আন্তর্জাতিক ফুটবল তারকা লিয়োনেল মেসিকে দেখতে না পেয়ে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে আমজনতার ভাঙচুর চালানোর ঘটনায় রাজ্যের নেতা-মন্ত্রীদের ওপর বেজায় ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন সাধারণ মানুষ। এই অপ্রীতিকর পরিস্থিতির জন্য স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক্স (পূর্বের টুইটার) হ্যান্ডলে পোস্ট করে রাজ্যবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন। সেই ঘটনা থেকেই শিক্ষা নিয়ে এ বার গঙ্গাসাগর মেলা আয়োজনের বৈঠকে কঠোর বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর স্পষ্ট নির্দেশ, ‘‘ভিআইপি কালচার চলবে না।’’
সোমবার নবান্নে আয়োজিত গঙ্গাসাগর মেলা ২০২৬-এর প্রস্তুতি বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জানান, গঙ্গাসাগর মেলায় কোনও ভিআইপি-র জন্য যেন সাধারণ পুণ্যার্থীদের কোনওরকম সমস্যা না হয়। ভিড়ের সুযোগ নিয়ে মেলার সময় যেন ‘ভিআইপি সংস্কৃতি’ কোনওভাবেই প্রশ্রয় না পায়, সেদিকে বিশেষ নজর দিতে বলেছেন তিনি।
নবান্নের একটি অংশের মতে তিনি এই বার্তা দিয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রীদের। কারণ যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে আম জনতার ক্ষোভের আগুনের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী করা হচ্ছে রাজ্যের দুই মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ও সুজিত বসুকে। আর গঙ্গাসাগর মেলায় প্রতি বছর একঝাঁক মন্ত্রী দায়িত্ব পালন করতে যান। যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীরা যাতে এ বার ‘ভিআইপি সংস্কৃতি’ থেকে দূরে থেকে পুণ্যার্থীদের নিরাপত্তা এবং সুরক্ষায় মন দেন, এই বিষয়টি নিশ্চিত করতে চান মুখ্যমন্ত্রী। তাই বৈঠকে হাজির মন্ত্রীদের উপস্থিতিতেই ভিআইপি সংস্কৃতি নিয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছেন। যাতে মেলায় কাজ করতে যাওয়ার ক্ষেত্রে মন্ত্রীরা নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন থাকেন।
আরও পড়ুন:
তবে রাজনৈতিক মহলের মতে, গত বছর উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে মহাকুম্ভে পদপিষ্ট হয়ে ৩০ জন মানুষের মৃত্যুর ঘটনায় যোগী আদিত্যনাথ সরকারের আয়োজনের কড়া সমালোচনা করে সেটিকে ‘মৃত্যু কুম্ভ’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাই নতুন বছরের শুরুতেই সাগরদ্বীপে অনুষ্ঠেয় পুণ্যস্নানের এই বিরাট আয়োজনে ভিড় নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে রাজ্য সরকার। দেশ-বিদেশ থেকে লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থী সাগর-গঙ্গার মিলনস্থলে পুণ্যস্নান করতে আসেন। নবান্ন সূত্রে খবর, ভিড় নিয়ন্ত্রণে এ বার পুণ্যার্থীদের হাতে ‘রিস্ট ব্যান্ড’ এবং ‘আইডি কার্ডে’র বন্দোবস্ত করা হবে। সাধারণত জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতর এই মেলার আয়োজনে বড় ভূমিকা পালন করে, কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী অন্যান্য দফতরের মন্ত্রী ও আমলাদেরও গঙ্গাসাগর মেলায় বিশেষ ভাবে নজর দিয়ে কাজ করতে বলেছেন।
পুণ্যার্থীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে মুখ্যমন্ত্রী বিশেষ ব্যবস্থার নির্দেশ দিয়েছেন:
* ১২ জানুয়ারির মধ্যে মন্ত্রীদের নিজ নিজ গন্তব্যে পৌঁছতে হবে।
* সাড়ে তিন হাজার ভলান্টিয়ারকে প্রশিক্ষণ দিয়ে পাঠানো হবে।
* সকল পুণ্যার্থীর জন্য বিমার ব্যবস্থা থাকবে।
* ড্রোন ও সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে নজরদারি চালানো হবে।
* মোট ২৫০০ বাস, ২৫০ লঞ্চ এবং ২১টি জেটি সচল থাকবে।
প্রসঙ্গত, সাগরদ্বীপে আগামী ১০ থেকে ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত মেলা চলবে। ১৪ জানুয়ারি পৌষ সংক্রান্তির দিন পুণ্যস্নানের প্রধান তিথি। মেসি-কাণ্ডের পর জনরোষের গুরুত্ব বুঝে ‘ভিআইপি সংস্কৃতি’ বাতিল করে মুখ্যমন্ত্রী এ বার সাধারণ পুণ্যার্থীদের যাত্রাপথ নির্বিঘ্ন ও সুনিশ্চিত করার উপর জোর দিলেন।