টাকা দিত আমানতকারীরা। সেই টাকা নয়ছয় করত ‘গুপ্তচক্র’। রাজস্থানের ‘স্পেশাল অপারেশন গ্রপ’ (এসওজি)-এর অফিসারদের কাছে জেরায় এমনটাই জানিয়েছেন পিনকন কর্ণধার মনোরঞ্জন রায়। এই ‘গুপ্তচক্র’-র সদস্য কারা ছিলেন, কাদের নিয়মিত সেখানে যাতায়াত ছিল, সেটাই এখন মনোরঞ্জন এবং তাঁর তিন সহযোগীকে জেরা করে জানার চেষ্টা করছে এসওজি।
পিনকন গোষ্ঠীর শেক্সপিয়র সরণী এবং রেডক্রস প্লেসে অফিস ছিল। এর মধ্যে রেডক্রস প্লেসের অফিসেই নিয়মিত রাজনৈতিক নেতা, পুলিশ-কর্তা, আইনজীবী-সহ সমাজের নানা প্রভাবশালী ব্যক্তির আড্ডা বসত বলে জানিয়েছেন মনোরঞ্জন। পিনকন গোষ্ঠীর কর্তারা এই আড্ডাকেই ‘গুপ্তচক্র’ বলতেন। এই প্রভাবশালীরা কেউই খাতায়-কলমে সংস্থার কোনও পদে ছিলেন না। কিন্তু নিয়মিত পিনকনের কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য নিতেন। ইতিমধ্যেই এই তালিকায় কয়েক জন আইনজীবী এবং পুলিশ অফিসারের হদিশ পেয়েছে এসওজি। এ বার মিলেছে কয়েক জন রাজনৈতিক নেতার নিয়মিত যাতায়াতের তথ্যও। এসওজি-র এক কর্তার দাবি, ‘‘আমানতকারীদের থেকে টাকা তোলা হত। সেই টাকা প্রভাবশালীরা নিয়ে যেতেন।’’ উত্তর ২৪ পরগনায় শাসক দলের এক ডাকাবুকো বিধায়ক ও বিরোধী দলের এক প্রাক্তন বিধায়ক নিয়মিত পিনকনের কাছ থেকে টাকাও নিয়েছেন বলে দাবি তদন্তকারীদের।
বেঙ্গালুরু বিমানবন্দর থেকে গত ২ নভেম্বর রাতে পিনকনের চার শীর্ষ কর্তাকে গ্রেফতার করে এসওজি। দফায় দফায় জেরায় তদন্তকারীরা জেনেছেন, সারা দেশে আমানতকারীদের থেকে গত কয়েক বছর ধরে ছ’টি সংস্থার নাম দিয়ে ১৬০০ কোটি টাকার মতো তুলেছে পিনকন গোষ্ঠী। ওই টাকা নির্দিষ্ট সময়ে আমানতকারীদের ফেরত দেওয়ার বদলে বেআইনি ভাবে তা সরানো হয়েছে পিনকনের মদের ব্যবসায়। তদন্তকারীদের দাবি, এরই একাংশ চলে গিয়েছে ‘গুপ্তচক্র’-য়। এ বার তাই মনোরঞ্জন ও তাঁর সহযোগীদের কলকাতায় এনে রেডক্রস প্লেসে তল্লাশি চালানোর ভাবনা রয়েছে এসওজি-র। ঠিক তার আগে রাজ্যের অর্থনৈতিক অপরাধ দমন শাখা ওই অফিসটি সিল করার নোটিস দেওয়ায় ফাঁপড়ে পড়েছে এসওজি।
তদন্তকারীদের দাবি, ‘গুপ্তচক্র’-য় প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে একাধিক সংবাদমাধ্যমের কর্তাদেরও যাতায়াত ছিল। পিনকন গোষ্ঠীর বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থা থেকে একটি সংবাদ গোষ্ঠীতে নিয়মিত টাকা সরবরাহের প্রমাণ পেয়েছেন তদন্তকারীরা। ওই সংবাদ গোষ্ঠীর এক কর্তাকে চিহ্নিত করা হয়েছে বলে তদন্তকারীদের দাবি। এক তদন্তকারীর কথায়, ‘‘আমরা গুপ্তচক্রের কুশীলবদের তালিকা তৈরি করছি। তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার পরে কী পদক্ষেপ করা হবে, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করা হবে।’’ বৃহস্পতিবার পিনকন-কর্তা মনোরঞ্জন রায়-সহ চার জনকে জয়পুর সিএমএম আদালতে হাজির করা হলে তাঁদের ফের সাত দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy