Advertisement
E-Paper

মেয়ে পাচার করেই তেত্রিশে কোটিপতি

বয়স সবে তেত্রিশ। পড়াশোনা ক্লাস এইট। এখনই কোটিপতি বাগদার প্রত্যন্ত গ্রামের সুজয় বিশ্বাস! কোন জাদুতে? লটারি নয়, ‘কৌন বনেগা ক্রোড়পতি’র পুরস্কার নয়, পারিবারিক সম্পত্তির জোরেও নয়।

দীক্ষা ভুঁইয়া ও সীমান্ত মৈত্র

শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৪:১০
সুজয় বিশ্বাস। (ইনসেটে) বাগদায় তার বাড়ি। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

সুজয় বিশ্বাস। (ইনসেটে) বাগদায় তার বাড়ি। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

বয়স সবে তেত্রিশ। পড়াশোনা ক্লাস এইট। এখনই কোটিপতি বাগদার প্রত্যন্ত গ্রামের সুজয় বিশ্বাস!

কোন জাদুতে?

লটারি নয়, ‘কৌন বনেগা ক্রোড়পতি’র পুরস্কার নয়, পারিবারিক সম্পত্তির জোরেও নয়। যৌন ব্যবসার জন্য ভিন্ রাজ্যে নারী পাচার করেই যে সুজয় নিজের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে এক কোটি টাকা জমিয়ে ফেলেছে, তা জানতে পেরে তাজ্জব বনে গিয়েছে রাজস্থানের জোধপুরের উদয় মন্দির থানার পুলিশ। দিন কয়েক আগে সেখানকার একটি তালাবন্ধ ঘর থেকে এক বাংলাদেশি কিশোরী ও এক তরুণীকে উদ্ধারের পরে পুলিশ সুজয়ের নাম জানতে পারে। তার পরেই তাকে গ্রেফতার করা হয়।

উদয় মন্দির থানার তদন্তকারী অফিসার মদন বেনিওয়ালের দাবি, সুজয়ের আগে জোধপুর থেকে তার বাংলাদেশি সঙ্গিনী নন্দিনী ওরফে রুবিনাকে ধরা হয়। দু’জনেই আন্তর্জাতিক নারী ও শিশু পাচার চক্রে জড়িত। জেরায় দু’জনেই অপরাধ কবুল করেছে। শুধু মেয়ে পাচার করেই সুজয় কোটিপতি হয়েছে বলে জানিয়েছে। গত ছ’মাসে তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকা লেনদেন হয়েছে। সুজয়ের পরিবারের অবশ্য দাবি, তাকে ফাঁসানো হয়েছে।

উত্তর ২৪ পরগনার বাগদা ব্লকের লক্ষ্মীপুর গ্রামে সুজয়ের বাড়ি। গ্রামটি ভারতের মূল জনপদ থেকে বিচ্ছিন্ন। অনেকটা দ্বীপের মতো। তিন দিকে সঙ্কীর্ণ কপোতাক্ষ নদী, এক দিকে গদাধরপুর বাওড়। নদীর ও-পারে বাংলাদেশের চৌগাছা থানার শাহাজাদপুর গ্রাম। ৫০০ মিটারের মধ্যে রয়েছে ও-দেশের পাকা রাস্তা। নদীর দু’পাড়ে দাঁড়িয়ে দু’দেশের মানুষ কথা বলেন। এ পাড়ে কাঁটাতারের বেড়া নেই। তবে, গ্রামে ঢোকার মুখে বিএসএফ ক্যাম্প আছে। গ্রামে ৬৫টি পরিবারের বাস। গ্রামবাসীরা বেশির ভাগই ঠিকা শ্রমিক। যে দু’তিনটি একতলা পাকা বাড়ি রয়েছে, তার একটি সুজয়দের। তবে, বাড়ির চাল অ্যাসবেসটসের। খালি চোখে কোটিপতির বাড়ি মনে হওয়া কঠিন।

বাগদা ব্লকের লক্ষ্মীপুর গ্রামে সুজয়ের বাড়ি

সুজয়ের বাবা সুশান্তবাবু বাগদা পঞ্চায়েত সমিতির দু’বারের প্রাক্তন সিপিএম সদস্য। তিন ভাইয়ের মধ্যে সুজয় ছোট। বড়দা বাস-চালক। গ্রামের বাইরে বয়রা বাজারে বিশ্বাস পরিবারের একটি প্রসাধনী সামগ্রীর ছোট দোকান রয়েছে। মেজদার সঙ্গে সেই দোকান চালাত সুজয়। বছর তিনেক আগে সে বিয়ে করে। দু’বছরের একটি ছেলেও রয়েছে।

এহেন ‘নিরীহ’ এক যুবক যে আন্তর্জাতিক নারী পাচার চক্রে জড়িত, তা কী ভাবে টের পেল পুলিশ?

উদয় মন্দির থানা সূত্রে খবর, দিন কয়েক আগে স্থানীয় এক জায়গা থেকে থানায় ফোন আসে। বলা হয়, একটি তালাবন্ধ ঘর থেকে মেয়েদের চিৎকার শোনা যাচ্ছে। পুলিশ তালা ভেঙে বছর চোদ্দোর কিশোরী ও বছর আঠারোর তরুণীকে উদ্ধারের পরে জানতে পারে তাঁরা বাংলাদেশি। কাজের প্রলোভন দেখিয়ে তাঁদের চোরাপথে প্রথমে পশ্চিমবঙ্গে, ও পরে রাজস্থানে নিয়ে আসে নন্দিনী। ওই ঘর থেকে পুলিশ একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের হদিস পায়। যার মালিক সুজয়।

‘নন্দিনী’ নামটা উদয় মন্দির থানার পুলিশ আগেই জানত। কয়েক মাস আগে তিন বছরের একটি মেয়েকে অপহরণের মামলার সূত্রে। তখন তাকে ধরা যায়নি। এ বার অবশ্য নন্দিনী ধরা পড়েছে। তাকে জেরা করেই খোঁজ মিলেছে সুজয়ের বাড়ির ।

দিন কয়েক আগে বাগদায় এসে উদয় মন্দির থানার পুলিশ যখন সুজয়কে ধরে নিয়ে যায়, তখনও পড়শিদের অনেকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না যে ‘টোকো’ (সুজয়ের ডাকনাম) নারী-পাচারে অভিযুক্ত! সুজয়ের মা শুভাদেবীর দাবি, ‘‘ছেলেকে ফাঁসানো হয়েছে।’’ ছেলের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে এক কোটি টাকার উৎস নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘গ্রামের অনেকে বাইরে হাতুড়ে চিকিৎসক বা ঠিকা শ্রমিকের কাজ করেন। তাঁরা তাদের টাকা ছেলের অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বাড়িতে পাঠান।’’ সুজয়ের স্ত্রী এ নিয়ে কোনও কথা বলতে চাননি।

তবে, বয়রা বাজারের কিছু বাসিন্দার দাবি, বছরখানেক আগে থেকে সুজয় সীমান্ত দিয়ে নিষিদ্ধ কাফ সিরাপ এবং ‘ধুর’ (বেআইনি ভাবে দু’দেশের মধ্যে মানুষ পারাপার) পাচারের কাজে যুক্ত হয়ে পড়ে। নিজেদের প্রসাধনী সামগ্রীর দোকানের মাধ্যমে সে পাচারের কাজ এবং টাকা লেনদেন নিয়ন্ত্রণ করত। অবশ্য সুজয় যে নারী-পাচারেও অভিযুক্ত, এ কথা তাঁরাও এই সে দিন জানলেন।তদন্তকারী অফিসারের দাবি, সুজয়কে ধরার পর যে তথ্য পেয়েছেন তা রীতিমতো ভাবাচ্ছে। ভারত-বাংলাদেশ ছাড়া আর কোনও দেশেও চক্রটি সক্রিয় কিনা, তার খোঁজ চলছে।

Girl trafficing Millioniar Police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy