স্কুলে ভর্তি হল তনবির। নিজস্ব চিত্র
ব্যাগে নতুন বই ভরে যখন স্কুল থেকে পিঠের উপর ব্যাগ নিয়ে বাড়ির পথে ফিরল কিশোরী তানবিরা খাতুন, তখন সে বলল, ‘‘আসলে আমি ভাল ভাবে বাঁচার রাস্তাতেই ফিরলাম।’’ বহু দিন পরে মেয়ের মুখে হাসি দেখে তাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন মা রিনা বিবিও।
অভাবের সংসারে প্রাথমিক স্কুল ছেড়ে তনবিরা যে শুরু করেছিল ভিক্ষাবৃত্তি। সেখান থেকে ১১ বছর বয়সের কিশোরীকে ফিরিয়ে এনে সোমবারই মুর্শিদাবাদের শমসেরগঞ্জের চাচণ্ড বি জে হাই স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি করানো হল। দেওয়া হল সমস্ত বইয়ের সঙ্গে এক গুচ্ছ খাতা, পেন, স্কুলের পোশাকও। কিছু আর্থিক সাহায্যও। যে হেতু স্কুল এখন বন্ধ, তাই স্থানীয় একটি কোচিং সেন্টারে যাতে নিয়মিত এই সময় সে পড়াশোনা করতে পারে, তার ব্যবস্থাও করে দিলেন শিক্ষকেরা।
শমসেরগঞ্জের শিকদারপুরের বাসিন্দা তানবিরের বাবা জয়নাল শেখ বছর পাঁচেক ধরে অসুস্থ। ৬ ভাই বোন। সকলেই নাবালক। মা রিনা বিবি বিড়ি বেঁধে কোনও রকমে সংসারটা চালান। পরিস্থিতির শিকার তানবির স্কুল ছেড়ে হাত পেতে ভিক্ষা করতে শুরু করে। করোনা পরিস্থিতিতে মায়ের বিড়ি বাঁধা ও তানবিরের ভিক্ষে করে পাওয়া ৫০-৬০ টাকা আয় দিয়েই সংসারটা চলছিল বছর দুয়েক ধরে।
পাশেই এক চায়ের দোকানে চা খেতে গিয়েই কয়েক দিন আগে এক শিক্ষকের নজরে পরে তনবির ভিক্ষা করছে। শীতের সকালে গায়ে ঠিক মতো পোশাকটাও নেই। চাচণ্ডা হাই স্কুলের পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক মহম্মদ আবু সুফিয়ান বলছেন, ‘‘শীতে কাঁপছিল মেয়েটি। চোখ দিয়েও জল পড়ছে ঠান্ডায়। জিজ্ঞেস করলে বাড়ির সব ঘটনা খুলে বলল সে। সব শুনে বেশ কিছু টাকা হাতে দিলাম তার। পরের দিনই তার বাড়িতে গিয়ে কথা বললাম তার মায়ের সঙ্গে। মেয়েটিকে জিজ্ঞাসা করলাম, সে স্কুলে পড়তে চায় কি না। বললাম পড়ার সব দায়িত্ব নেবেন স্কুলের শিক্ষকেরা। তাতে রাজি হলেন মা। সোমবার মা নিজেই মেয়েকে নিয়ে হাজির হন স্কুলে। পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি করে নেওয়া হয় তাকে।”
মা রিনা বিবি বলছেন,“সংসার টানতে হিমসিম খাচ্ছি। পরিস্থিতি দেখেই মেয়ে ভিক্ষে করছিল। ভিক্ষে করে যা পেত, সেটাও সংসারের কাজে লাগত। তাই বড় স্কুলে ভর্তি করার কথা আর ভাবতেই পারিনি। এক রত্তি মেয়েকে ভিক্ষে করতে পাঠাতে কার মা চায়? তাই প্রস্তাবটা পেয়ে দেরি করিনি। স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছি।’’
চাচণ্ড বি জে হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মিজাউর রহমান বলছেন, “ওই বালিকার জন্য যা কিছু খরচ হবে, দায়িত্ব নিতে রাজি হয়েছেন শিক্ষকেরা। ফের পড়াশুনো করতে পারবে জেনে মেয়েটিও খুব খুশি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy