Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
ত্রাণ নিয়ে বাড়ছে ক্ষোভ

৮ লক্ষ দুর্গত, ত্রিপল মাত্র ১৯ হাজার

জলাধারের ছাড়া জল এবং ভারী বৃষ্টির জোড়া ফলায় পশ্চিম মেদিনীপুরের একাংশে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। বিপন্ন বহু মানুষ। কিন্তু দুর্গতদের অনেকেই এখনও পর্যাপ্ত সরকারি ত্রাণ পায়নি বলে অভিযোগ উঠল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন, দুর্গতদের ত্রাণের ব্যবস্থা রাজ্য সরকারই করবে। ত্রাণ বিলি ঘিরে কেউ যেন রাজনীতি না করেন, সেই আবেদনও রেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

ডেবরার আসাড়িতে ত্রাণ বিলি করছেন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়।

ডেবরার আসাড়িতে ত্রাণ বিলি করছেন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০১৫ ০২:২৯
Share: Save:

জলাধারের ছাড়া জল এবং ভারী বৃষ্টির জোড়া ফলায় পশ্চিম মেদিনীপুরের একাংশে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। বিপন্ন বহু মানুষ। কিন্তু দুর্গতদের অনেকেই এখনও পর্যাপ্ত সরকারি ত্রাণ পায়নি বলে অভিযোগ উঠল।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন, দুর্গতদের ত্রাণের ব্যবস্থা রাজ্য সরকারই করবে। ত্রাণ বিলি ঘিরে কেউ যেন রাজনীতি না করেন, সেই আবেদনও রেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী। অথচ জেলায় সরকারি ত্রাণই অপর্যাপ্ত। ঘাটাল, দাসপুর, চন্দ্রকোনা থেকে কেশপুর, পিংলার অনেক জলমগ্ন এলাকাতেই ত্রিপলটুকু পর্যন্ত পৌঁছয়নি। রাজ্য থেকে পর্যাপ্ত ত্রিপল আসেনি বলেই এই পরিস্থিতি বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর।

ত্রাণ নিয়ে দুর্গতদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে বলে মানতে নারাজ পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। ঘাটাল, ডেবরার জলমগ্ন এলাকা ঘুরে দেখে তিনি বলেন, “সরকারি ভাবে যে ত্রাণ দেওয়া হয়েছে তাতে মানুষ সন্তুষ্ট না- হলেও খুশি! যথেষ্ট ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। ত্রাণ সামগ্রীর প্যাকেট বিলির কাজ শুরু হয়েছে।” তাঁর কথায়, “বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শনে এলে মন্ত্রীদের ঘিরে সাধারণত বিক্ষোভ হয়। এদিন কোথাও তেমন পরিস্থিতি হয়নি। অনেকটা রাস্তা হেঁটেছি। কোথাও মানুষের ক্ষোভ- অসন্তোষ দেখিনি। এটা উত্‌সাহের কথা!” জেলায় কি ত্রিপল কম এসেছে? সুব্রতবাবুর জবাব, “আমি ৪- ৫ জায়গায় ত্রিপল দিয়ে এলাম। কোথাও কোথাও সামান্য ফাঁকফোকর থেকে থাকতে পারে। দেখে নিচ্ছি। দুর্গত মানুষের কাছে পর্যাপ্ত ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার সব রকম চেষ্টা করছে প্রশাসন।”

পরিসংখ্যান বলছে, দুর্যোগে জেলার ৩১৮৯টি গ্রাম কম-বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি ৬৪৫১টি আর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২৯১৪০টি বাড়ি। কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা যেখানে ৮ লক্ষ ৬০ হাজার ৫১৭, সেখানে ত্রাণের ত্রিপল এসেছে মাত্র ১০ হাজার। আর জেলায় ৯ হাজার ত্রিপল মজুত ছিল। এই ১৯ হাজার ত্রিপলের মধ্যে যে সব বিলি হয়ে গিয়েছে, তাও নয়। কয়েকটি ব্লকে রবিবারই ত্রিপল পৌঁছেছে। দিন কয়েক আগে জেলা থেকে ১২০০ ত্রাণ সামগ্রীর প্যাকেট কিছু এলাকায় পাঠানো হয়েছিল। সেই সব প্যাকেটও এখনও বিলি হয়নি। ত্রাণ না পাওয়ায় দুর্গতদের মধ্যে বাড়ছে ক্ষোভ। জলমগ্ন ডেবরার ত্রিলোচনপুরের বাসিন্দা ভোলানাথ পালের কথায়, ‘‘শনিবার থেকে রাস্তা ডুবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। কিন্তু এখনও একটা ত্রিপল পর্যন্ত পাইনি। নৌকোর ব্যবস্থাও করা হয়নি।’’


আনন্দপুরের পড়াকাটায় তমাল নদীর জলে ভেসে গিয়েছে
প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় নির্মীয়মাণ সড়ক । ছবি: কিংশুক আইচ।

আজ, সোমবার আরও ১০ হাজার ত্রিপল জেলায় আসতে পারে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর। ইতিমধ্যে যে ১৯ হাজার ত্রিপল ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর জন্য পাঠানো হয়েছে, তার মধ্যে সবথেকে বেশি ত্রিপল পাঠানো হয়েছে ঘাটাল মহকুমাতেই, ৬৫০০। ঝাড়গ্রাম মহকুমায় ৩০০০। জেলা প্রশাসনের বক্তব্য, জেলার চারটি মহকুমার মধ্যে ঘাটালের পরিস্থিতিই সব থেকে খারাপ। তাই ঘাটালে বেশি ত্রিপল পাঠানো হয়েছে। ত্রাণের জন্য জেলা থেকে দেওয়া হয়েছে ৮০০ শাড়ি, ৭৫০ ধুতি, ১২০০ লুঙ্গি, ৩১ মেট্রিক টন চাল,
৭০ হাজার পাউচ জলের পাউচ। তা-ও পর্যাপ্ত নয়।

ত্রাণ নিয়ে সমস্যা যে দেখা দিতে পারে, সেই আশঙ্কা রয়েছে প্রশাসনের শীর্ষস্তরেও। জেলা প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, বানভাসি পরিস্থিতির পর্যালোচনায় রবিবার সকালে বিভিন্ন জেলার প্রশাসনিক আধিকারিকদের নিয়ে ‘ভিডিও কনফারেন্স’ করেন রাজ্যের মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র। মুখ্যসচিবও বুঝিয়ে দেন, ত্রাণ সামগ্রী ফেলে রাখা যাবে না। প্রয়োজন মতো এলাকায় পাঠিয়ে দিতে হবে। জেলার এক প্রশাসনিক আধিকারিকের অবশ্য বক্তব্য, ‘‘ত্রাণ সামগ্রী জেলায় পড়ে থাকছে না। রাজ্য থেকে জেলায় যা পাঠানো হচ্ছে, প্রয়োজন মতো তা ব্লকে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আরও কী কী প্রয়োজন, তা রাজ্যকে জানানোও হয়েছে।’’ ওই আধিকারিকের স্বীকারোক্তি, ‘‘ত্রিপলের চাহিদা থাকেই। সর্বত্র চাহিদা মতো ত্রিপল হয়তো পাঠানো সম্ভব হয়নি।’’


জেলার জলছবি

বিরোধীরাও ত্রাণ বিলি নিয়ে সরব হতে শুরু করেছে। বিজেপির জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘জেলার বহু জায়গায় সরকারি ত্রাণ পৌঁছয়নি। সামান্য যে ক’টি এলাকায় ত্রাণ পৌঁছেছে, সেখানেও নোংরা রাজনীতি হচ্ছে। বেছে বেছে শাসক দলের কর্মী-সমর্থকদের ত্রাণ পাইয়ে দেওয়া হচ্ছে।’’ কংগ্রেসের জেলা সভাপতি বিকাশ ভুঁইয়ার বক্তব্য, ‘‘জেলার একাংশে বন্যা পরিস্থিতি। হাজার হাজার মানুষ বিপন্ন। অথচ, জেলায় সর্বদল বৈঠকই ডাকা হয়নি।’’ জলমগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের কাছে পর্যাপ্ত ত্রাণ পৌঁছনোর দাবি জানিয়েছে সিপিএমও। দলের জেলা সম্পাদক তরুণ রায় বলেন, “জেলার বেশ কিছু এলাকার যোগাযোগ
বিচ্ছিন্ন। প্রশাসনের উচিত, পর্যাপ্ত ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া।’’

জেলা প্রশাসনের অবশ্য দাবি, জলমগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রীই পাঠানো হচ্ছে। তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়ও বলেন, ‘‘প্রশাসন সাধ্যমতো দুর্গতদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত সব এলাকাতেই ত্রাণ বিলি চলছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE