটি দেহ পড়েছিল ২৪ ঘণ্টা। যা নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। দেহ নিতে গিয়ে ছত্তীসগঢ় রাজ্যের স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে নিহতদের পরিবার।

পুজোর ছুটিতে হইহই করে বেড়াতে বেরিয়েছিলেন একটি স্কুলের কয়েক জন শিক্ষিকা এবং তাঁদের পরিবার। তাঁরা একসঙ্গে একটা সময়ে হুগলির ডানকুনির একটি স্কুলে সহকর্মী ছিলেন। মধ্যপ্রদেশের কান্হা‌ জাতীয় উদ্যান ঘুরে গত রবিবার ছত্তীসগঢ়ের দিকে যাচ্ছিলেন তাঁরা। বিলাসপুর স্টেশন যাওয়ার পথে অঘটন।

জাতীয় সড়কে তাঁদের এসইউভি গাড়ির সঙ্গে একটি ট্রাকের সংঘর্ষ হয়। মৃত্যু হয় পাঁচ জনের। জখম হন আরও পাঁচ জন। সংঘর্ষের অভিঘাত এতটাই ছিল যে, দুমড়েমুচড়ে যাওয়া গাড়ি থেকে তাঁদের বার করতেই হিমশিম খান উদ্ধারকারীরা। অকুস্থলেই মারা গিয়েছিলেন দু’জন। বাকি তিন জন চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। কিন্তু ফ্রিজ়ারের অভাবে কারও দেহ সংরক্ষিত যায়নি বলে অভিযোগ। বদলা কমিউনিটি হেল্‌থ সেন্টারের বাইরে স্ট্রেচারে দীর্ঘ ক্ষণ ধরে পড়ে ছিল পাঁচ জনের দেহ। পরে একটি ফ্রিজ়ার ফাঁকা মেলে। তাতে নিহত গাড়িচালকের দেহ সংরক্ষিত হয়। কিন্তু বাকি চারটি মৃতদেহ স্ট্রেচারেই পড়ে থাকে। এই ভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটে। দেহে পচন ধরে।

কলকাতা থেকে দেহ নিতে গিয়ে চমকে গিয়েছেন মৃতের আত্মীয়েরা। দু’টি দেহে এতটাই পচন ধরে গিয়েছিল যে বাড়ি ফেরানোর ‘ঝুঁকি’ নেওয়া যায়নি। ছত্তীসগঢ়ের কাওয়ারধাতেই শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। বাকি তিনটি দেহ নিয়ে আসা হয়েছে।

জানা গিয়েছে, মৃতদের নাম অন্বেষা সোম। কলকাতার গড়িয়াহাটের বাসিন্দা তিনি। মৃত্যু হয়েছে যাদবপুরের বাসিন্দা পরমা ভট্টাচার্য এবং তাঁর ১১ বছরের মেয়ে অদ্রিজার, কল্যাণীর বাসিন্দা পপি বর্মা এবং তাঁদের গাড়িচালকের। আহতদের মধ্যে আছেন পরমার বড় মেয়ে। তাঁর চিকিৎসা চলছে রায়পুর এমসে। মুনমুন বাগ ও তাঁর ছেলে অর্ণদ্বীপ দাসের চিকিৎসা চলছে হরাইজন হাসপাতালে। অন্বেষার মেয়ে ছিলেন দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়িতে। তিনি এখন সঙ্কটমুক্ত বলে জানা গিয়েছে।

ছত্তীসগ়ঢ়ের হাসপাতালের অব্যবস্থা নিয়ে সরব হয়েছেন হুগলির শিক্ষকেরা। তাঁরা জানিয়েছেন, ডানকুনি শ্রীরামকৃষ্ণ বিদ্যাশ্রম উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন কয়েক জন শিক্ষিকা। সেই সূত্রেই পরিবার-সহ বেড়াতে গিয়েছিলেন পুজোয়। শিক্ষক সংগঠনের নেতা শুভেন্দু গড়াই বলেন, ‘‘ফ্রিজ়ার না থাকায় মৃতদেহ বাইরে ফেলে রাখা হয়েছিল। ফলে দেহে পচন ধরে। দুর্গন্ধ বেরোতে থাকে। বাধ্য হয়ে দু’জনের দেহ ওখানেই দাহ করে আসেন পরিবারের সদস্যেরা। এ রকম পরিস্থিতির নিন্দা জানানোর ভাষা নেই।’’

এ নিয়ে বিতর্কের মুখে ছত্তীসগঢ়ের মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা (সিএমএইচও) দেবেন্দ্র পুরের ব্যাখ্যা, ‘‘একটি দেহ ফ্রিজ়ারে ছিল। বাকি চারটি দেহ স্ট্রেচারে থাকলেও বরফ দিয়ে রাখা হয়েছিল। সোমবার তিনটি দেহের ময়নাতদন্ত হয়। পরিবারের হাতে দেহ তুলে দেওয়া হয়। বাকি দু’জনকেই এখানেই দাহ করা হয়েছে।’’ কিন্তু জনবহুল এলাকার স্বাস্থ্যকেন্দ্র, সেখানে পাঁচটি ফ্রিজ়ারের ব্যবস্থা করা গেল না? জবাব মেলেনি।

Accidental Deaths Chattisgarh West Bengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy