ভারতে এই পাখিটির উপস্থিতি এত দিন অজানা ছিল ছবি: সৌরভ হালদার।
সদ্য আবিষ্কৃত এক পাখির খোঁজে গিয়েছিলেন তাঁরা। আর উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রত্যন্ত জঙ্গলে গিয়ে বাংলার দুই পাখি পর্যবেক্ষক ক্যামেরাবন্দি করে ফেললেন আর একটি পক্ষী প্রজাতিকে। ভারতে যার উপস্থিতি এত দিন অজানা ছিল!
দুর্গাপুজোর আমেজ ঠিকঠাক জমাট বাঁধার আগেই সৌরভ হালদারেরা পাখি দেখতে পৌঁছে গিয়েছিলেন অরুণাচল প্রদেশে। উত্তর ২৪ পরগনার বাসিন্দা সৌরভের সঙ্গী ছিলেন হুগলির শুভ্র পাখিরা এবং স্থানীয় গাইড রবি মেকোলা, রাহুল বড়ুয়া এবং ইয়াশি লামা। ১৭ অক্টোবর ভোর হতে না হতেই বেড়িয়ে পড়া। মিয়াও থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দুরে বিজয়নগর তাঁদের গন্তব্য। ‘টার্গেট স্পেসিস’ ভারতে নতুন আবিষ্কৃত লিসু রেন ব্যাবলার। বিজয়নগর গ্রামের লিসু জনজাতিকে স্বীকৃতি দিয়ে পাখিটির নামকরণ করা হয়েছে ২০২২ সালে। দীর্ঘ এই যাত্রাপথে পড়ে বিখ্যাত নামদাফা জাতীয় উদ্যান।
সৌরভ জানিয়েছেন, জঙ্গলের পথে চলতে চলতেই সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ পার্কের ভেতর সাঁইত্রিশ মাইলের কাছে সকলের চোখ আটকে যায় বান্টিং জাতীয় ছোট্ট একটি অচেনা পাখির দিকে। রাস্তার পাশে ঘাসের বীজ খেতে ব্যস্ত তখন পাখিটি। সময় নষ্ট না করে চটজলদি যতগুলো সম্ভব ফোটো তুলে নেন তাঁরা। চলে ভিডিওগ্রাফিও। শুভ্রের কথায়, ‘‘কলকাতা ফিরে সে-সব ছবি, ভিডিও পোস্ট করা হয় পাখি শনাক্তকরণের ফেসবুক প্লাটফর্ম ‘আস্ক আইডিজ় অফ ইন্ডিয়ান বার্ডস্’-এ। সাহায্যে এগিয়ে আসেন হংকংয়ের পাখি বিশায়দ টম লি, দক্ষিণ কোরিয়া প্রবাসী শুভজিৎ চাকলাদার এবং ব্রিটেন থেকে ব্রায়ান স্ট্রেচরা। এঁদের প্রত্যেকেই তাঁদের দেশে আগে পাখিটিকে দেখেছেন। পাখিটির নাম লাপল্যান্ড লংস্পার।’’
আসলে সুমেরু অঞ্চলের বিস্তৃত এলাকা জুড়ে এদের বাসভূমি। উত্তর আমেরিকা এবং ইউরেশিয়া জুড়ে বিচরণ করে। ও সব অঞলে বেশ পরিচিত পাখি। ছোট, বড় ঝাঁকে থাকে। আকারে আমাদের দেশের চড়াইয়ের মতো। শীতকালে পরিযায়ী হয়ে নেমে আসে মঙ্গোলিয়া, চিন, জাপান, কোরিয়াতে। তাইল্যান্ড এবং ভারতের কাছাকাছি ভুটান থেকেও রেকর্ড আছে। তবে ভারত থেকে এই প্রথম বার এদের খোঁজ পাওয়া গেল।
স্বভাবতই নতুন এই পাখির খোঁজ পেয়ে বাংলার পাখি-দেখিয়েদের উচ্ছ্বাস চোখে পড়ছে। রাজ্যের পক্ষী পর্যবেক্ষকদের সংগঠন বার্ড ওয়াচারর্স সোসাইটির তরফে কনাদ বৈদ্য বলেন, ‘‘দারুণ খবর। গোটা পৃথিবী জুড়েই পাখি দেখা একটি জনপ্রিয় হবি। এই যান্ত্রিক যুগে কর্মক্ষেত্রের মানসিক চাপ এবং শারীরিক ধকল থেকে মুক্তি পেতে অবসর সময়ে পাখিদের নিয়ে চর্চা করার লোকের সংখ্যা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। পশ্চিমবঙ্গ থেকেই কয়েক হাজার মানুষ এখন নিয়মিত পাখি নিয়ে চর্চা করেন, ছবি তোলেন। দেশের নানা প্রান্তে ছুটে বেড়ান। স্থায়ী পেশা হিসেবে পাখি দেখাতে নিয়ে যাওয়ার গাইড হিসেবেও অনেকে প্রতিষ্ঠিত। বার্ড ওয়াচিং এখন সংক্ষেপে বার্ডিং হয়েছে। আর বার্ড ওয়াচার হয়েছে বার্ডার। বার্ড ট্যুরিজম কথাটিও আজকের দিনে আর অপরিচিত নয়। কাজেই পরিচিত পাখিদের পাশাপাশি হুটহাট এরকম নতুন নতুন পাখিদের দেখা মিললে সকলের মধ্যেই উৎসাহ আরও বাড়বে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy