Advertisement
০৬ মে ২০২৪
Group D

পুরুলিয়া থেকে গ্রুপ-ডি ধর্না মঞ্চে দৃষ্টিহীন বৃহস্পতি

পুরুলিয়ার পুঞ্চা থানার নপাড়া গ্রামের দৃষ্টিহীন ওই যুবক, বছর পঁচিশের বৃহস্পতি মাহাতো ২০১৭ সালে লিখিত পরীক্ষা ও ইন্টারভিউয়েও পাশ করেন।

ধর্নামঞ্চে বৃহস্পতি মাহাতো। নিজস্ব চিত্র

ধর্নামঞ্চে বৃহস্পতি মাহাতো। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০২২ ০৭:২৪
Share: Save:

জন্ম থেকে তিনি দৃষ্টিহীন। নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যে পড়াশোনা করে চাকরির বিজ্ঞাপন দেখে গ্রুপ-ডি পদে আবেদন করেছিলেন।

পুরুলিয়ার পুঞ্চা থানার নপাড়া গ্রামের দৃষ্টিহীন ওই যুবক, বছর পঁচিশের বৃহস্পতি মাহাতো ২০১৭ সালে লিখিত পরীক্ষা ও ইন্টারভিউয়েও পাশ করেন। মাতঙ্গিনী হাজরা মূর্তির পাদদেশে গ্রুপ-ডি চাকরিপ্রার্থীদের ধর্না মঞ্চে পুরুলিয়া থেকে তিনিও হাজির। আন্দোলনকারী চাকরিপ্রার্থীদের মতো তাঁরও অভিযোগ, গ্রুপ-ডির লিখিত পরীক্ষা এবং ইন্টারভিউয়ের পরে নাম, রোল নম্বর, পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর ছাড়াই অস্বচ্ছ মেধা তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। যত জন চাকরিপ্রার্থীর নিয়োগ হওয়ার কথা ছিল, তত নিয়োগ হয়নি। উল্টে গ্রুপ-ডি পদে বহু ভুয়ো নিয়োগ হয়েছে। এদিকে গ্রুপ-ডির অপেক্ষমান তালিকায় থাকা অনেক যোগ্য প্রার্থী বঞ্চিত। এই বঞ্চিতদের দ্রুত নিয়োগ দিতে হবে।

গ্রুপ-ডির আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, তাঁরা বাদে ধর্মতলার মাতঙ্গিনী হাজরার পাদদেশে বসে যে সব চাকরিপ্রার্থীরা আন্দোলন করছেন, তাঁরা সবাই শিক্ষক চাকরিপ্রার্থী। রবিবার ওই ধর্না মঞ্চে বসে বৃহস্পতি জানান, ২০১৬ সালে রাজ্য সরকারের দফতরগুলোতে গ্রুপ-ডি পদে ৬০ হাজার নিয়োগ হবে বলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন। তখন গ্রুপ-ডি রিক্রুটমেন্ট বোর্ডও গঠন করা হয়। প্রথম পর্বে অর্থ দফতর ৬ হাজার গ্রুপ-ডি নিয়োগের ছাড়পত্র দেয়। ১৯ লক্ষ পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দেয় ২০১৭ সালে। ২০১৮ সালে পরীক্ষার ফল বেরোয়। ১৮ হাজার পরীক্ষার্থী লিখিত পরীক্ষায় পাশ করেন এবং ইন্টারভিউয়ে ডাক পান। ইন্টারভিউয়ের পরে ২০১৯ সালে যখন মেধা তালিকা প্রকাশিত হয়, তখন দেখা যায় নামহীন, নম্বরহীন, জন্মতারিখ ছাড়াই শুধু আবেদনের (অ্যাপলিকেশন) নম্বর এবং ক্যাটাগরি দিয়ে ৫৪২২ জনের একটি অস্বচ্ছ মেধা তালিকা প্রকাশ করা হল। বাকি ৫৭৮টি পদে কে বা কারা চাকরি পেলেন, তার কোনও হদিস তাঁরা পাননি। বৃহস্পতি বলেন, “আমরা শুধু মেধা তালিকার লিঙ্কে নিজেদের রোল নম্বর ও জন্মতারিখ দিয়ে জানতে পারলাম, আমরা ওয়েটিং লিস্টে রয়েছি। এরকম মেধা তালিকা কেন প্রকাশিত হবে?”

বৃহস্পতির পাশে বসা চাকরিপ্রার্থী কিংশুক চৌধুরির অভিযোগ, অস্বচ্ছ মেধা তালিকার মাধ্যমে প্রচুর ভুয়ো নিয়োগ হয়েছে। তাঁদের মতো যারা অপেক্ষমান তালিকায় আছেন, তাঁরা যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও বঞ্চনার শিকার। ২০১৯ সালে তাঁরা আরটিআই করেন। তখন চিঠি দিয়ে তাঁদের জানানো হয়, খুব শীঘ্রই প্রত্যেক চাকরিপ্রার্থীদের প্রাপ্ত নম্বর, র‌্যাঙ্ক জানানো হবে। কিন্তু এখনও তা জানানো হয়নি। কিংশুক বলেন, “আমাদের একটাই দাবি, ওয়েটিং লিস্টে থাকা আমাদের সকলকে নিয়োগ করতে হবে।”

বৃহস্পতি জানিয়েছেন, তিনি পুরুলিয়ার মানভূম দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধী শিক্ষায়তন থেকে পড়াশোনা করে কলকাতার লাইট হাউজ় ফর দ্য ব্লাইন্ড কলেজে ভর্তি হন। গ্রুপ-ডি পদে লোক নেওয়া হবে দেখে তিনি আবেদন করেন। বৃহস্পতির কথায়, “পুরুলিয়া থেকে রোজ কলকাতার ধর্না মঞ্চের খবর নিতাম। শেষ পর্যন্ত ধর্না মঞ্চে আসা আমাদের এলাকার দুই চাকরিপ্রার্থী বনমালী কুণ্ডু ও রাজু সিংহকে বলি আমিও মঞ্চে যাব। ওদের সঙ্গেই রবিবার ট্রেনে করে এলাম।”

বৃহস্পতির কাছে বসা রাজু বলেন, “ওকে আমরা পুরুলিয়া থেকে এতদূর আসতে বারণ করেছিলাম। কিন্তু ও অনড়।” রাজুর পাশ থেকে বৃহস্পতি বলে ওঠেন, “এই শেষ নয়, নিয়োগের দাবিতে আবার আসব। আমি তো দৃষ্টিহীন। কিন্তু রাজ্য সরকারের কবে চোখ খোলে এখন সেটাই দেখার।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Group D Protest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE