Advertisement
০৫ মে ২০২৪

সিট বেল্ট বাঁধা শিকেয়, চিন্তায় শুধু এয়ার ব্যাগ

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের থেকেও গুরুতর আহত হতে পারতেন তাঁর ব্যক্তিগত সচিব সুমিত রায়। মঙ্গলবার দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে অভিষেকের গাড়ি যখন একের পর এক ডিগবাজি খাচ্ছে, সুমিত তখন সেই গাড়িতে চালকের পাশের আসনে বসে।

হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী। বুধবার সুদীপ্ত ভৌমিকের তোলা ছবি।

হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী। বুধবার সুদীপ্ত ভৌমিকের তোলা ছবি।

দেবারতি সিংহচৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:২৩
Share: Save:

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের থেকেও গুরুতর আহত হতে পারতেন তাঁর ব্যক্তিগত সচিব সুমিত রায়। মঙ্গলবার দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে অভিষেকের গাড়ি যখন একের পর এক ডিগবাজি খাচ্ছে, সুমিত তখন সেই গাড়িতে চালকের পাশের আসনে বসে। অথচ, তাঁর চোট তুলনায় অনেক কম। কেন?

এর অন্যতম কারণ, নিয়মমাফিক সিট বেল্ট পরে বসেছিলেন সুমিত। তাই গাড়ি ওল্টানোর ধাক্কায় তিনি ছিটকে যাননি। আর চালকের আসনের সামনে ছিল এয়ার ব্যাগের ব্যবস্থা। দুধের ভ্যানটিকে যখন এসইউভি-টি ধাক্কা মারে, সঙ্গে সঙ্গে সুমিত ও চালকের সামনের এয়ার ব্যাগ খুলে যায়। এই দুইয়ের জন্যই শেষ পর্যন্ত বেঁচে গিয়েছেন সুমিত।

অভিষেক বসেছিলেন ঠিক পিছনের আসনে, বাঁ দিক ঘেঁষে। সেখানে এয়ার ব্যাগ ছিল না। কিন্তু তিনি কি সিট বেল্ট পরেছিলেন? সাধারণত, পিছনের আসনে বসলে কেউই সিট বেল্ট বাঁধেন না, দু-এক জন ব্যতিক্রম ছাড়়া। একই গোত্রের সরকারি এসইউভি চড়ে আখছার জেলা সফরে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি আবার চালকের পাশের আসনে বসাই পছন্দ করেন। তিনিও কি সিট বেল্ট পরেন?

যে হাসপাতালে অভিষেক ভর্তি, তার চিকিৎসক-কর্তারাও এই নিয়ে মুখ খুলেছেন। হাসপাতালের সিইও প্রদীপ টন্ডন বলেন, ‘‘মাঝের সিটে বসলে অনেকেই সিট বেল্ট বাঁধেন না। কিন্তু অভিষেক যদি বেল্ট লাগাতেন, তা হলে বিপদ কম হতো।’’ তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, সামনের সিটে বসে মুখ্যমন্ত্রী নিজেই তো সিট বেল্ট বাঁধেন না? জবাবে টন্ডন বলেন, ‘‘আমরা তো সব সময়ই ওঁকে বলি সিট বেল্ট বাঁধতে। আপনারাও বলুন, প্লিজ!’’ সুমিতের বাবা শম্ভুনাথ রায়ও এ দিন বলেন, ‘‘ভাগ্যিস এয়ার ব্যাগ ছিল, আর ও সিট বেল্টটা পরেছিল তাই আজ ওকে দেখতে পাচ্ছি।’’

বুধবার সরকার ও শাসক দলের আলোচনায় কিন্তু সিট বেল্টকে পিছনে ফেলে দিয়েছে এয়ার ব্যাগ নিয়ে উদ্বেগ। কিছু মন্ত্রী অবশ্যই ঠেকে শিখছেন। যেমন, বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। বললেন, ‘‘আমার গাড়িতে এয়ার ব্যাগ রয়েছে। কিন্তু গত কালের দুর্ঘটনা দেখে ঠিক করেছি, পিছনের আসনে বসলেও বেল্ট পরে নেব।’’ একই মত তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ব্রাত্য বসুর। তাঁরও বক্তব্য, ‘‘আমি মনে করি রাস্তার নিয়ম মেনে চলা উচিত সকলেরই।’’ তবে সবাই এমন নন। হাসপাতালের এক তলার বোর্ড রুমে বসে মন্ত্রীদের অনেকেরই আক্ষেপ, ‘‘আরে আমাদের গাড়িতে এয়ার ব্যাগ নেই! এ রকম দুর্ঘটনা হলে তো খুঁজে পাওয়া যাবে না!’’

আলোচনায় অবশ্য সিট বেল্ট বাঁধার বিষয়টা কারও মুখে সে ভাবে আসেনি। সরকারি সূত্রের খবর, তপন দাশগুপ্ত, শশী পাঁজা, অরূপ রায়, জেমস কুজুরের মতো মন্ত্রীর গাড়িতে এয়ার ব্যাগ নেই। মন্ত্রী-আমলাদের গাড়ি পরিবহণ দফতরের সেন্ট্রাল কার পুল থেকে দেওয়া হয়। তাদের হাতে যে শ’খানেক গাড়ি আছে, তার মোটে ৩০ শতাংশতে এয়ার ব্যাগ। দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘এয়ার ব্যাগ হালে জনপ্রিয় হয়েছে। তার পর থেকে এয়ার ব্যাগ-সহ গাড়িই কেনা হয়েছে।’’ মুখ্যমন্ত্রীকেও গত দেড় বছর ধরে এমন গাড়িই দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়াও অরূপ বিশ্বাস, শুভেন্দু অধিকারী, ফিরহাদ হাকিমদের গাড়িতে এয়ার ব্যাগ আছে।

এই ক্ষোভের আবহে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এয়ার ব্যাগ লাগানো গাড়ি সবাইকে দেওয়া সম্ভব নয়। আসল কথা হল, সাবধানের মার নেই।’’ সাবধানতা শুধু সিট বেল্ট পরাই নয়, আরও অনেক ক্ষেত্রেই নেওয়া উচিত, তা জানালেন পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। বললেন, ‘‘আমার মতো জেলা সফর খুব কম মন্ত্রীই করেন। আমার চালকদের বলা রয়েছে, হাইওয়েতে গাড়ি কখনওই যেন ঘণ্টায় সত্তর থেকে আশি কিলোমিটারের বেশি বেগে না চালায়। তা ছাড়া হাইওয়েতে গাড়ি চললে তিন ঘণ্টা অন্তর চালকদেরও কিছুটা সময় চা-জল খাওয়ার সুযোগ দিতে হয়।’’

প্রশ্ন উঠেছে, এই সব নিয়ম কি আদৌ মানা হয়? তিন মাস হল মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’ প্রচার শুরু করেছে পরিবহণ দফতর। কিন্তু নেতা-মন্ত্রীরাই যদি এমন মনোভাব দেখান, তা হলে আমজনতার কাছে কী বার্তা যাবে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Abhishek banerjee seat belt accident
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE