অস্ত্রোপচারের বিল হয়েছিল তিন লাখ টাকা। ৮৫ হাজার টাকার বেশি দিতে পারেনি পরিবার। অভিযোগ, তার পর থেকে নার্সিংহোম রোগীর সঙ্গে দেখা করতে দিচ্ছে না পরিবারের। অভিযোগকারীরা রামপুরহাটের। ঘটনাস্থল সেই বর্ধমান।
শনিবারই ‘আনন্দবাজার’ পত্রিকায় প্রকাশ পেয়েছে, বর্ধমানের পিজি নার্সিংহোমে ঝাড়খণ্ডের চুমকি লেটের পরিবারকে হেনস্থার অভিযোগ। বীরভূমের রামপুরহাট হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুল্যান্স নেওয়ার পরে পরিবারটির ‘বিভ্রান্ত’ হওয়ার কথা। এ দিন বর্ধমান জেলা স্বাস্থ্য দফতর জেনেছে, পিজি নার্সিংহোম একা নয়, বিল নিয়ে রোগী ও তাঁর পরিবারকে হয়রান করায় অভিযুক্ত জেলার আরও দু’টি নার্সিংহোম। রামপুরহাটে প্রশাসনের তদন্তে ধরা পড়েছে, সরকারি অ্যাম্বুল্যান্সের বদলে জনতাকে বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স নিতে বাধ্য করার ‘কৌশল’। স্বাস্থ্য-কর্তাদের অনেকে মানছেন, বর্ধমানের পিজি-কাণ্ডের তদন্তে প্রতি পদে হদিস মিলছে বেসরকারি ও সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার অনেক ফাঁক-ফোকরের।
দিন পনেরো আগে দুর্ঘটনায় আহত হন রামপুরহাটের সেনবাঁধার বাসিন্দা জোসেফ বেসরা (মাড্ডি)। জোসেফের কাকা সোমলাল বেসরার দাবি, তাঁরা জোসেফকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুল্যান্স ডাকলেও, তার চালক তাঁদের ‘বুঝিয়েসুঝিয়ে’ নিয়ে যান বর্ধমানের নবাবহাটের কাছে রিলিফ নার্সিংহোমে। সেখানেই জোসেফের অস্ত্রোপচার করা হয়। সোমলালবাবুর দাবি, ভর্তি করার সময় নার্সিংহোম বলেছিল সব মিলিয়ে হাজার পঞ্চাশ টাকা লাগবে। বিলের তিন লক্ষ টাকা দিতে পারবেন না বলায় শনিবার থেকে জোসেফের সঙ্গে তাঁদের দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না। তাঁর কথায়, ‘‘ওরা এখন যা চাইছে, তা দেব কোথা থেকে?’’
সমস্যা নিয়ে বর্ধমানের আদিবাসী সংগঠনের নেতারা দেখা করেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) প্রণব রায়ের সঙ্গে। প্রণববাবু বলেন, ‘‘নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষকে বলেছি, রোগীকে বাড়ির লোকের সঙ্গে দেখা করতে দিতে হবে। রোগীর পরিবার কোনও টাকা দেবেন না। আগে আমি তদন্ত করে দেখব।’’ তবে নানা ভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ওই নার্সিংহোম কতৃর্পক্ষের সঙ্গে এ দিন কথা বলা যায়নি।
স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা জানাচ্ছেন, তাঁদের কাছে অমানবিকতার অভিযোগ রয়েছে বর্ধমান শহর লাগোয়া বামচাঁদাইপুরের শরণ্যা নার্সিংহোমের বিরুদ্ধেও।
শহরের নাড়ি কলোনির বৃদ্ধ শান্তিরঞ্জন দাস হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শুক্রবার ভর্তি হন সেখানে। পরিবারের অভিযোগ, ভর্তির সময়ে ২০ হাজার টাকা নিলেও একটি ইঞ্জেকশন বাবদ তখনই আরও ৩০ হাজার টাকা চায় ওই নার্সিংহোম। সেই মুহূর্তে ওই টাকা দিতে সমস্যার কথা জানালে কবে তা দিতে পারবেন, সেই মর্মে একটি মুচলেকা দিতে হয় শান্তিবাবুর পরিবারকে। মুচলেকা দেওয়ার পরে চিকিৎসা শুরু হয়। ‘শরণ্যা’ কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, ‘‘এমন হওয়ার কথা নয়। ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে।’’
বর্ধমানের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন বলেন, ‘‘অতিরিক্ত জেলাশাসক (স্বাস্থ্য), সিএমওএইচ-কে এমন সব নার্সিংহোমে আচমকা অভিযানে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বেচাল দেখলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
এরই মধ্যে চুমকি লেটকে বর্ধমানের নার্সিংহোমে পৌঁছনোর ঘটনায় অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের একটি দুষ্ট-চক্রের হদিস পেয়েছে স্বাস্থ্য দফতর ও রামপুরহাট প্রশাসন। মহকুমাশাসক (রামপুরহাট) সুপ্রিয় দাস বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে মঙ্গলবার সব পক্ষকে বৈঠকে ডেকেছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy