Advertisement
E-Paper

স্কুল নিয়েও মত বদলাল পুলিশ

তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কর্মিসভা করার কথা আজ, শনিবার। তাঁর জন্য পুলিশ রাখতে শুক্রবার রামপুরহাট শহরের দু’টি স্কুল নিয়েছিল প্রশাসন।

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০১৫ ০৩:৪৪
ক্লাস বাতিল হতেই স্কুলে ঢুকল পুলিশ ভ্যান। শুক্রবার দুপুরে রামপুরহাট জিতেন্দ্রলাল বিদ্যাভবনে। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম।

ক্লাস বাতিল হতেই স্কুলে ঢুকল পুলিশ ভ্যান। শুক্রবার দুপুরে রামপুরহাট জিতেন্দ্রলাল বিদ্যাভবনে। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম।

তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কর্মিসভা করার কথা আজ, শনিবার। তাঁর জন্য পুলিশ রাখতে শুক্রবার রামপুরহাট শহরের দু’টি স্কুল নিয়েছিল প্রশাসন। হয়েছিল শনিবার ছুটির ঘোষণা। কিন্তু ‘আনন্দবাজার’ বিষয়টি নিয়ে নাড়াচাড়া করতেই বদলে গেল ছবি। রাতে বীরভূমের পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার দাবি করেন, ‘‘কোনও স্কুলেই পুলিশ থাকছে না। স্কুল দু’টি শনিবার খোলা থাকবে।’’

এলাকার দুই নামজাদা স্কুল—জিতেন্দ্রলাল বিদ্যাভবন ও রামপুরহাট গার্লস হাইস্কুলের ওই ঘটনায় ক্ষুব্ধ শিক্ষক এবং অভিভাবকদের একটা বড় অংশ। এক সাংসদের নিরাপত্তার নামে পুলিশের পদক্ষেপকে ‘রাজনৈতিক অতিসক্রিয়তা’ বলেই বিঁধেছেন বিরোধীরা। দুই স্কুল কর্তৃপক্ষেরই বক্তব্য, পুলিশই চিঠি দিয়ে শুক্রবার দুপুর থেকে শনিবার পর্যন্ত স্কুলের দখল চেয়েছিল। তাই শনিবার ছুটি ঘোষণা করতে তাঁরা বাধ্য হয়েছেন। জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) মহাদেব সোরেন বলেন, ‘‘কী হয়েছে খোঁজ নিয়ে দেখব।’’

গার্লস হাইস্কুল লাগোয়া পুরসভার মাঠে অভিষেকের কর্মিসভা রয়েছে শনিবার দুপুরে। শুক্রবার দুপুরে স্কুল দু’টিতে পৌঁছয় রামপুরহাট থানার চিঠি। সেগুলিতে বলা হয়েছে, অভিষেক আসছেন রামপুরহাট সফরে। সে জন্য জিতেন্দ্রলাল বিদ্যাভবনে ১০০ ও গার্লস হাইস্কুলে ৫০ পুলিশ থাকবেন। দুপুর থেকে পুলিশদের থাকার ব্যবস্থা করতে হবে।

বিদ্যাভবনের প্রধান শিক্ষক গৌরচন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘‘চিঠি পেয়ে পুলিশকে বলি, স্কুলে পড়ুয়ারা আছে। যাঁরা থাকবেন, তাঁরা আসার পরেই ব্যবস্থা করা হবে।’’ দুপুর ২টোয় স্কুলের গেটের কাছে পুলিশের গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে জানিয়ে প্রধান শিক্ষকের কাছে থানা থেকে ফোন আসে। সেই ফোনে পুলিশকর্মীদের স্কুলের ভিতরে থাকার ব্যবস্থা করার জন্য বলা হয়।

গৌরবাবু বলেন, ‘‘এর পরেই ক্লাসে-ক্লাসে গিয়ে পড়ুয়াদের জানিয়ে দিই, পুলিশের প্রয়োজনে শনিবার পর্যন্ত স্কুলের পঠনপাঠন বন্ধ থাকছে। তখনই এ দিনের মতো স্কুল ছুটি দিতেও বাধ্য হই।’’ হঠাৎ করে ক্লাস বাতিল হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়ে পড়ুয়ারা। বিশেষ করে তারা, যাদের অভিভাবকেরা নিতে আসেন।

গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ছায়া চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দুপুর ২টো থেকেই স্কুলের গেটের বাইরে মহিলা পুলিশকর্মীরা এসে ভিতরে ঢুকতে চাইছিলেন। কিন্তু এ ভাবে হঠাৎ করে মেয়েদের স্কুলের দখল নেওয়া যায় না। স্কুল ছুটি হওয়ার কথা ছিল সাড়ে ৪টেয়। পুলিশকর্মীদের জন্য এ দিন আধ ঘণ্টা আগে ছু’টি দিয়েছি।’’

শহরের বাসিন্দা তথা সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সঞ্জীব বর্মনের কটাক্ষ, ‘‘ওই সাংসদ মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো। তাই তাঁর রাজনৈতিক কর্মসূচির জন্য পুলিশ এত অতি-তৎপর। আচমকা এ ভাবে স্কুলের দখল নিলে ক্লাস বাতিল হবে, বিভ্রান্তি হবে— এটা তাদের মাথায় ছিল না।’’ তা-ই যদি হবে, তা হলে পুলিশ পরে মত বদলাল কেন? পুলিশ সুপার জবাব দেননি। তবে জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘পুলিশের ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে বুঝেই সিদ্ধান্ত বদল হয়েছে।’’চেষ্টা করেও এ ব্যাপারে অভিষেকের বক্তব্য জানা যায়নি। জবাব আসেনি মেসেজের। তবে এলাকার বিধায়ক তথা রাজ্যের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘প্রশাসন যা ভাল বুঝেছে, তা-ই করেছে।’’

দুই স্কুল কর্তৃপক্ষই দাবি করেছেন, রাত পর্যন্ত পুলিশের মত বদলের কথা সরকারি ভাবে জানানো হয়নি। ফলে, আজ স্কুল দু’টি খোলা থাকবে কি না, তা নিয়ে সংশয় কাটছে না।

Rampurhat Abhishek Banerjee Trinamool BJP police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy