অবশেষে বন্দি-দশা কাটল আমির শেখের। বুধবার দিনভর মালদহের কালিয়াচকের এই পরিযায়ী শ্রমিক উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট থানার পুলিশ লক-আপে থাকলেও, রাতে পুলিশ আমিরকে ছেড়ে দিয়েছে বলে জানান তাঁর অন্যতম আইনজীবী সৈকত ঠাকুরতা। পুলিশ পরিবারের হাতে তুলে দেয় তাঁকে। এ দিন দুপুরে সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) ১০২ নম্বর ব্যাটালিয়ন আমিরকে ওই থানার হাতে তুলে দেয়। বিএসএফের দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের জনসংযোগ আধিকারিক নীলোৎপলকুমার পাণ্ডের দাবি, ‘‘বসিরহাট সীমান্ত থেকে বেআইনি ভাবে ভারতে প্রবেশের চেষ্টার সময় ওঁকে ধরা হয়েছিল মঙ্গলবার। পরে বসিরহাট জেলা পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছি।’’ বসিরহাট পুলিশ-জেলার সুপার হোসেন মেহেদি রহমান বলেন, ‘‘আদালতের নির্দেশ মতো পদক্ষেপ করা হয়।’’ আমির বলেন, “বাড়ি ফিরতে পারছি বলে আনন্দ হচ্ছে।”
তিন মাস আগে রাজস্থানে নির্মাণ শ্রমিকের কাজে যান কালিয়াচকের বছর চব্বিশের আমির। অভিযোগ, বাংলাদেশি সন্দেহে রাজস্থানে দু’মাস জেলে আটকে রেখে, বিএসএফের মাধ্যমে তাঁকে ‘পুশ ব্যাক’ করা হয়। বাংলাদেশের পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। সেখানেও জেলে থেকে সদ্য জামিন পান আমির। তাঁকে ফেরাতে কলকাতা হাই কোর্টে তাঁর পরিবারকে মামলা করতে সহায়তা করেন পরিযায়ী শ্রমিক উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান সামিরুল ইসলাম।
মামলায় এ দিনই কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি ঋতব্রতকুমার মিত্রের ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ খতিয়ে দেখে আমিরকে মুক্তি দেবে পুলিশ। কেন্দ্রীয় সরকারের ডেপুটি সলিসিটর জেনারেল রাজদীপ মজুমদার আদালতকে জানান, বাংলাদেশ থেকে ঘোজাডাঙা সীমান্ত দিয়ে ভারতে ঢোকার সময় আমির নিজেকে ভারতীয় বললেও, প্রমাণ দেখাতে পারেননি। তাই তাঁকে থানার হাতে তুলে দেওয়া হয়। আমিরের আর এক আইনজীবী রঘুনাথ চক্রবর্তীর দাবি, রাজস্থানে আমিরের সব নথি কেড়ে নেওয়া হয়েছে। কালিয়াচক থানার তরফেও আমির সম্পর্কে একটি রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে আদালতে। আদালত জানায়, পুলিশ আমিরকে তাঁর বাবার হাতে দিক। পরে, বিএসএফ তাদের অবস্থান জানাবে।
আমিরের বাবা জিয়েম শেখ বলেন, “চাপে পড়ে বিএসএফ ছেলেকে ফেরাল।” রাজ্যসভায় তৃণমূলের সাংসদ সামিরুলের মন্তব্য, ‘‘আমিরকে ফিরিয়ে এনে উদ্ধার দেখানো হচ্ছে।’’ আমিরকে ছাড়াতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক, বিএসএফের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন দক্ষিণ মালদহের কংগ্রেস সাংসদ ইশা খান চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘‘আমিরের সঙ্গে যে অন্যায় হয়েছে, আইনি লড়াই করে বিজেপিকে তার জবাব দেব।” তবে উত্তর মালদহের বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মুর দাবি, “তথ্য-প্রমাণ না থাকলে, বিএসএফ কাউকে পুশ ব্যাক করবে না। আমিরের ক্ষেত্রে তৃণমূল এবং কংগ্রেস শুরু থেকে রাজনীতি করছে। বিএসএফ তাঁকে উদ্ধার করে বিরোধীদের রাজনীতিতে জল ঢেলে দিয়েছে।”
এ দিনই বাংলাদেশি সন্দেহে হাওড়ার রাজাপুরের যুবক মিজানুর মিস্ত্রিকে মহারাষ্ট্রের সান্তাক্রুজ থেকে সেখানকার পুলিশ আটক করেছে বলে খবর। মিজানুর দর্জির কাজ করতে গিয়েছিলেন। রাজাপুর থানা জানিয়েছে, বিষয়টি দেখা হচ্ছে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)