Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

বই ফেলে দেয় বাবা, পড়তে চেয়ে বাড়ি ছাড়ল কিশোরী

পড়তে দেখলে তেড়ে আসে বাবা। বইপত্র ছুড়ে ফেলে দেয়। মেয়ে স্কুলে গিয়েছে শুনলে রাগ সপ্তমে চড়ে। মুখে একটাই কথা,  ‘মেয়ে হয়ে জন্মেছে। লেখাপড়া করে হবেটা কী!’

ভাই লক্ষ্মীরামের সঙ্গে মালা সোরেন। নিজস্ব চিত্র

ভাই লক্ষ্মীরামের সঙ্গে মালা সোরেন। নিজস্ব চিত্র

কিংশুক গুপ্ত 
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:৫৭
Share: Save:

পড়তে দেখলে তেড়ে আসে বাবা। বইপত্র ছুড়ে ফেলে দেয়। মেয়ে স্কুলে গিয়েছে শুনলে রাগ সপ্তমে চড়ে। মুখে একটাই কথা, ‘মেয়ে হয়ে জন্মেছে। লেখাপড়া করে হবেটা কী!’

বছর তেরোর মালা সোরেন তবু পড়তে চায়। পড়বে বলেই বাড়ি ছেড়েছে জামবনির তেঁতুলিয়া গ্রামের এই আদিবাসী কিশোরী। এখন ঠিকানা ঝাড়গ্রাম শহরের বেনাগেড়িয়ায় পিসির বাড়ি। সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী মালার একটাই স্বপ্ন, ‘‘পড়াশোনা করে উচ্চশিক্ষিত হতে চাই।’’

তেঁতুলিয়া লাগোয়া বিনপুরের যে স্কুলে সে পড়ত, সেই এড়গোদা নিত্যানন্দ বিদ্যায়তন থেকে টিসি (ট্রান্সফার সার্টিফিকেট) আনতে বৃহস্পতিবার নিজেই সে পৌঁছে গিয়েছিল। সঙ্গে ছিল মা ও ঠাকুমা। স্কুলের টিচার ইনচার্জ লক্ষ্মীকান্ত মুড়াকে মালা জানায়, তার বাবা বিশ্বনাথ সোরেন নেশা করলেই অন্য মানুষ হয়ে যায়। তাকে স্কুলে আসতে দেয় না, পড়তে দিতে চায় না। বাড়িতে বাবার কাছে থাকলে চিরজীবনের মতো পড়াশোনা ছাড়তে হবে বলেও জানায় মালা। তাই সে এই স্কুল ছেড়ে দূরের কোনও স্কুলে ভর্তি হতে চায়। টিচার-ইনচার্জ লক্ষ্মীকান্ত বলেন, ‘‘মেয়েটি পড়াশোনায় ভাল। ওকে টিসি নিতে বারণ করেছিলাম। কিন্তু মালা এবং তার মা-ঠাকুমা পীড়াপীড়ি করায় টিসি দিতে হয়েছে। আমাদের স্কুলে ছাত্রীনিবাসও নেই যে ও এখানে থেকে পড়বে।’’

জামবনি ব্লকের পড়িহাটি অঞ্চলের তেঁতুলিয়া গ্রামে মালার বাড়ি। বাড়িতে রয়েছে বাবা, মা, ভাই, ঠাকুরদা ও ঠাকুমা। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মালার বাবা বিশ্বনাথ কোনও কাজকর্ম করেন না। মালার ঠাকুরদা অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মী। তাঁর পেনশনের টাকাতেই সংসার চলে। মালার ভাই লক্ষ্মীরাম এড়গোদার স্কুলেই ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। ছেলে-মেয়ে পড়াশোনা করলেই খেপে যান বিশ্বনাথ। এতদিন বাবাকে লুকিয়ে মালা স্কুলে আসছিল। কিন্তু এ ভাবে কত দিন!

আরও পড়ুন: সঙ্গে থাক নৈঃশব্দ, সংসার পাতছেন যুগল

বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে মেয়েরা যাতে পড়াশোনা করতে পারে, নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে, সে জন্যই সরকার কন্যাশ্রী, রূপশ্রীর মতো প্রকল্প চালু করেছে। বছরভর প্রচারও চলছে। তার জেরেই মালারা লড়াইয়ের শক্তি পাচ্ছে বলে মনে করছে শিক্ষা মহল। মালার লড়াইয়ে পাশে রয়েছেন ঠাকুমা টুসু সোরেন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা লেখাপড়া শিখিনি। কিন্তু নাতনি শিক্ষার মর্ম বুঝেছে।’’ বিশ্বনাথ অবশ্য বুঝছেন না। ফোন করা হলে কড়া গলায় তাঁর মন্তব্য, ‘‘এ নিয়ে কিচ্ছু বলব না।’’

ভাই লক্ষ্মীরামকেও স্কুল ছাড়িয়ে ঝাড়গ্রামে নিয়ে এসেছে মালা। মালার পিসি সুন্দরী বাস্কের স্বামী কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন। সুন্দরী বলেন, ‘‘শিক্ষাবর্ষের মাঝামাঝি স্কুলে ভর্তি করা খুব কঠিন। জানি না কী হবে।’’ মালার কথা জেনেছেন জেলাশাসক আয়েষা রানি। তাঁর আশ্বাস, ‘‘আবেদন করলে নিখরচায় সরকারি আবাসিক স্কুলে ভর্তির ব্যবস্থা করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Education Academics Jhargram Unique
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE