রাষ্ট্রপতি-মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় যাবে। তাই সকাল থেকেই গয়াবাড়ির রাস্তায় ডিউটি শুরু হয়ে গিয়েছিল। পাশে থাকা অফিসারদের ম্যানপ্যাকে খবর এল কনভয় চলে এসেছে।
কিন্তু রাষ্ট্রপতির গাড়ি চলে যাওয়ার পরেই হঠাৎ বিকট শব্দ। কিছু একটা ঘটেছে বুঝতে পারলেও ডিউটি ছেড়ে যাওয়ার উপায় নেই। কিন্তু লক্ষ্য করলাম, কনভয়ের আর গাড়ি আসা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। দেখলাম, সকলে ছুটছে। তাই আমিও শব্দের উৎস খুঁজতে দৌড়তে শুরু করলাম। কিছু দূর গিয়ে দেখি মুখ্যমন্ত্রী রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। সকলকে বলছেন, ‘‘ভয় পাবেন না। ঘাবড়াবেন না। দড়ি জোগা়ড় করুন।’’ বুঝলাম দুর্ঘটনা ঘটেছে। গাড়ি নীচে পড়েছে।
দার্জিলিং থেকে বাগডোগরা ফেরার পথে সোনাদায় রাষ্ট্রপতির কনভয়ের একটি গাড়ি খাদে পড়ে গেল আহতদের কয়েকজনকে আনা হয় শিলিগুড়ি হাসপাতালে। সেখানে আহতদের দেখতে এসেছেন (বাঁ দিকে) পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব, (মাঝে) উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ ও (ডান দিকে) ডিআইজি উত্তরবঙ্গ নটরাজন রমেশবাবু ও শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার চেলিং সিমিক লেপচা। শুক্রবার ছবিগুলি তুলেছেন বিশ্বরূপ বসাক।
পুলিশ কর্মীদের অনেকেই খাদে নেমে উদ্ধারও শুরু করেছে। শুনলাম গাড়ির যাত্রীরা সকলেই কোনও ভাবে বাইরে আসতে পেরেছেন। কিন্তু তখনও খাদে ঝুলে রয়েছেন। যাঁরা উদ্ধার করতে যাঁরা খাদে নেমেছেন, সকলেই সমতলের বাসিন্দা। পাহাড়ি পথ-খাদের সঙ্গে তাঁদের খুব বেশি চেনাজানা নেই। অনেক কৌশলও তাঁরা জানেন না। উদ্ধার করতে নেমে যাতে কেউ বিপদে না পড়েন, তার জন্য মুখ্যমন্ত্রী হুড়মুর করে খাদে নামতে পইপই করে নিষেধ করে যাচ্ছেন। আমি কোনও মতে হিন্দিতে এক পুলিশ অফিসারকে পুরো বিষয়টি বোঝালাম। তিনি আমাকে নামার অনুমতি দিলেন। একটি দড়ি ধরে খাদে নামলাম। শ’খানেক মিটার নামার পরে দেখি জখমরা দড়ি ধরে প্রায় ঝুলে রয়েছে। এক এক করে জখমদের ধরে কিছুটা উঠিয়ে দিয়ে উপরে যাঁরা দড়ি ধরে ছিলেন তাঁদের কাছে পৌঁছে দিলাম। ভাগ্যিস সকলের জ্ঞান ছিল। না হলে উদ্ধারকাজে আরও সময় লাগত। তাতে জখমদের পরিস্থিতি কী হত, তা ভাবলেই শিউরে উঠছি।
(গয়াবাড়িতে ডিউটিতে থাকা সিভিক ভলান্টিয়ার দীপক উদ্ধারকারী দলকে খাদে নিয়ে যান)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy