“বিজেপি নেতাদের কথা শুনে সিএএ-তে (সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনে) আবেদন করেছিলাম। চার মাস হল। শংসাপত্র পাইনি। এখন ভোটার তালিকায় নাম উঠবে না বলে বুঝতে পারছি!” আক্ষেপ নদিয়ার হাঁসখালির ময়ূরহাটের বাসিন্দা দয়াল বিশ্বাসের গলায়। মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের বার্তার পরে শুধু দয়াল নন, সংশোধিত ভোটার তালিকায় নাম ওঠা নিয়ে আশঙ্কায় মতুয়াদের বড় অংশ (যাঁরা বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় ভূখণ্ডে এসে সিএএ-তে আবেদন করেছেন)।
সর্বোচ্চ আদালত জানিয়েছে, ধর্মীয় উৎপীড়নের কারণে যাঁরা নানা সময়ে বাংলাদেশ থেকে এ দেশে এসেছেন, তাঁদের আগে নাগরিকত্ব নিতে হবে। পরে, ভোটার তালিকায় নাম উঠবে। এঁদের বড় অংশই মতুয়া সম্প্রদায়ের। যাঁরা মূলত দুই ২৪ পরগনা, নদিয়া, হুগলি, উত্তরবঙ্গের নানা প্রান্তে রয়েছেন।
সিএএ-ক্যাম্প করে নাগরিকত্বের আবেদনের ব্যবস্থা হয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার ঠাকুরনগরে মতুয়াদের ঠাকুরবাড়িতে। বুধবার সেই ক্যাম্পে উপচে পড়ছিল ভিড়। সেখানে হাজির সুতনু মৃধা সিএএ-তে আবেদন করেছেন। বলেন, “কবে নাগরিকত্ব পাব, জানি না! ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ গেলে কোথায় গিয়ে দাঁড়াব, বুঝতে পারছি না!” ২০১৪-য় বাংলাদেশ থেকে এসেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দম্পতি। আধার কার্ড, ভোটার কার্ড রয়েছে। তাঁদের আতঙ্ক, “নাগরিকত্ব পাব কি না বুঝতে পারছি না। ভোটার তালিকাতেও নাম থাকবে না মনে হচ্ছে!”
উত্তরবঙ্গে প্রায় ২০ লক্ষ মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষ আছেন এবং তাঁদের অধিকাংশ ২০০২ সালের আগে এ দেশে এসেছেন বলে মতুয়া মহাসঙ্ঘের দাবি। মতুয়া মহাসঙ্ঘের কোচবিহার জেলা আহ্বায়ক মানিক দাস বলেন, “সিএএ-র কাগজ দিয়ে যাতে এসআইআরে নাম তোলা যায়, সে আবেদন জানিয়েছি। কারণ, অনেকের নাম ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নেই।” আবার রানাঘাটের তাহেরপুরের বাসিন্দা জয় মিত্রের মতো অনেক মতুয়া সিএএ-তে আবেদন করেননি। জয়ের কথায়, “সিএএ-তে আবেদন করলে প্রকারান্তরে নিজেকে বিদেশি বলে ঘোষণা করতে হবে। আমার নাম ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় ছিল। সিএএ-তে আবেদন করলে নাম কাটা যেতে পারত।”
কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী তথা অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি শান্তনু ঠাকুরের সিএএ সহায়তা শিবির থেকে প্রায় ৬০ হাজার মানুষ নাগরিকত্বের আবেদন করেছেন। শান্তনু বলেন, “সিএএ-তে আবেদন করলেই ভোটার তালিকায় নাম উঠবে না। যাঁরা আবেদন করেছেন, তাঁরা যাতে দ্রুত নাগরিকত্ব পান, সে প্রক্রিয়া চলছে।” মহাসঙ্ঘের আর এক শিবিরের সঙ্ঘাধিপতি, গাইঘাটার বিজেপি বিধায়ক সুব্রত ঠাকুরের সিএএ সহায়তা শিবির থেকে হাজার দুয়েক মানুষ নাগরিকত্বের আবেদন করেছেন। সুব্রতের দাবি, “প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আবেদন করব, যাতে দ্রুত মতুয়া উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব দেওয়া হয়। তাঁদের নাম যেন ভোটার তালিকায় ওঠে।” ‘অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘ’-এর আর এক শিবিরের সঙ্ঘাধিপতি তথা তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ মমতা ঠাকুর বলেন, “কেন্দ্রের চক্রান্ত সামনে এসে পড়ল।” রানাঘাট দক্ষিণের তৃণমূল বিধায়ক মতুয়া সম্প্রদায়ের মুকুটমণি অধিকারীর মন্তব্য, “প্রমাণ হল, বিজেপি নাগরিকত্ব দেওয়ার নাম করে মতুয়া ও উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব হরণ করতে চাইছে।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)