Advertisement
০৮ মে ২০২৪
Karnataka Assembly Election

কর্নাটক বিপর্যয়ের ৫টি কারণ রাজ্যে বিজেপির কাছেও চিন্তার, লোকসভা ভোটে কী হবে বাংলায়?

কর্ণাটকে বিজেপির ভরাডুবিতে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির জন্যও যথেষ্ট চিন্তার কারণ রয়েছে। অনেক বিষয়েই এমন মিল রয়েছে যা নিয়ে চিন্তা বাড়ছে গেরুয়া শিবিরের কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য নেতাদের।

West Bengal BJP is worried after result of Karnataka assembly election

চিন্তা বাড়ল সুকান্ত-শুভেন্দুদের। — ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০২৩ ১৫:১৫
Share: Save:

কর্ণাটকের ফলের সঙ্গে অনেকেই তুলনা করছেন পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের ফলের। কারণ, এই রাজ্যেও বিজেপি ‘ডাবল ইঞ্জিন’ সরকারের স্লোগান তুলে ২০০ পার করতে চেয়েছিল। কিন্তু থমকে যেতে হয় ৭৭ আসনে। কর্নাটকেও একই পরিস্থিতি। ফারাক শুধু একটাই যে, দক্ষিণের একমাত্র রাজ্যে ক্ষমতায় থেকেও ক্ষমতা ধরে রাখতে পারল না বিজেপি। পশ্চিমবঙ্গে পরবর্তী বিধানসভা নির্বাচনের এখনও অনেকটাই দেরি রয়েছে। কিন্তু সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। আর বিজেপির প্রধান লক্ষ্য ২০২৪ সালের লোকসভা ভোট। কর্নাটক নির্বাচনে পরাজয় পাঁচটি কারণে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির কাছেও চিন্তার। প্রকাশ্যে কেউ কিছু না বললেও দলের অন্দরে তা নিয়ে আলোচনা চলছে।

রাজ্যে মুখহীন বিজেপি

কর্ণাটকের নির্বাচনের হারের কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে দেখা গিয়েছে, সেখানে রাজ্যে নেতাদের মধ্যে কোনও বড় মুখ ছিল না। ইয়েদুরাপ্পাকে সরিয়ে বিজেপি বাসবরাজ বোম্মাইকে মুখ্যমন্ত্রী করেছিল। কিন্তু এই নির্বাচনে বোম্মাইকে সে ভাবে মুখ হিসাবে তুলে ধরা হয়নি। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। গত বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ তো বটেই আরও হাফ ডজন মুখ ছিলেন। কিন্তু কোনও মুখকেই সামনে রাখেনি বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।

কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উপরে নির্ভরতা

কর্নাটকের ভোট প্রচারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ অনেক সময় দিলেও তার বিশেষ ডিভিডেন্ড বিজেপি তুলতে পারেনি। বাংলাতেও বিজেপির লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি সেই শাহ নির্ভর। সঙ্গে রয়েছেন সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা। রাজ্যে যে সব আসন বিজেপি টার্গেট করেছে, সেগুলির দায়িত্ব নড্ডা ও শাহ ভাগ করে নিয়েছেন। কিন্তু রাজ্য নেতৃত্বের গুরুত্ব কমিয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা কি বাংলায় সাফল্য পাবেন? কর্নাটক ভোটের ফলাফল নতুন করে এমন প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।

গুরুত্ব দেওয়া হয়নি অনেক নেতাকে

কর্নাটকের নির্বাচনে বিজেপি শিবিরে এমন ক্ষোভ ছিল যে, অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতাকেই সে ভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। তার মধ্যে অন্যতম প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ইয়েদুরাপ্পা। দক্ষিণের এই রাজ্যে গেরুয়া শিবিরের উত্থানে বড় ভূমিকা ছিল বিজেপির। লিঙ্গায়েত সম্প্রদায়ের অনেক নেতাকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। এমন পরিবেশ বাংলাতেও। রাজ্য বিজেপির অনেকেই মনে করেন বাংলার গেরুয়া শিবিরের উত্থানের পিছনে সবচেয়ে বেশি অবদান যাঁর রয়েছে, সেই দিলীপ ঘোষ এখন ‘গুরুত্বহীন’ পদে। সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি করা হলেও প্রাক্তন রাজ্য সভাপতিকে সে ভাবে ‘ব্যবহার’ করা হচ্ছে না আগামীর লক্ষ্যে। এমন আরও অনেক নেতাই রয়েছেন, যাঁরা বিজেপির বর্তমান রাজ্য নেতৃত্বের চোখে ‘ব্রাত্য’ হয়ে রয়েছেন।

গোষ্ঠী ভোট ধরে রাখতে না পারা

কর্নাটকে বিজেপির প্রচারে বিভিন্ন গোষ্ঠী ভোট ঝুলিতে আনার উপরে জোর দেওয়া হয়েছে। লিঙ্গায়েত তো বটেই সেই সঙ্গে দলিত, আদিবাসী-সহ অন্যান্য পিছিয়ে থাকা সম্প্রদায়ের ভোট টানার চেষ্টা হয়েছে। গোটা দেশেই এই ভোট অতীতে বিজেপিকে সুবিধা দিয়েছে। বাংলাতেও মতুয়া, রাজবংশী, দলিত, আদিবাসী ভোটকে বিজেপি নিজেদের বড় সম্পদ বলে মনে করে। কিন্তু সেই ভোট যদি সরে যায় তবে কেমন ফল হতে পারে, তার নিদর্শন মিলেছে কর্নাটকের ফলে। সুতরাং, বাংলায় বিভিন্ন গোষ্ঠী ভোট ধরে রাখার চাপ নিতেই হবে রাজ্য বিজেপিকে।

হিন্দুত্বের স্লোগান কাজে দেয়নি

কর্নাটকে বিজেপি ভোটের প্রচারে হালাল, হিজাব, আজান-সহ এমন বেশ কিছু বিষয়ে সরব হয়েছে যার ফলে ধর্মীয় উস্কানির অভিযোগ উঠেছে। হনুমানকে ভগবানের রূপ দিয়ে স্লোগান তুলেছে গেরুয়া শিবির। অন্য দিকে, কংগ্রেস বজরঙ্গ দল নিষিদ্ধ করার দাবি তুলেছে। এর পরে যে ফলাফল দেখা গিয়েছে, তাতে একটা বিষয় স্পষ্ট— কর্ণাটকের বড় অংশের ভোটার এই রাজনীতিকে গ্রহণ করেনি। ভোটের প্রচারে হিন্দুত্বের আবেগ ছুঁতে বিতর্কিত ছবি ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ নিয়ে সরব হয়েছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু তাতেও ‘কর্নাটক স্টোরি’ বদলানো যায়নি। বাংলাতেও বিজেপির বিরুদ্ধে ধর্মীয় উস্কানির অভিযোগ রয়েছে। রামনবমী, হনুমান জয়ন্তী নিয়ে রাজনীতির অভিযোগ রয়েছে। সেটা আদৌ আগামী লোকসভা নির্বাচনের জন্য ভাল হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়ে রইল কর্ণাটকের ভোটে।

রাজ্য বিজেপি অবশ্য প্রকাশ্যে এই সব বিষয়কে গুরুত্ব দিতে চাইছেন না। তাঁদের বক্তব্য, বাংলায় যে পরিমাণ দুর্নীতি প্রকাশ্যে এসেছে তাতে, কোনও কিছুই তৃণমূলের পরাজয় আটকাতে পারবে না। আর কংগ্রেস বা সিপিএম এখন ধর্তব্যের মধ্যেই পড়ে না। রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘একটা সর্বভারতীয় দলের কাছে এটা টি টোয়েন্টি ম্যাচ ছিল। তাতে হেরেছে। আর লোকসভা নির্বাচনের এক দিনের ম্যাচও নয়, পাঁচ দিনের টেস্ট। তৃণমূল তো রাজনীতিকে খেলা মনে করে। ওরা খেলুক। ২০২৪ সাল পর্যন্ত তৃণমূল দলটা থাকবে কি না সেটাই তো প্রশ্ন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Karnataka Assembly Election BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE