Advertisement
E-Paper

লাঠি, রড নিয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে অবাধে তাণ্ডব এবিভিপি-র 

চার নম্বর গেট দিয়ে ঢুকেই ডান দিকে আর্টস ফ্যাকাল্টি স্টুডেন্ট ইউনিয়নের (আফসু) ঘর। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান. সেখানে ঢুকে ভাঙচুর চালায় বহিরাগত হামলাকারীরা। হাতের লাঠি-রড দিয়ে সামনে থাকা ছাত্রছাত্রীদের মারধর শুরু হয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০২:৪১
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে লাঠি হাতে এবিভিপি সমর্থকেরা।—নিজস্ব চিত্র

বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে লাঠি হাতে এবিভিপি সমর্থকেরা।—নিজস্ব চিত্র

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের চার নম্বর গেটের বাইরে ভিড়টা জমতে শুরু করেছিল বিকেল সাড়ে ৫টা-পৌনে ৬টা থেকেই। গেট অবশ্য তখন ছিল তালাবন্ধ। প্রত্যক্ষদর্শী পড়ুয়াদের কথায়, ‘‘ওরা জয় শ্রীরাম স্লোগান দিচ্ছিল।’’ গেটের ভিতরেও ছিল পড়ুয়াদের জমায়েত। সেখানে উপস্থিত কয়েকজন জানান, বাইরে থেকে ক্রমাগত গেটের সামনে আসছিল বহিরাগত লোকজন। এ ভাবেই বাড়তে থাকে উত্তেজনা।

পড়ুয়ারা জানান, ক্যাম্পাসের তিন নম্বর গেট গিয়ে কিছুক্ষণ পরেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকেন আচার্য তথা রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। সমাজতত্ত্ব বিভাগের এক পড়ুয়ার কথায়, ‘‘রাজ্যপাল ক্যাম্পাসে পৌঁছনোর পরে পুলিশকর্মীরা তাঁর নিরাপত্তা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এমন সময়ে বহিরাগতেতরা গেটের তালা ভেঙে ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়ে।’’ পড়ুয়াদের অভিযোগ, প্রায় ৩০০ জনের দল হাতে লাঠি, রড নিয়ে ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে পড়ুয়াদের মারধর শুরু করে। সঙ্গে ছিল অশ্রাব্য গালিগালাজ। নানা ভাগে ভাগ হয়ে তারা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন দিকে ধেয়ে যায়। অভিযোগ, ভিড় থেকে ছোড়া হয় কাচের বোতল, এমনকি অ্যাসিড বাল্বও।

চার নম্বর গেট দিয়ে ঢুকেই ডান দিকে আর্টস ফ্যাকাল্টি স্টুডেন্ট ইউনিয়নের (আফসু) ঘর। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান. সেখানে ঢুকে ভাঙচুর চালায় বহিরাগত হামলাকারীরা। হাতের লাঠি-রড দিয়ে সামনে থাকা ছাত্রছাত্রীদের মারধর শুরু হয়। অনেকে পড়ে যান। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, হামলাকারীরা নিজেদের মাথা থেকে হেলমেট খুলে সেই হেলমেট দিয়ে অনেকের মাথায় মারে।

ইউনিয়ন রুমে এবিভিপি লিখে ছবি তোলার ধুম। নিজস্ব চিত্র

পড়ুয়ারা জানান, হামলাকারীদের একদল ঢুকে পড়ে ইউনিয়ন রুমে। রং দিয়ে ইউনিয়ন রুমের দেওয়ালে লিখে দেওয়া হয় এবিভিপি। ইউনিয়ন রুমের ভিতরের টেবল টেনিস বোর্ড ও ক্যারম বোর্ড উল্টে ভেঙে দেওয়া হয়। ইউনিয়ন রুমের ভিতরের দেওয়ালে আঁকা চে গেভারার গ্রাফিতিতে রংয়ের পোঁচ দিয়ে দেয় হামলাকারীরা। বাঁকিয়ে দেওয়া হয় ফ্যানের ব্লেড, ভাঙা হয় আলমারি। ইউনিয়ন রুমের বাইরের দেওয়ালে রবীন্দ্রনাথের সহজ পাঠের আদলে গ্রাফিতি রয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সেই দেওয়ালে লাথি মারতে থাকে হামলাকারীরা। ভাঙচুর করা হয় পাশেই থাকা ইউনিয়ন রুমের সামনের নোটিস বোর্ড। একাধিক ছাত্রছাত্রীর বইখাতা ভর্তি ব্যাগ ছিল ইউনিয়ন রুমে। পড়ুয়ারা জানান, সেগুলিতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

ইউনিয়ন রুম থেকে এগিয়েই ইউজি আর্টস বিল্ডিং, যেখানে রয়েছে বাংলা, ইংরেজি, তুলনামূলক সাহিত্যের মতো বিভাগ। একতলায় ডিন অফ আর্টসের দফতর। হামলাকারীরা ওই ভবনে ঢুকে সামনের সমস্ত নোটিস বোর্ড ভেঙে দেয়। ভাঙচুর করা হয় বেঞ্চ, টেবিল, চেয়ার। ওই ভবনের নানা ঘরে তখন ক্লাস চলছিল। সেখানে বন্দি ছিলেন অনেক পড়ুয়া, অধ্যাপক। ক্যাম্পাসের ভিতরে ইউনিয়নরুম লাগোয়া টেলিফোন বুথ ও ফোটোকপির দোকানে ভাঙচুর চালিয়ে মারধর করা হয়। প্রায় আধঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলে তাণ্ডব।

ক্যাম্পাসের বাইরে ফুটপাতে চায়ের দোকানে ছিলেন ইতিহাস বিভাগের কয়েকজন পড়ুয়া। তাঁরা জানান, বাইরে থাকা হামলাকারীরা পথচারীদেরও ধরে ধরে হুমকি দিয়ে জিজ্ঞাসা করছিল তারা কোন রাজনৈতিক দল করেন। অভিযোগ, ভিডিয়ো তোলায় গালিগালাজ, মারার হুমকি দিয়ে ফোন কেড়ে নেওয়া হয় অনেকের। এক পড়ুয়ার কথায়, “রীতিমতো ফুঁসছিল হামলাকারীরা। একজন বলছিল, আজ অনেক রক্ত ঝরবে, সব শেষ করে দেব।”

Jadavpur University Babul Supriyo ABVP Violence
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy