Advertisement
E-Paper

মনে বিদ্যাসাগর, নিজের সাইকেল স্কুলের ভাইকে

বিদ্যাসাগরের কথা জেনে অরিত্র ভেবেছিল, মানস আর সমায়ের জন্য সে-ও তো কিছু করতে পারে। ভাবনা সত্যি হল বিদ্যাসাগরের দু’শো বছরের জন্মদিনে।

বিশ্বসিন্ধু দে

শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৩:৫৩
সবুজ সাথীর সাইকেল মানসের হাতে তুলে দিচ্ছে অরিত্র।—নিজস্ব চিত্র।

সবুজ সাথীর সাইকেল মানসের হাতে তুলে দিচ্ছে অরিত্র।—নিজস্ব চিত্র।

‘দীন যে, দীনের বন্ধু! উজ্জ্বল জগতে’ করুণাসিন্ধু বিদ্যাসাগরের কঠিন খোলসের আড়ালে সেই নরম মন আর হাজারও দানধ্যানের গল্প শুনেছিল নবম শ্রেণির ছেলেটি। ক’দিন আগে বিদ্যাসাগরের গ্রাম বীরসিংহে স্কুলের সকলের সঙ্গে হইহই করে গিয়েছিল সে-ও। শিক্ষকদের কাছে শুনেছিল, বিদ্যাসাগরের জীবনকথা।

দাঁতন ভাগবতচরণ হাইস্কুলের দুষ্টু, দুরন্ত ছাত্র অরিত্র বেরার মন ছুঁয়ে গিয়েছিল সেই সব কাহিনি। মনে পড়ে গিয়েছিল নিজের স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ভাই মানস সরেনের কথা, যে প্রতিদিন ভাই সমায়কে নিয়ে এক কিলোমিটার হেঁটে স্কুলে আসে। সমায়ের ডান পায়ে সমস্যা রয়েছে। হাঁটতে কষ্ট হয় তার।

বিদ্যাসাগরের কথা জেনে অরিত্র ভেবেছিল, মানস আর সমায়ের জন্য সে-ও তো কিছু করতে পারে। ভাবনা সত্যি হল বিদ্যাসাগরের দু’শো বছরের জন্মদিনে। ক’দিন আগে স্কুল থেকে পাওয়া সবুজ সাথীর সাইকেল (নবম শ্রেণিতেই মেলে এই সরকারি সাইকেল) মানসের হাতে তুলে দিল অরিত্র। ইচ্ছে একটাই, দুই ভাইয়ের স্কুলে যাতায়াতের কষ্টটুকু যাতে কমে।

বুধবারই নিজের ইচ্ছে প্রধান শিক্ষক অরবিন্দ দাসকে জানায় অরিত্র। অরবিন্দ বলেন, ‘‘ও বলেছিল সাইকেলটা এক ভাইকে দিতে চায়। বলেছিলাম বেশ, যাকে দেবে তাকে নিয়ে এসো। এ দিন মানসকে নিয়ে আসে অরিত্র।’’ বৃহস্পতিবার স্কুলে বিদ্যাসাগর স্মরণানুষ্ঠানেই অরিত্র সাইকেলটা মানসের হাতে তুলে দেয়।

বিদ্যাসাগরের অনুপ্রেরণাতেই যে এই কাজটা সে করেছে, মানছে অরিত্র। সে বলে, ‘‘বিদ্যাসাগর সারাজীবনে অনেক দান করেছেন। শিক্ষকদের মুখে সে সব শুনছি। আমার তো একটা সাইকেল আছেই। তাই ভাবলাম মানস কষ্ট করে স্কুলে আসে। ওর ভাই ঠিক মতো হাঁটতে পারে না। তাই সবুজ সাথীর সাইকেলটা ওকে দিলাম।’’

মানস আর সমায়ের বাবা সনাতন সরেন দিন মজুর। কোনওমতে সংসার চলে। মানসদের বাড়ি দাঁতনের কৃষ্ণপুরে। মানস বলছিল, ‘‘একদিন অরিত্রদা রাস্তায় দাঁড় করিয়ে জানতে চেয়েছিল, সাইকেল নিবি? বলেছিলাম হ্যাঁ। ভাইকে নিয়ে স্কুলে আসতে কষ্ট হয় তো।’’ তাঁর স্কুলের এক ছাত্র সেই কষ্টটা বুঝে বিদ্যাসাগরের অনুপ্রেরণায় এমন একটা কাজ করেছে দেখে আপ্লুত প্রধান শিক্ষকও। অরবিন্দ বলেন, ‘‘অরিত্র খুব ভাল ছাত্র নয়। বিভিন্ন সময় অনেক অভিযোগ আসে ওর নামে। অভিভাবকদের জানানো হয়। কিন্তু আজ বিদ্যাসাগরের জন্মদিনে ও আমাদের সকলকে অনেক কিছু শেখালো। বুঝিয়ে দিল, বিদ্যাসাগরের আদর্শ সত্যি কালজয়ী।’’ অরিত্রর বাবা পবিত্র বেরা গৃহশিক্ষকতা করেন। আর মা বেসরকারি হাসপাতালের নার্স। পবিত্রও বলছেন, ‘‘ছেলেটা আমার সত্যি ভাল একটা কাজ করল।’’

অরিত্রর মন জুড়ে অবশ্য শুধুই বিদ্যাসাগর। সে বলছে, ‘‘স্যররা বলেছেন, বিদ্যাসাগরের দানের কথা। দান করলে মনে শান্তি পাওয়া যায়। এটা ভেবেই ভাল লাগছে যে ওদের দুই ভাইয়ের স্কুলে আসতে কষ্ট হবে না।’’

Cycle Student
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy