Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ঢালাও রদবদল, যুবরাজের অভিষেকে সিলমোহর

চলতি ধারা বজায় রেখেই তৃণমূলে যুবরাজের অভিষেক আরও প্রতিষ্ঠা পেল। সেই সঙ্গে আরও স্পষ্ট হল ‘অ-মুকুলায়নে’র প্রক্রিয়াও! নেতা-মন্ত্রী-সাংসদ-বিধায়ক ও কাউন্সিলরদের নিয়ে বৈঠক করে শুক্রবার দলের সাংগঠনিক স্তরে বেশ কিছু রদবদল আনলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর মধ্যে সব চেয়ে উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্ত, তৃণমূলের যুব ও ‘যুবা’ নামে দুই সংগঠনের মিশে যাওয়া।

সাংবাদিক বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশে মুকুল রায়। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।

সাংবাদিক বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশে মুকুল রায়। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:৪০
Share: Save:

চলতি ধারা বজায় রেখেই তৃণমূলে যুবরাজের অভিষেক আরও প্রতিষ্ঠা পেল। সেই সঙ্গে আরও স্পষ্ট হল ‘অ-মুকুলায়নে’র প্রক্রিয়াও!

নেতা-মন্ত্রী-সাংসদ-বিধায়ক ও কাউন্সিলরদের নিয়ে বৈঠক করে শুক্রবার দলের সাংগঠনিক স্তরে বেশ কিছু রদবদল আনলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর মধ্যে সব চেয়ে উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্ত, তৃণমূলের যুব ও ‘যুবা’ নামে দুই সংগঠনের মিশে যাওয়া। কয়েক বছর আগে ‘যুবা’ নামে পৃথক সংগঠন করে ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে তার মাথায় বসান মমতা। তিনিই ফের যুব তৃণমূলের সঙ্গে ‘যুবা’কে মিশিয়ে দিয়ে তার দায়িত্বে বসালেন ‘যুবরাজ’ অভিষেককেই!

অভিষেকের উত্থান যদি মুদ্রার এক পিঠ হয়, অন্য পিঠে তা হলে আছে দলের মধ্যে মুকুল রায়ের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত বলে নেতাদের গুরুত্ব খর্ব! কয়েক মাস আগে কংগ্রেস থেকে যুব নেতা সৌমিত্র খানকে তৃণমূলে এনেছিলেন মুকুল। তাঁকেই যুব তৃণমূলের রাজ্য সভাপতির নতুন দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ বার এক ঝটকায় সেই সৌমিত্রকে পদ থেকে সরিয়ে অভিষেকের হাতেই সব দায়িত্ব তুলে দিয়েছেন মমতা। বস্তুত, যুব তৃণমূলের গোটা কমিটিই ভেঙে দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। যে কমিটিতে কার্যকরী সভাপতি ছিলেন মুকুল-পুত্র শুভ্রাংশু রায়!

তৃণমূলের এক প্রথম সারির নেতার কথায়, “অভিষেকের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের যে প্রক্রিয়া দলের মধ্যে চলছিল, দলনেত্রী সাংগঠনিক ভাবে তাতে সিলমোহর লাগিয়েছেন!” যদিও তৃণমূল ভবনে এ দিন বৈঠক শেষে স্বয়ং মমতা শুধু বলেছেন, “প্রশাসনিক স্তরে আমরা নিয়মিত কাজের পর্যালোচনা করি। দলেও তিন মাস অন্তর পর্যালোচনা বৈঠক করি। এটাও তেমন বৈঠক ছিল।” বিভিন্ন জেলা কমিটির বৈঠক ৫ নভেম্বর থেকে শুরু হবে বলেও মমতা জানিয়েছেন।

সারদা-কাণ্ডের পর থেকেই দলনেত্রীর আস্থা হারিয়েছেন মমতার ‘আহমেদ পটেল’ মুকুল। মুখ্যমন্ত্রীর সিঙ্গাপুর সফরের (কয়লা মাফিয়া নিয়ে যে সফরে বিতর্কও হয়েছে) পর থেকেই মুকুলের গুরুত্ব খর্বের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বর্ধমান-কাণ্ড প্রকাশ্যে আসার সময়ে তা আরও গতি পেয়েছে। তৃণমূলের একাংশের মত, ভবিষ্যতে যে কোনও ধরনের পরিণতির কথা মাথায় রেখেই সংগঠনের ভার মুকুলের হাত থেকে নিয়ে বিশ্বস্ত ‘রাহুল গাঁধী’র কাছে অর্পণ করছেন তৃণমূল নেত্রী।

রদবদলের ধাক্কা যুব ছাড়িয়ে দলের অন্যান্য শাখা সংগঠনেও লেগেছে। দলের মহিলা সংগঠনের রাজ্য সভানেত্রী এখন চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। এখন থেকে মহিলা সংগঠনের সার্বিক দেখভালের ভার মমতা দিয়েছেন সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদারকে। যিনি সিঙ্গুর আন্দোলনের সময়েও মহিলা সংগঠনের দায়িত্বে ছিলেন এবং আরও তাৎপর্যপূর্ণ তথ্য, শাসক দলের অন্দরে যিনি আদৌ মুকুল-শিবিরের নেত্রী বলে পরিচিত নন! একই ভাবে দলের সাধারণ সম্পাদকের কমিটি থেকে বাদ পড়েছেন মহুয়া মৈত্র ও মুকুল-ঘনিষ্ঠ শিউলি সাহা। তাঁদের বদলে ওই কমিটিতে এসেছেন মন্ত্রী শশী পাঁজা ও পরিষদীয় সচিব অসীমা পাত্র।

আরও একটি তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দোর্দণ্ডপ্রতাপ রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডাও এখন থেকে অতীত! তাঁর জায়গায় ছাত্র সংগঠনের নতুন রাজ্য সভাপতি করা হল অশোক রুদ্রকে। তৃণমূলের এক সূত্রের বক্তব্য, অশোক রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী তথা দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আস্থাভাজন। সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুলের ডানা ছেঁটে পার্থ ও সুব্রত বক্সীর হাতে যে ভাবে যৌথ সাংগঠনিক দায়িত্ব দিয়েছেন মমতা, তার পথ ধরে অশোকের ছাত্র সংগঠনে অধিষ্ঠান হল বলে শাসক শিবিরের ব্যাখ্যা। ছাত্র সংগঠনের পদ থেকে সরালেও শঙ্কুদেবকে দলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক করেছেন মমতা। যদিও শুভেন্দু অধিকারী, অরূপ বিশ্বাস, ফিরহাদ (ববি) হাকিমের অন্য সাধারণ সম্পাদকদের বিভিন্ন জেলার পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হলেও শঙ্কুদেবকে এ দিন অন্তত তেমন কোনও ভার দেওয়া হয়নি। আবার সামগ্রিক ভাবে দলের ট্রেড ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত নেতা হিসাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বর্ষীয়ান সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে। যে সংগঠনের এখন রাজ্য সভানেত্রী মমতা-ঘনিষ্ঠ দোলা সেন।

কিছু দিন আগে ডেরেক ও’ব্রায়েনের পাশাপাশি দলের জাতীয় মুখপাত্রের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল অমিত মিত্রকে। সরকারে গুরু দায়িত্বের কারণেই তাঁকে ওই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। তাঁর জায়গায় জাতীয় মুখপাত্র করা হয়েছে লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। সুদীপ-ডেরেককে সহায়তা করবে রত্না দে নাগ, কাকলি, সুলতান আহমেদ ও শশী চার জনের টিম। কলকাতার জন্য মুখপাত্র হন সুব্রত মুখোপাধ্যায় ও পার্থবাবু। প্রতি জেলাতেও আলাদা মুখপাত্র বেছে দিয়েছেন মমতা।

তৃণমূলের অন্দরের খবর, বৈঠকে এ দিন পার্শ্বচরিত্র দেখিয়েছে মুকুলকে! ঠিক যেমন দেখিয়েছিল ২৪ ঘণ্টা আগে দিল্লির যন্তর মন্তরে অভিষেকের নেতৃত্বে তৃণমূলের প্রতিবাদ-সভায়। বৈঠকে এ দিন উল্লেখযোগ্য অনুপস্থিতি বলতে সাংসদ শুভেন্দু, তাপস পাল, শতাব্দী রায়, মিঠুন চক্রবর্তী, দেব, যোগেন চৌধুরী, মুনমুন সেন এবং মন্ত্রী মদন মিত্র ও শ্যামাপদ মুখোপাধ্যায়। শুভেন্দুর চোখে সংক্রমন হয়েছে। আর মদন অসুস্থতার জন্য বৈঠকে থাকতে পারবেন না বলে দলনেত্রীকে চিঠি দিয়েছিলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE