এক শিক্ষকের পরিবারের সদস্যদের চাকরি পাইয়ে দেওয়া এবং তাঁকে সাংসদ করানো-সহ নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে কয়েক দফায় প্রায় আড়াই কোটি টাকা নিয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এমনই অভিযোগ পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথির এক প্রাথমিক শিক্ষকের। অভিযোগ, প্রতিশ্রুতি মতো কাজ করে বা করিয়ে দিতে না-পেরেও টাকা ফেরত দিচ্ছেন না শুভেন্দু। নিজেকে আরএসএস কর্মী বলে দাবি করে ওই শিক্ষক আরও দাবি করেছেন, সঙ্ঘ নেতৃত্বের নির্দেশ সত্ত্বেও তাঁর টাকা ফেরত দেননি নন্দীগ্রামের বিধায়ক। এ নিয়ে রাজ্য বিজেপির সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যকে চিঠি লিখেছেন তিনি। ওই অভিযোগকে হাতিয়ার করে শুভেন্দুকে নিশানা করছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল। শুভেন্দুর তরফে অভিযোগ অস্বীকারের পাশাপাশি বলা হয়েছে, তৃণমূলের ইন্ধনে অসত্য অভিযোগ তুলে ভোটের মুখে ফায়দা তুলতে চাইছেন ওই শিক্ষক।
শমীককে লেখা চিঠিতে অভিযোগকারী অনিমেষ গিরি জানিয়েছেন, তাঁর পরিবারের লোকজনকে রেলের এবং প্রাইমারি শিক্ষকের চাকরি দেওয়ার নাম করে বিধানসভার বিরোধী দলনেতা ২ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন। কাজ করে দিতে না-পারায় ৫০ লক্ষ ফেরতও দেন। বাকি ২ কোটি ১০ লক্ষ টাকা আর ফেরত দেননি। প্রায় সাড়ে তিন বছর অপেক্ষার পরেও ওই টাকা না-পেয়ে তিনি নেতৃত্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন।
অনিমেষের দাবি, শুভেন্দুর বিরুদ্ধে ওই অভিযোগ নিয়ে তিনি বিজেপির বুথ সভাপতি থেকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব পর্যন্ত গিয়েছেন। এ ছাড়া আরএসএস নেতৃত্বকে চিঠি দিয়েছেন। তাঁরা ওই টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তার পরেও কোনও টাকা পাননি তিনি। তাই আবার বিজেপি নেতৃত্বের শরণাপন্ন হয়েছেন তিনি। শমীকের উদ্দেশে লেখা চিঠিতে নিজের এবং পরিবারের প্রাণসংশয় রয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন ওই ব্যক্তি।
অনিমেষের ওই অভিযোগপত্র সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে তৃণমূলের খোঁচা, ‘‘শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে ওঠা এই অভিযোগ কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটাই বিজেপি এবং তাদের ‘বাংলা-বিরোধী’ মডেলের আসল রূপ: টাকা লুট করো এবং তার পর নিজেদের লোকেদের সঙ্গেই বিশ্বাসঘাতকতা করো।’’
আনন্দবাজার ডট কম যোগাযোগ করেছিল রাজ্য বিজেপির সভাপতি শমীকের সঙ্গে। শমীক জানান, এমন কোনও চিঠি হাতে পাননি তিনি। রাজ্যসভার সাংসদ তথা বিজেপির রাজ্য সভাপতি বলেন, “সমাজমাধ্যমে কে কী পোস্ট করলেন, তার উত্তর দেওয়ার দায় আমাদের নয়। যে চিঠি আমি পাইনি, তা নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়াও আমি দেব না।’’
অন্য দিকে, অভিযোগকারী অনিমেষ আনন্দবাজার ডট কমকে বলেন, ‘‘ঘটনার সূত্রপাত ২০২১ সালের নভেম্বরে। আমি পেশায় প্রাথমিক শিক্ষক। তা ছাড়া স্বয়ংসেবক কর্মী। কাঁথিতেই বাড়ি। শুভেন্দু বিজেপিতে আসার পর তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। আমাদের ইচ্ছা ছিল একটি নার্সিং কলেজ তৈরির। সেই বিষয়ে কথা বলতে গিয়েছিলাম।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘আমার দাদা বিদেশে ওষুধ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। আমার সমস্ত কথা শোনার পরে শুভেন্দুবাবু আমাকে বেশ কিছু প্রতিশ্রুতি দেন। জনহিতকর কাজে যুক্ত ছিলাম। আমাকে সক্রিয় ভাবে রাজনীতিতে আসতে বলেন। প্রথমে কাঁথি পুরসভার ভোটে প্রার্থী করে দেবেন বলেন। তার পর সাংসদ করানোর কথা বলেন। এর পর নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে কয়েক লপ্তে আড়াই কোটি নেন। কিন্তু কোনও কাজ করে দিতে পারেননি। ৫০ লক্ষ টাকা ফেরালেও বাকিটা পাইনি। এখন উনি বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হলে ওই টাকা দিতে পারবেন!’’
অভিযোগকারীর দাবি, তিনি টাকা ফেরত চাইলেই হুমকি আসে। স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব তাঁকে ‘তৃণমূলের লোক’ বলে দাগিয়ে দেন। দাবি, নিজেদের জমি বিক্রি করে শুভেন্দুকে টাকা দিয়েছিলেন। সেই বিশ্বাস ভেঙে এখন তাঁকেই অভিযুক্ত করছেন বিরোধী দলনেতা। অনিমেষের হুঁশিয়ারি, ‘‘আগামী জানুয়ারি মাসে শুভেন্দুর বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করব। আমার মতো আরও অনেক প্রতারিতকে নিয়ে জড়ো হব। নবান্নেও অভিযোগ করব।’’
আরও পড়ুন:
অন্য দিকে, অনিমেষের সমস্ত অভিযোগ নস্যাৎ করে দিয়েছেন শুভেন্দু। তাঁর ঘনিষ্ঠরা বলেন, “ওই ব্যক্তির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। নানা সময়ে উনি নানা অভিযোগ করেন। একটা সময় বিজেপি করতেন। তবে আরএসএসের সঙ্গে কখনও যুক্ত ছিলেন না৷ প্রায় পাঁচ বছর হল তৃণমূল করেন। সামনে বিধানসভা ভোট। তাই আবার তৃণমূলের কথায় এই সমস্ত ভুয়ো অভিযোগ করছেন।’’ একজন প্রাথমিক শিক্ষক এত টাকা কোথায় পাবেন, সেই প্রশ্নও তুলছেন শুভেন্দু-ঘনিষ্ঠেরা।