Advertisement
E-Paper

দেখা দিয়ে মুহূর্তেই জঙ্গলে উধাও জ়িনতের ‘প্রেমিক’! বাঘের আতঙ্কে রাতের ঘুম উড়েছে বাঁকুড়ার গ্রামে

বন দফতর সূত্রে খবর, কখনও বাগডুবি গ্রাম লাগোয়া জঙ্গলে, আবার কখনও বারো মাইলের জঙ্গলে বাঘটিকে দেখা গিয়েছে। মিলেছে পায়ের ছাপও।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ জানুয়ারি ২০২৫ ১৭:১৯
বাঘের আতঙ্ক বাঁকুড়ার গ্রামে।

বাঘের আতঙ্ক বাঁকুড়ার গ্রামে। —প্রতীকী চিত্র।

জঙ্গলের ধারেই কাজ করছিলেন আদরি টুডু। হঠাৎ গর্জন! মাথা তুলে জঙ্গলের দিকে তাকাতেই দেখতে পেলেন, সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে বাঘটি। আতঙ্কে কাজ ফেলে এক ছুটে গ্রামে পালিয়ে এসেছিলেন আদরি। হাঁপাতে হাঁপাতে গ্রামের লোকেদের গোটা ঘটনা বলেন। এর পরেই দলবেঁধে জঙ্গলের দিকে যান গ্রামের লোকেরা। কিন্তু তত ক্ষণে বাঘ উধাও। আর তার দেখা পাওয়া যায়নি। এ দিকে, আদরির মুখে বাঘ দেখার বিবরণ শুনে দু’চোখের পাতা এক করতে পারেননি বাঁকুড়ার রানিবাঁধ ব্লকের মহাদেবসিনান গ্রামের আট থেকে আশি। গোটা গ্রাম কার্যত গৃহবন্দি তার পর থেকে।

ওড়িশার বাঘিনি জ়িনত ধরা পড়ার পরেই ঝাড়খণ্ড থেকে একটি বাঘ বাংলার জঙ্গলমহলে ঢুকে পড়ে। বন দফতরের একাংশের ধারণা, জ়িনতের খোঁজেই বাঘটি ঝাড়খণ্ড থেকে এসেছে। মাঝে একবার ঝাড়খণ্ডে ফিরে গেলেও আবার সে এসেছে। গত চার দিন ধরেই বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে জ়িনতের সেই ‘প্রেমিক’। রাজ্যের মুখ্য বনপাল (কেন্দ্রীয় চক্র) এস কুলানডাইভেল বলেন, ‘‘বাঘটা পুরুলিয়া এবং ঝাড়গ্রামের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কোনও একটি নির্দিষ্ট জায়গায় থাকছে না। এখনই আমরা বাঘটিকে ধরার চিন্তাভাবনা করছি না। তবে গতিবিধির উপর কড়া নজরদারি রাখা হয়েছে। সুযোগ পেলেই বাঘটিকে খাঁচাবন্দি করার পরিকল্পনা করা হবে।’’

বন দফতর সূত্রে খবর, কখনও বাগডুবি গ্রাম লাগোয়া জঙ্গলে, আবার কখনও বারো মাইলের জঙ্গলে বাঘটিকে দেখা গিয়েছে। মিলেছে পায়ের ছাপও। সেই বাঘটিকে চোখের সামনে দেখতে পেয়ে শরীরের সব রক্ত শুকিয়ে গিয়েছিল আদরির। তিনি বলেন, ‘‘জমিতে চাষের কাজ করছিলাম। সন্ধ্যার গোড়ায় আচমকাই গর্জন শুনতে পাই। জঙ্গলের দিকে তাকাতেই দেখি, বাঘটা দাঁড়িয়ে আছে। ওই অবস্থায় কোনও ক্রমে গ্রামে পালিয়ে আসি। পরে গ্রামবাসীদের সঙ্গে লাঠিসোঁটা নিয়ে জঙ্গলে গিয়েছিলাম। তখন আর তার দেখা পাইনি। এর পর থেকে আতঙ্কে আর জঙ্গলমুখী হতে পারিনি।’’

আদরির মুখে ঘটনার বর্ণনা শুনে আতঙ্কে কাঁপছে গোটা মহাদেবসিনান গ্রাম। গ্রামের যুবক প্রশান্ত হেমব্রম বলেন, ‘‘হাতি বা অন্যান্য জন্তু কখনও-সখনও এলাকায় আসে। তাই তেমন ভয় লাগে না। কিন্তু এই প্রথম আমাদের গ্রাম লাগোয়া এলাকায় বাঘ এসেছে। স্বাভাবিক ভাবেই আমরা যথেষ্ট আতঙ্কিত। বনকর্মীরা গ্রামে এসে খোঁজখবর নিলেও বাঘটি খাঁচাবন্দি না হওয়া পর্যন্ত এই ভয় দূর হবে না।’’

এ দিকে বাঘের আতঙ্কে কাজকর্ম হারাতে বসেছেন জঙ্গলমহলের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ। অভিযোগ, এমনিতে কেন্দ্র-রাজ্য চাপানউতরে দীর্ঘ দিন ধরে ১০০ দিনের কাজ বন্ধ। জঙ্গলমহলে কৃষিজমির পরিমাণ কম। অধিকাংশ পরিবারের হাতে রয়েছে নামমাত্র জমি। সেই জমিও অনুর্বর ও রুক্ষ হওয়ায় বছরে একবারই আমন ধানের চাষ হয়। এই পরিস্থিতিতে জঙ্গলমহলের মানুষের একটা বড় অংশ রুজিরুটির ব্যাপারে জঙ্গলের উপর নির্ভরশীল। গত চার দিন ধরে বাঘের আতঙ্কে জঙ্গলে যাওয়ার রাস্তা এখন এড়িয়ে চলছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

Tiger bankura
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy