Advertisement
E-Paper

হাসপাতালে দু’দিন ঘুরে চিকিৎসা ‘না পেয়ে’ মৃত্যু

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, নির্মল দাস নামে ৪৫ বছরের ওই যুবক দেগঙ্গা থানার হাদিপুর-ঝিকরা ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের আজিজনগরের বাসিন্দা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০২০ ০৫:০৯
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

একের পর এক হাসপাতালে ঘুরেও চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যুর অভিযোগের তালিকায় আরও একটি ঘটনা যুক্ত হল। এ বার চিকিৎসা না-পেয়ে দেগঙ্গার এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠল। একের পর এক হাসপাতালে ঘোরার পরে সোমবার রাতে কার্যত বিনা চিকিৎসায় ওই যুবকের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে তাঁর পরিবার। যদিও তাঁদের তরফে স্বাস্থ্য দফতর কিংবা প্রশাসনের কোনও মহলে লিখিত অভিযোগ করা হয়নি।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, নির্মল দাস নামে ৪৫ বছরের ওই যুবক দেগঙ্গা থানার হাদিপুর-ঝিকরা ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের আজিজনগরের বাসিন্দা। দেগঙ্গা ব্লকের খাদ্য বিভাগের অস্থায়ী কর্মী ছিলেন নির্মল। মাস তিনেক আগে মোটরবাইক দুর্ঘটনায় চোট পাওয়ার পর থেকে স্নায়ুজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। কখনও হাসপাতালে, কখনও বাড়িতে রেখে তাঁর চিকিৎসা চলছিল। রবিবার হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। তাঁর পরিবারের অভিযোগ, রবিবার একটি এবং সোমবার দু’টি সরকারি হাসপাতাল ও একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরেও কোথাও ভর্তি করাতে পারেননি তাঁরা। সোমবার রাতে পথেই অ্যাম্বুল্যান্সে মৃত্যু হয় নির্মলের। তাঁর স্ত্রী কাকলি দাস মঙ্গলবার বলেন, ‘‘রবিবার থেকে আমার স্বামী খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে দেন। পেট, মুখ ফুলে যাচ্ছিল। আর জি কর হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে বেড নেই বলে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। তার পরে ওই দিন ওঁকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনা হয়।’’

পরিবার সূত্রের খবর, সোমবার ভোর থেকে নির্মলের অবস্থার আরও অবনতি হতে থাকে। দ্রুত তাঁকে স্থানীয় হাড়োয়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। নির্মলের পরিবার জানিয়েছে, সেখানে ভর্তি না নিয়ে এসএসকেএম হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। নির্মলের ভাইপো প্রসেনজিৎ দাস এ দিন বলেন, ‘‘এর পরে সকাল ৮টা থেকে বিকেল পর্যন্ত এসএসকেএমে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরানো হয় আমাদের। কাকা তখন খুব কষ্ট পাচ্ছেন। আমরা হাতজোড় করে অনেক অনুরোধ করেছিলাম। কান্নাকাটি করে বলেছিলাম, কাকার করোনা হয়নি। কোনও উপসর্গও নেই। একটু চিকিৎসা করুন। কিন্তু কেউ কথা শোনেনি।’’

উপায় না দেখে ওই হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে ৩৬০০ টাকা দিয়ে একটি অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করে মিন্টো পার্কের কাছে একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে নির্মলকে নিয়ে যান পরিজনেরা। প্রসেনজিৎ বলেন, ‘‘সেখানেও এক ঘণ্টারও বেশি সময় কাকাকে ফেলে রাখা হয়। বলা হয়, কোভিড টেস্ট করিয়ে রিপোর্ট না পেলে ভর্তি নেওয়া হবে না। সঙ্গে টাকা থাকলেও কাকার চিকিৎসা করাতে পারলাম না।’’

ইতিমধ্যে নির্মলের শ্বাসকষ্ট শুরু হয় বলে জানিয়েছে তাঁর পরিবার। অ্যাম্বুল্যান্সের অক্সিজেনেও কাজ হয়নি। ওই নার্সিংহোম থেকে বাইপাসের ধারে আর একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়ার পথে অ্যাম্বুল্যান্সের মধ্যে মৃত্যু হয় নির্মলের। পরে তাঁর দেহ বাড়ি ফিরিয়ে এনে সোমবার রাতেই দাহ করা হয়।

১৮ বছরের এক মেয়ে ও ১২ বছরের এক ছেলে রয়েছে নির্মলের। তাঁর রোজগারেই সংসার চলত। এ দিন মেয়ে নিবেদিতা বলেন, ‘‘এত জায়গায় নিয়ে যাওয়া হল, তার পরেও বাবার চিকিৎসা হল না। এত কষ্ট পেয়ে বাবা চলে গেল। এমন ভয়ঙ্কর ঘটনা আর যেন কোনও পরিবারের সঙ্গে না হয়।’’

ঘটনাটি জানার পরে এ দিন রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘করোনা পরিস্থিতির মধ্যে রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় সমস্যা হচ্ছে। তবে আজ থেকে এই সমস্যার জন্য কী করা যায়, তা দেখা হচ্ছে। এই রকম ক্ষেত্রে প্রতিটি হাসপাতালে জরুরি পরিষেবার জন্য আলাদা করে তিন-চারটি শয্যা যাতে রাখা যায়, সেটা দেখা হচ্ছে।’’

Death Deganga Coronavirus in Kolkata
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy