আরজি কর-কাণ্ডের এক বছর পার হল শনিবার। আর সেই দিনেই ওই ঘটনার ‘বিচার’ চেয়ে শহরের দু’প্রান্তে কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছিল। সকালে নির্যাতিতার বাবা-মায়ের ডাকে নবান্ন অভিযান কর্মসূচি হয়। মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং বিজেপির বেশ কয়েক জন নেতা-নেত্রী। অন্য দিকে, আরজি কর-কাণ্ডে ‘বিচার’ চেয়ে বিকেলে কালীঘাট অভিযানের ডাক দিয়েছিল বাম ঘেঁষা চিকিৎসকদের সংগঠন অভয়া মঞ্চ। নবান্ন অভিযানে গিয়ে জখম হন নির্যাতিতার মা। পুলিশের লাঠির আঘাতেই তাঁর কপাল ফুলেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। অভয়া মঞ্চের কর্মসূচি থেকে অবশ্য বলা হল, পুলিশ তো বটেই, এই ঘটনার জন্য শুভেন্দুরাও দায়ী। সরাসরি শুভেন্দুর নাম অবশ্য নেওয়া হয়নি।
পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী, শনিবার বিকেল ৪টেয় হাজরা মোড়ে জমায়েত শুরু করেন অভয়া মঞ্চের সদস্যেরা। কালীঘাট অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন তাঁরা। যদিও পুলিশের তরফে জানানো হয়, তারা এই কর্মসূচির অনুমতি দেয়নি। প্রতিবাদের জন্য আয়োজকদের বিকল্প জায়গাও বলে দেওয়া হয়েছিল বলে জানায় লালবাজার। জমায়েতস্থল থেকে ১০ হাত দূরেই ব্যারিকেড বসিয়ে রেখেছিল পুলিশ। মোতায়েন ছিল বিশাল বাহিনীও। মিছিল কিছুটা এগোতেই আটকে দেয় পুলিশ। তার পর হাজরা পার্কের সামনে ছোট মঞ্চ বেঁধে প্রতিবাদ চলে। মানস গুমটা, উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো কিছু সিনিয়র চিকিৎসকের পাশাপাশি প্রতিবাদ কর্মসূচিতে দেখা যায় রাজ্য সিপিএমের প্রথম সারির কয়েক জন নেতা-নেত্রীকেও। বহু সাধারণ মানুষও মিছিলে পা মেলান।
পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি আন্দোলনকারীদের। —নিজস্ব চিত্র।
আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসক-পড়ুয়াকে ধর্ষণ এবং খুনের প্রতিবাদে বিচার চেয়ে ধর্মতলায় অনশনে বসেছিলেন জুনিয়র ডাক্তার পুলস্ত্য আচার্য। শনিবার হাজরার মঞ্চ থেকে বক্তৃতা করেন তিনি। নির্যাতিতার মা আক্রান্ত হয়েছেন শুনে তিনি বলেন, “আমরা এক বছর অভয়ার বাবা-মাকে নিয়ে পথ চলেছি, মিছিল করেছি। কিন্তু এমন ঘটনা ঘটেনি। আজ ঘটল। তাই এটাও বলতে হবে।” এই ঘটনার জন্য নবান্ন অভিযানের উদ্যোক্তাদেরই দায়ী করেন তিনি। একই কথা বলেন মঞ্চের আহ্বায়ক তমোনাশ চৌধুরীও। প্রসঙ্গত, শনিবার নির্যাতিতার মা-বাবাই নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন। তাতে সমর্থন করেছিলেন শুভেন্দু। শুভেন্দুর নাম না-করলেও অভয়া মঞ্চ প্রকারান্তরে শুভেন্দুকেই এর জন্য দায়ী করেছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন:
অভয়া মঞ্চের প্রতিবাদ কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছিলেন নদিয়ার কালীগঞ্জে দুষ্কৃতীদের বোমা হামলায় নিহত কিশোরী তমন্না খাতুনের বাবা-মা। ছিলেন আলিপুরদুয়ারের জয়গাঁওয়ের নির্যাতিতার মা-ও। গত ২৩ জুন নদিয়ার কালীগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে তৃণমূলের জয় নিশ্চিত হতেই শাসকদলের বিজয়মিছিল থেকে সিপিএম সমর্থকদের বাড়ি লক্ষ্য করে বোমা ছোড়া হয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। যে বোমার আঘাতে মৃত্যু হয় চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী তমন্নার। শনিবার আরজি কর-কাণ্ডে বিচার চাওয়ার পাশাপাশি নিজের মেয়ের জন্যও বিচার চান তমন্নার মা। বলেন, ‘‘আমার মেয়ে কোনও দল বুঝত না। সে দেওয়ালে খাতায় ভারতমাতার ছবি আঁকত। তাকে খুন করেছে মুখ্যমন্ত্রীর দলের লোক। ওঁর পদত্যাগ চাই।’’ জয়গাঁওয়ের নির্যাতিতার মা বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চাই। এই সরকারের বদল না হলে কোনও নির্যাতিতা বিচার পাবে না।’’
নবান্ন অভিযান কর্মসূচিতে শুভেন্দু অধিকারী। শনিবার। —নিজস্ব চিত্র।
অভয়া মঞ্চের কর্মসূচি চলে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত। তার পর মঞ্চের তরফে জানানো হয়, তাদের সদস্যেরা নির্যাতিতার মা-কে দেখতে হাসপাতালে যাবেন। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে চলা কর্মসূচির জেরে কিছু সময়ের জন্য যান চলাচল ব্যাহত হয় হাজরা মোড়ে। প্রতিবাদীরা অনেকেই রাস্তায় বসে পড়েছিলেন। পরে পুলিশের অনুরোধে এক দিকের রাস্তা খুলে দেওয়া হয়। গোটা কর্মসূচিতে একাধিক বক্তা বক্তৃতা করেন। কমবেশি প্রায় সকলেই রাজ্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেও সরাসরি রাজনৈতিক বদলের কথা ওঠে দু’বার। এর বার, প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক ভারতী মুখোপাধ্যায়ের বক্তৃতায়, আর এক বার অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্রের বক্তৃতায়। শ্রীলেখা ২০২৬ সালে রাজ্যে পালাবদলের ডাক দেন। বলেন, “২৬-এ বদল দরকার।”