Advertisement
E-Paper

ওরা যে সাজা পেয়েছে সেটাই ঢের, বললেন ভাই

পাকা সড়ক থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা পেরিয়ে ঢুকতে হত গ্রামে। হুগলির ধনেখালির প্রত্যন্ত এই জনপদে সেই সময় বিরোধীদের আওয়াজ প্রায় শোনাই যেত না। ছিল শাসকের হুমকি। সে সবের পরোয়া না করাটাই কাল হয়েছিল সাহেব আলির।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৬ ০১:৩৮
চুঁচুড়া আদালতে সাজাপ্রাপ্তরা।

চুঁচুড়া আদালতে সাজাপ্রাপ্তরা।

পাকা সড়ক থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা পেরিয়ে ঢুকতে হত গ্রামে। হুগলির ধনেখালির প্রত্যন্ত এই জনপদে সেই সময় বিরোধীদের আওয়াজ প্রায় শোনাই যেত না। ছিল শাসকের হুমকি। সে সবের পরোয়া না করাটাই কাল হয়েছিল সাহেব আলির। বর্তমানে রাজ্যে অন্য শাসক দল থাকলেও দেড় যুগ আগের ধনেখালিতে বিরোধী কণ্ঠ বলতে যে প্রায় কিছু ছিল না, দলের কর্মীকে পিটিয়ে মারার ঘটনাই তার প্রমাণ বলে মত তৃণমূল নেতাদের।

১৯৯৮ সালের ১৭ অক্টোবর বছর সাতাশের সাহেব আলিকে প্রকাশ্য দিবালকে রাস্তায় পিটিয়ে মেরে ফেলার সেই ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত ৯ সিপিএম কর্মী-সমর্থকের শুক্রবার সাজা ঘোষণা করেন বিচারক। চুঁচুড়া আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা তথা বিশেষ বিচারক পুলক তিওয়ারি এ দিন ওই ৯ জনের প্রত্যেককে ‘অনিচ্ছাকৃত’ খুনের দায়ে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ২০০০ টাকা করে জরিমানা করেন। জরিমানা অনাদায়ে আরও তিন মাসের কারাবাসের আদেশ দিয়েছেন তিনি।

একসঙ্গে ৯ জন সিপিএম কর্মীর সাজা ঘোষণায় যাতে কোনও অশান্তি না হয় সে জন্য আদালত চত্বরে কড়া পুলিশ পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এদিন আদালতের রায় যেমন শুনতে হাজির ছিলেন মৃত তৃণমূল কর্মী সাহেব আলির পরিবারের সদস্যরা। তেমনই ছিলেন সাজাপ্রাপ্ত সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের পরিবার।

নিহত তৃণমূল কর্মী সাহেব আলির বাবা-মা।

তবে সাহেব আলির খুন যে ‘অনিচ্ছাকৃত’ তা মানতে নারাজ তাঁর পরিবার। সাজা শোনার পর সাহেবের ভাই শেখ রহমত আলির প্রতিক্রিয়া, ‘‘ভেবেছিলাম অনেক বেশি সাজা হবে। তবে বিচারক যা আদেশ দিয়েছেন, তার বিরুদ্ধে কিছু বলার নেই। ওরা যে সাজা পেয়েছে সেটাই অনেক।’’

ধানের মড়াই, পুকুরপাড়ের পাশ দিয়ে পৌঁছনো গেল দশঘড়া গোবিন্দবাটিতে সাহেবের বাড়িতে। দু’টো বাড়ি পরেই বর্ধমান জেলা শুরু। বাড়ির উঠোনে বসেছিলেন সাহেবের বাবা, নবতিপর তহিরুদ্দিন আলি। বিচারকের রায়ের বিষয়ে জানালে ফিরে গেলেন আঠারো বছর আগের সেই দিনে। বলেন, ‘‘দশঘড়া পঞ্চায়েতে তৃণমূলের হয়ে ভোটে দাঁড়িয়েছিল বড় ছেলে সাহেব। সেটা ভাল চোখে দেখেনি তখনকার শাসক দল সিপিএমের নেতারা। মাত্র একটা ভোটে হেরে গিয়োছিল ছেলে। আর তার পরের দিন থেকেই আরও অনেক তৃণমূল কর্মীর মতো গ্রামছাড়া হতে হয় তাকে। আশ্রয় নিয়েছিল গুড়াপে দলীয় পার্টি অফিসে। মাঝেমধ্যে রাতের অন্ধকারে বাড়িতে আসত। ভোর হলেই চলে যেত।’’

পরিবারের লোকজন জানান, সেই বছরের ১৫ অক্টোবর রাতে অসুস্থ দেড় বছরের মেয়েকে দেখতে বাড়ি এসেছিলেন সাহেব।। পরদিন ভোরে বাড়ি থেকে বেরোতে পারেননি। সেই খবরটাই পেয়ে গিয়েছিল সিপিএমের লোকজন। বিকেল তিনটে নাগাদ সাইকেলে দশঘড়ার দিকে যেতেই এক দল সিপিএম নেতা-কর্মী তাঁকে ঘিরে ধরে হাত বেঁধে মারতে থাকে। তহিরুদ্দিন‌ বলেন, ‘‘বিকেলে নমাজ পড়তে গিয়েছিলাম। তখনই খবরটা পাই। দশঘড়ায় এসে দেখি লোকে লোকারণ্য। ছেলেকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছে। পরদিন ছেলে মারা যায়।’’

বৃদ্ধা জানান, ছেলের মৃত্যুর পর থানায় যেতে ভরসা পাননি। লুকিয়ে চুঁচুড়ায় পুলিশ সুপারের অফিসে গিয়ে লিখিত অভিযোগ জমা দেন। পুলিশকর্তার বরাভয় পেয়ে পরে ধনেখালি থানায় অভিযোগ করেন।

ছবি: তাপস ঘোষ ও সুশান্ত সরকার।

Victim TMC worker Murder Jail
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy