ওড়িশার গঞ্জাম জেলার সরপঞ্চ আরতি দেবী এমবিএ ডিগ্রিধারী। জিতেই এলাকায় মহিলাদের সাক্ষরতা অভিযান করেন তিনি। গুজরাতের ভায়রা জেলার মিনা বেহেন আবার সম্পূর্ণ মহিলা পরিচালিত পঞ্চায়েতের মাথা। যে গ্রামে মেয়েদের ঘরের বাইরে বেরনোর রেওয়াজ ছিল না, বলা হত— ‘মেয়েরা হল সমাজের লেজ, তারা নেতা হতে পারে না’, সেখানেই নজির গড়েছেন তিনি। গ্রামীণ রাজস্থানের চেহারা বদলে দেওয়া মহিলা প্রধান ছবি রাজাওয়াত রাষ্ট্রপুঞ্জে ভাষণ দিয়ে এসেছেন। তাঁর গ্রাম সোদাকে তিনি জল, সৌরবিদ্যুৎ, পাকা রাস্তা, শৌচাগার, এমনকি ব্যাঙ্কও দিয়েছেন।
পশ্চিমবঙ্গেও এমন বহু মহিলা প্রধান প্রতিকূলতার পাহাড় ডিঙিয়ে কাজ করে চলেছেন। রাজ্যে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে অর্ধেক আসনই এখন মহিলা সংরক্ষিত। সাধারণ, তফসিলি জাতি, জনজাতি— সব সম্প্রদায়ের মহিলা প্রতিনিধিত্ব রয়েছে সেখানে। সকলের উন্নয়নেই কাজ করছেন মহিলা প্রধানরা। তাঁদের হাত ধরে পঞ্চায়েত এবং সেই সূত্রে রাজ্য ও দেশের সার্বিক বিকাশও হচ্ছে।
পশ্চিম মেদিনীপুরের গোয়ালতোড়ের জিরাপাড়া পঞ্চায়েতের প্রধান সুখুমণি হাঁসদা গত বারই প্রথম জিতেছেন। নিজে সাইকেলে তিন কিলোমিটার উজিয়ে পঞ্চায়েতে আসেন। সাইকেলেই গ্রামে ঘোরেন। তাঁর এলাকায় রাস্তা, জল, বিদ্যুৎ, উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র, প্রতি পরিবারে শৌচালয় হয়েছে। ঝাড়গ্রামের বাঁধগোড়া পঞ্চায়েতের প্রধান শুভ্রা মান্ডির এলাকাতেও বাড়ি-বাড়ি পানীয় জলের ট্যাপ বসেছে, রাস্তা হচ্ছে। বীরভূমের মহম্মদবাজার পঞ্চায়েতের প্রধান উমা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বাধীন ভাবে কাজ করছেন। তাঁর কথায়, ‘‘প্রতিনিয়ত শেখার ইচ্ছাটা খুব প্রয়োজন। আর চাই, অন্তত লিখতে-পড়তে পারার ক্ষমতা।’’
পূর্ব বর্ধমানের বাঘনাপাড়া পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান শ্রাবন্তী মণ্ডল বছর দেড়েকের শিশুসন্তান, সংসার সামলেই কাজ করছেন। শ্রাবন্তী বলছেন, ‘‘বাচ্চাকে পঞ্চায়েতে নিয়ে গিয়েও পরিষেবা দিয়েছি।’’ মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের সদস্য রাজিব হোসেনের স্ত্রী মেনকা বেগম রাধারঘাট ১ পঞ্চায়েতের দু’বারের প্রধান। সেখানেও উন্নয়নের গতি ভাল। জেলার পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন আধিকারিক রাজর্ষি নাথের দাবি, ‘‘মুর্শিদাবাদে ১২৫টি পঞ্চায়েতের মহিলা প্রধানদের পারফরম্যান্স রিপোর্ট বেশ ভাল। পুরুষ প্রধানদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তাঁরা কাজ করছেন।’’
সর্বত্র অবশ্য মহিলা প্রধানরা এতটা উজ্জ্বল নন। উত্তর দিনাজপুরে প্রায় ৩০টি, শিলিগুড়ি মহকুমার ১০টি পঞ্চায়েতে মহিলা প্রধান। তবে অনেক ক্ষেত্রেই তাঁদের স্বামী, ছেলে বা নিকটাত্মীয় পুরুষ বকলমে পঞ্চায়েত সামলান বলে দাবি। মহিলা প্রধানদের এলাকায় ঠিকাদারদের ‘সিন্ডিকেট’ অনেক জোরদার, এমন অভিযোগও মেলে। কারণ, তাঁরা পঞ্চায়েত আইন সম্পর্কে অবগত নন। পড়াশোনাও কম। বহু মহিলা প্রধানেরই কাজ সই (কোথাও টিপসই) করায় সীমিত। প্রধানের ফোন ধরেন অন্য কেউ।
যেমন, বাঁকুড়ার ইঁদপুরের হাটগ্রাম পঞ্চায়েতে দু’বারের প্রধান, তৃণমূলের কবিতা লায়েক। বাসিন্দাদের দাবি, ‘‘ওঁর স্বামীই পঞ্চায়েত চালান।’’ বিজেপি পরিচালিত বীরভূমের সাঁইথিয়ার দেরিয়াপুর পঞ্চায়েতের বুলু পাহাড়িয়া ‘নামেই’ প্রধান। তাঁর স্বামী, দলের বুথ সভাপতি গোকুল পাহাড়িয়া মানছেন, ‘‘স্ত্রী স্বল্পশিক্ষিত। যা করার আমাকেই করতে হয়।’’ পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতার এক তৃণমূল মহিলা প্রধানের স্বীকারোক্তি, ‘‘নেতারাই কোথায় কী কাজ হবে, ঠিক করে দেন।’’
এই ছবিটা থাকা সত্ত্বেও অধিকাংশ মহিলা পরিচালিত পঞ্চায়েতের বাসিন্দাদের মতে, দলমত নির্বিশেষে মহিলারা ভাল কাজ করছেন। তাঁদের নতুন চিন্তাভাবনা পঞ্চায়েতকে কিছু ক্ষেত্রে দিশাও দেখাচ্ছে। এই প্রধানদের মধ্যে থেকে আল্ট্রাটেক সিমেন্ট পরিবার বেছে নেবে ‘আল্ট্রাটেক যশস্বী প্রধান’। আল্ট্রাটেক সিমেন্ট দেশ জুড়ে এই বিকাশ ও নির্মাণকার্যে সহযোগিতা করে চলেছে। নিজেদের এই অভিজ্ঞতা, গুণমান এবং বিশ্বস্ততাকে পাথেয় করে পশ্চিমবঙ্গেও গ্রাম প্রধানদের সার্বিক উন্নয়নের প্রচেষ্টাকে সহায়তা করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এই সংস্থা।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)