Advertisement
E-Paper

ছেলে নিয়ে ফুর্তি করতে যাচ্ছিস?

দুর্গাপুরের একটি আয়ুর্বেদিক প্রসাধনী প্রস্তুতকারী সংস্থায় কাজ করি। মাঝে মধ্যেই বাইরে যেতে হয়। সোমবার তেমনই কাজে পুরুলিয়ার বিষপুরিয়া যাচ্ছিলাম। সঙ্গে জনা কয়েক সহকর্মী। রাতে ফিরতে পারব না জেনে স্বামীও ছিলেন। কিন্তু এমন ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা হবে, দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি। দুর্গাপুর থেকে বাসে বাঁকুড়া যাচ্ছিলাম। রাত সওয়া দশটা নাগাদ শহরের, তামলিবাঁধ এলাকায় বাসের জানলা থেকে খেয়াল করলাম, মোটরবাইকে এক দল যুবক আমাদের বাসের পিছু নিয়েছে।

(বাঁকুড়ার নির্যাতিতার বয়ান)

শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৫ ০৩:৪০
থানায় নিগৃহীত দম্পতি। ছবি: অভিজিৎ সিংহ

থানায় নিগৃহীত দম্পতি। ছবি: অভিজিৎ সিংহ

দুর্গাপুরের একটি আয়ুর্বেদিক প্রসাধনী প্রস্তুতকারী সংস্থায় কাজ করি। মাঝে মধ্যেই বাইরে যেতে হয়। সোমবার তেমনই কাজে পুরুলিয়ার বিষপুরিয়া যাচ্ছিলাম। সঙ্গে জনা কয়েক সহকর্মী। রাতে ফিরতে পারব না জেনে স্বামীও ছিলেন। কিন্তু এমন ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা হবে, দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি।

দুর্গাপুর থেকে বাসে বাঁকুড়া যাচ্ছিলাম। রাত সওয়া দশটা নাগাদ শহরের, তামলিবাঁধ এলাকায় বাসের জানলা থেকে খেয়াল করলাম, মোটরবাইকে এক দল যুবক আমাদের বাসের পিছু নিয়েছে। গোবিন্দনগর বাসস্ট্যান্ডে বাস থেকে নামতেই তারা আমাদের ঘিরে ফেলল।

আমার অফিসের এক সহকর্মীর নাম করে শাসাতে শুরু করল। পুরুলিয়ার ওই এলাকায় প্রোডাক্ট বিক্রি করা নিয়ে অফিসের ওই সহকর্মীর সঙ্গে আমার রেষারেষি অবশ্য নতুন নয়। এখানে আসার আগে ফোন করেও তিনি পুরুলিয়া না যাওয়ার জন্য শাসিয়ে ছিলেন। বুঝলাম, আমাদের ঠেকাতে ওই ছেলেগুলোকে পাঠিয়েছেন ওই সহকর্মীই।

ছেলেগুলো এ বার প্রশ্ন শুরু করে, ‘‘এত রাতে এখানে কেন?’’ এক জন তো অভব্য ইঙ্গিত করে চেঁচিয়ে উঠল, ‘‘ছ’জন ছেলেকে নিয়ে ফুর্তি করতে যাচ্ছিস?’’ আমি মাথা ঠান্ডা রেখে বলি, ‘‘ভুল ভাবছেন, প্রোডাক্ট বিক্রি করতে যাচ্ছি।’’ জানাই, পুরুলিয়া যাওয়ার শেষ বাস চলে যাওয়ায় বাঁকুড়াতেই রাত কাটিয়ে সকালে পুরুলিয়া যাব। তাই লজ খুঁজছি। ওদের হাত থেকে কোনও রকমে নিজেদের সরিয়ে লজ খোঁজাও শুরু করি। কিন্তু, বাস স্ট্যান্ড লাগোয়া ফায়ার ব্রিগেড অফিসের সামনে ওই যুবকদের দু’জন মোটরবাইকে চেপে এসে আমার ওড়না ধরে টানাটানি শুরু করে।

এই বার আশপাশ থেকে জনা কয়েক স্থানীয় যুবক এগিয়ে আসে। তাদেরই এক জন ১০০ ডায়াল করে পুলিশে খবর দেওয়ার পরামর্শ দিল। ফোন করলাম। কিন্তু, লাইন ব্যস্ত। স্থানীয় ওই যুবকদেরই এক জন, সঙ্গীরা যাকে সন্টু বলে ডাকছিল, আমাদের একটি মোবাইল নম্বর এগিয়ে দিয়ে ‘হেল্প’ চাইতে বলল। পুলিশ অফিসারের নম্বর ভেবে দ্রুত ফোন করলাম। কিন্তু, ফোনে করে জানতে পারলাম নম্বরটা বাপি চক্রবর্তী নামে স্থানীয় কোনও তৃণমূল নেতার। ফোন পেয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই মোটরবাইক চালিয়ে এসেও পড়লেন তিনি। রাত তখন প্রায় সাড়ে ১২টা। বাপি এসেই মোটরবাইকে চেপে আমাদের ঘিরে ধরা যুবকদের মারধর শুরু করল। দেখলাম কয়েক জন স্থানীয় যুবকও বাপির সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। আমরা যেন হাতে চাঁদ পেলাম!

ভুলটা অবশ্য ভাঙল একটু পরেই। ওই যুবকদের মারধর করে ভাগিয়ে দিয়েই এ বার আমার দিতে চোখ পড়ল বাপির। খেয়াল করলাম, ওর মুখে ভকভক করছে মদের গন্ধ। এ বার, সে আমার সহকর্মীদের উপর চড়াও হল। আমার স্বামীকে চড়-থাপ্পড় মারল। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘‘এ বার বল এত রাতে কী করছিলি?’’

আমার তো তখন ভ্যাবাচ্যাকা অবস্থা। সবার সামনেই আমার হাত ধরে টানাটানিও শুরু করল। এই সময় পুলিশের একটি ভ্যান চলে আসে। পুলিশ দেখেই বাপি রেগে গিয়ে ওই পুলিশদের বলল, ‘‘তোদের দু’ঘণ্টা আগে খবর দেওয়া হয়েছিল, ঘুমোচ্ছিলি?’’ এক পুলিশ কর্মী (বাঁকুড়ার এএসআই ক্ষিতীশ পাইন) আমাদের ভোটার কার্ড দেখে বললেন, ‘‘ওঁরা স্বামী-স্ত্রী। কোনও সমস্যা নেই।’’ এতেই অগ্নিশর্মা হয়ে ওই পুলিশকর্মীর উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ল বাপি। ইউনিফর্মের কলার ধরে তাঁকে চড়-কিল মারতে থাকল। ওই পুলিশ কর্মীর মোবাইল পড়ে যেতে তা পায়ে মাড়িয়ে ভেঙেও ফেলল বাপি। তারপর, পুলিশ কর্মীদের নির্দেশ দিল, ‘‘কেটে পড়, না হলে পাবলিক দিয়ে পেটাব কিন্তু।’’ পুলিশ পালিয়েই যাচ্ছিল। আমি বললাম, ‘‘আপনারা পালিয়ে গেলে আমাদের কী হবে?’’ পুলিশ সরে গিয়ে দাঁড়িয়েই রইল। বাপি জিজ্ঞাসা করল, ‘‘মালকড়ি কী আছে, বের কর।’’ ওকে দেওয়ার মতো কিছু ছিল না। তা বলতেই এ বার আমাদের ধাক্কা মারতে মারতে সে পুলিশের গাড়িতে তুলে দিল।

থানায় এসে পুলিশ আমাদের রেখে বিশাল বাহিনী নিয়ে বেরিয়ে যায়। রাতেই বাপিকে থানায় তুলে নিয়ে আসে। পরে শুনেছি ওকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

(নির্যাতিতার অভিযোগ। তবে, লিখিত অভিযোগে এর অনেক কিছুই নেই। তৃণমূল নেতারা বাপির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগও মানতে চাননি)

bankura rape police tmc trinamool bapi chakroborty
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy