পাকিস্তানের সন্ত্রাস এবং ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর কথা বিশ্বকে জানাতে বহুদলীয় সংসদীয় দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। গত ৪৮ ঘণ্টা ধরে সেই প্রতিনিধিদলের সদস্যদের নাম চূড়ান্ত করার কেন্দ্রীয় সরকারের প্রক্রিয়া নিয়ে তৃণমূল তীব্র আপত্তি জানিয়েছিল। অবশেষে সেই বরফ গলল। সূত্রের খবর, মঙ্গলবার সকালে কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী কিরেন রিজিজু ফোন করেছিলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। দু’জনের মধ্যে বেশ খানিক ক্ষণ কথা হয়। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, সংসদীয় দলে তৃণমূলের তরফে যাবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিষেকের নাম প্রস্তাব করেন মমতাই।
দলকে না-জানিয়ে বহরমপুরের তৃণমূল সাংসদ ইউসুফ পাঠানকে সংসদীয় দলে তৃণমূলের প্রতিনিধি হিসাবে রাখায় ক্ষোভপ্রকাশ করেছিলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা এবং সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক। দলের দুই সর্বোচ্চ নেতৃত্ব স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন, কেন্দ্র বা পক্ষান্তরে শাসকদল বিজেপি ঠিক করতে পারে না তৃণমূলের তরফে কে যাবেন। তা দলই ঠিক করবে। মমতা এবং অভিষেক সোমবার এ-ও স্পষ্ট করেছিলেন, কেন্দ্র যদি অনুরোধ করে, তা হলে তৃণমূল নিশ্চয়ই তা বিবেচনা করবে। সেই সূত্রেই ওই দল থেকে পাঠানের নাম প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছিল রবিবার।
আরও পড়ুন:
-
পাকিস্তানের মুখোশ খুলতে সাংসদদের বদলে দেশে দেশে পাঠানো হোক শহিদ পরিবারের সদস্যদের: কেন্দ্রকে অভিষেক
-
‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পর মোদী সরকারের সর্বদলীয় প্রতিনিধি দল থেকে তৃণমূল ফিরিয়ে নিল ইউসুফের নাম, কী কারণে
-
সৌদিতে ওয়েইসি, ব্রাজ়িলে তারুর! বাংলারও দু’জন কেন্দ্রের ৫৯ জনের প্রতিনিধিদলে, কাকে কোন দেশে পাঠাচ্ছেন মোদী
-
‘পারফরম্যান্স’-কে ভিত্তি করেই রদবদল তৃণমূলে, খেটেছেন যাঁরা, তাঁরাই পুরস্কৃত হয়েছেন, স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন অভিষেক
বাংলার শাসকদল সূত্রে খবর, রিজিজুর সঙ্গে ফোনে কথা হওযার সময় দলের নেতৃত্বকে না-জানিয়ে কী ভাবে কেন্দ্র তৃণমূলের প্রতিনিধির নাম ঠিক করেছিল, তা নিয়ে ক্ষোভ জানান মমতা। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও মমতাকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। পরে আলোচনার মধ্যে দিয়েই ঐকমত্যে পৌঁছেছে দু’পক্ষ। উল্লেখ্য, রিজিজুই ফোন করে সরাসরি যোগাযোগ করেছিলেন পাঠানের সঙ্গে। তাঁর পাসপোর্ট সংক্রান্ত নথি চেয়েছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। দলের কানে যাওয়ার পরেই বিষয়টি রুখতে মাঠে নেমেছিলেন তৃণমূলের সংসদীয় দলের প্রথম সারির নেতারা।
সোমবার মমতা জানিয়েছিলেন, বিদেশনীতির বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে তৃণমূল রয়েছে। কিন্তু তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ বিষয় দলই ঠিক করবে। একই কথা বলেছিলেন অভিষেকও। সোমবার রাতে বিদেশ বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকশেষে অভিষেক দিল্লিতে বলেছিলেন, ‘‘কেন্দ্র চাইলে এক ঘণ্টায় পাঁচ জনের নাম দিয়ে দেব। কিন্তু তা দল ঠিক করবে। অন্য কেউ নয়।’’ তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক এ-ও বলেছিলেন, ‘‘কেউ কেউ বলছে তৃণমূল বয়কটের রাজনীতি করছে। না, আমরা বয়কটের রাজনীতি করছি না।’’ রবিবার রাত থেকে এই নিয়ে তৃণমূল কেন্দ্রের উপর ‘চাপ’ তৈরি করা শুরু করেছিল। এর পরই মঙ্গলবার মমতার কাছে আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রতিনিধি পাঠানোর ‘অনুরোধ’ করলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।