E-Paper

নিট ছাড়াই সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করিয়েছে কাঁথির সংস্থা, অনিয়ম মানছে কলেজও

এমন সংস্থা ছড়িয়ে কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে। অভিযোগ, ‘বাসন্তী দেবী এডুকেশন্যাল সার্ভিস’ তাদেরই একটি। সংস্থার সদর দফতর হাজরার সদানন্দ রোডে।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়, কেশব মান্না

শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০২৪ ০৭:৫২
(বাঁ দিকে) সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ এবং (ডান দিকে) কাঁথিতে অভিযুক্ত সংস্থার অফিস।

(বাঁ দিকে) সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ এবং (ডান দিকে) কাঁথিতে অভিযুক্ত সংস্থার অফিস। — ফাইল চিত্র।

কাঁথি শহরের ‘মুশকিল আসান কেন্দ্র’-এর কর্তারা জানিয়েছিলেন, মেডিক্যালের সর্বভারতীয় এন্ট্রান্স পরীক্ষা (নিট) ছাড়াই তাঁরা এলাকার এক ছাত্রকে কলকাতার সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজে এমবিবিএসে ভর্তি করেছিলেন। বিনিময়ে নিয়েছিলেন মোটা টাকা। সাগর দত্ত মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ বুধবার স্বীকার করলেন, কাগজপত্র ঘেঁটে তাঁরা প্রমাণ পেয়েছেন, সত্যিই ২০১৯ সালে ওই ছাত্র তাঁদের কলেজে ভর্তি হয়েছিল!

মেডিক্যালের অধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম প্রধান বলেন, ‘‘কাঁথির ওই ছাত্র ভর্তি হয়েছিল ঠিকই। তবে পরে আর রেজিস্ট্রেশন করায়নি। কলেজে আসাও বন্ধ করে সে।’’ এই বক্তব্য জানার পরে একটি মহলের দাবি, তা হলে দেখা যাচ্ছে, ‘ডামি ক্যান্ডিডেট’ নিটে বসিয়ে সত্যিই এমবিবিএসে ভর্তি করানো হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, একাধিক চক্র এখানে সক্রিয় এবং চলছে কোটি-কোটি টাকার খেলা।

কাঁথিতে ওই সংস্থার অফিসেই ‘দইসাই এজি চার্চ’ নামে আর একটি সংস্থার কাজও চলে। তার বিরুদ্ধে আগেই কাঁথি মহকুমা হাসপাতাল-সহ একাধিক সরকারি হাসপাতালের নাম ব্যবহার করে নার্সিং কলেজে পড়ুয়া ভর্তির অভিযোগ উঠেছিল। দইসাই এজি চার্চের কর্ণধার অর্পণ রানা বলছেন, ‘‘শুনেছি মুশকিল আসান কেন্দ্র মেডিক্যালে ভর্তির নামে অনেক অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত। আমরা সব জেনেও ওদের সঙ্গে সম্পর্ক রেখেছি কারণ, ওরা আমাদের আইটিআই কলেজে অনেক ছাত্রছাত্রী ভর্তি করায়।’’

এমন সংস্থা ছড়িয়ে কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে। অভিযোগ, ‘বাসন্তী দেবী এডুকেশন্যাল সার্ভিস’ তাদেরই একটি। সংস্থার সদর দফতর হাজরার সদানন্দ রোডে। মেদিনীপুর শহরে শরৎ পল্লিতে শাখা অফিস রয়েছে। এদের ফোনে জানানো হয়েছিল, ৪-৫ জন একটি মেডিক্যাল কোচিং সেন্টারে পড়ে। গত বার নিটে সুযোগ পায়নি। এ বছর নিট ছাড়াই এমবিবিএস-এ সুযোগ পেতে তারা মরিয়া। বিপুল টাকা দিতেও প্রস্তুত।

ফোনের অন্য প্রান্তে ‘বাসন্তী দেবী এডুকেশন্যাল সার্ভিস’-এর তরফে থাকা ব্যক্তির আশ্বাস, ‘‘হয়ে যাবে। সামনাসামনি দেখা করুন। মোটামুটি ৬০ লাখ থেকে ১ কোটি বাজেট থাকলে কাজ হয়ে যাবে।’’ তিনি আরও জানালেন, তফসিলি জাতির প্রার্থী হলে সরকারি মেডিক্যাল কলেজে নিট না-দিয়ে ভর্তির জন্য ৬০-৭০ লাখ লাগবে। তফসিলি জনজাতি এবং সাধারণ প্রার্থীর ক্ষেত্রে বাজেট দাঁড়াবে ১ কোটিতে। যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে জুড়লেন, ‘‘আসলে নিট-এর সেন্টার আমরা ইচ্ছেমতো পছন্দ করি। সেই যোগাযোগ আমাদের আছে। ফলে পরীক্ষার হলে সমস্যা হয় না। প্রশ্নও আগে থেকে পেয়ে যেতে পারি। কিন্তু বিষয়টা পাঁচ কান করবেন না।’’ ২০ মার্চ দুপুর পর্যন্তও এই সংস্থার অফিস থেকে বার বার ফোন করে ‘ডিল’ পাকা করতে চাপ দেওয়া হয়।

আর একটি সংস্থা হল ‘ভারত ইনস্টিটিউট অব হায়ার এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ’। এদের ঠিকানা চেন্নাইয়ের। তবে সংস্থার কর্ণধার বাসুদেব দাস। নিজেকে বাসুদেব দাস বলে পরিচয় দেওয়া ব্যক্তি ফোনে জানান, তাঁরা ‘ডামি ক্যান্ডিডেট’ দিয়ে নিট পরীক্ষায় পাশ করানোর ‘ঝুঁকি’ নেন না। তিনি জানান, কেউ ৫২০-৫৩০ নম্বর পেলে তাকে স্টেট কোটায় বেসরকারি কলেজে ভর্তির ব্যবস্থা করে দেন, ৪৬-৪৮ লাখ টাকায়। কেউ ৬০০-এর বেশি নম্বর পেলে, তার র‌্যাঙ্কিং যা-ই থাকুক, তাকে মেদিনীপুর বা উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের কোনও একটিতে ভর্তির ব্যবস্থা করেন বলেও দাবি বাসুদেবের। খরচ ৫০ লাখ। তিনি আরও বলেন, “৬২০-৬২৫ পেলে কলকাতার মেডিক্যাল কলেজেও প্লেস করা সম্ভব।”

যদিও অনেক বছর এই নম্বরে যা র‌্যাঙ্ক আসে, তাতে কলকাতার কোনও মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সুযোগ হয়ে যেতে পারে বলেও দাবি ওয়াকিবহাল মহলের।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Sagar Dutta Hospital Kolkata

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy