Advertisement
E-Paper

ভর্তি দুর্নীতিতে অভিযুক্ত হাঁটছেন মিছিলে, নাগাল পায় না পুলিশই!

গত জুনে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে টাকার বিনিময়ে ভর্তি প্রক্রিয়া চালানোর একাধিক অভিযোগ ওঠে। প্রায় সব ক্ষেত্রেই অভিযোগের তির ছিল শাসক দলের ছাত্র সংগঠন টিএমসিপি-র বিরুদ্ধে।

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৮ ০২:০৪
প্রকাশ্যে: গত শুক্রবার ঝাড়গ্রামে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের প্রচারে রাতুল ঘোষ (চিহ্নিত)। নিজস্ব চিত্র

প্রকাশ্যে: গত শুক্রবার ঝাড়গ্রামে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের প্রচারে রাতুল ঘোষ (চিহ্নিত)। নিজস্ব চিত্র

পরনে সাদা জামা, গলায় সোনার মোটা চেন! ভর্তি দুর্নীতিতে অভিযুক্ত সুরেন্দ্রনাথ কলেজের গ্রুপ-ডি কর্মী রাতুল ঘোষ রয়েছেন বহাল তবিয়তেই। শুক্রবার ঝাড়গ্রামে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) প্রতিষ্ঠা দিবস, ২৮ অগস্টের প্রচারে তাঁকে দেখা গিয়েছে দলের সদ্য প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি জয়া দত্তের সঙ্গে এক সারিতেই! অথচ, পুলিশের খাতায় তিনি এখনও ফেরার। তাঁর খোঁজেই নাকি একের পর এক এলাকা চষে ফেলেছে পুলিশ!

গত জুনে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে টাকার বিনিময়ে ভর্তি প্রক্রিয়া চালানোর একাধিক অভিযোগ ওঠে। প্রায় সব ক্ষেত্রেই অভিযোগের তির ছিল শাসক দলের ছাত্র সংগঠন টিএমসিপি-র বিরুদ্ধে। পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে বুঝে কলকাতা পুলিশ এবং মন্ত্রীদের দ্রুত ময়দানে নামান মুখ্যমন্ত্রী। পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার এবং মন্ত্রীদের পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও কলেজ পরিদর্শনে যান। এমনকি, পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় জয়াকেও। পুলিশি তৎপরতায় শহর থেকেই সেই সময়ে হাতেনাতে গ্রেফতার হন আট জন।

সুরেন্দ্রনাথ কলেজে ভর্তি-দুর্নীতিতে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে ওই কলেজের গ্রুপ-ডি কর্মী রাতুলের বিরুদ্ধে। লালবাজার জানিয়েছিল, এক রাতে নীলমণি দত্ত লেনে তাঁর বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়েছে। সেখান থেকে প্রচুর মার্কশিট, ভর্তির আবেদনপত্র, অ্যাডমিট কার্ডের পাশাপাশি বেশ কিছু নকল নথিও উদ্ধার হয়েছিল বলে জানিয়েছে লালবাজার। তবে সেই সময় তাঁকে গ্রেফতার করা যায়নি। পুলিশের খাতায় সেই থেকেই ফেরার সুরেন্দ্রনাথ কলেজের ‘ভর্তি-দাদা’ রাতুল। পুলিশ ধরতে না পারলেও তাঁকে ফের স্বমহিমায় দেখা গিয়েছে ঝাড়গ্রামে টিএমসিপি-র প্রচার মিছিলে।

আরও পড়ুন: স্কুলপাঠ্যে ফারহানই মিলখা, সরব অভিনেতা

শনিবার ফোনে যোগাযোগ করা গিয়েছিল রাতুলের সঙ্গে। তিনি দাবি করেন, তাঁর বিরুদ্ধে সেই সময়ে ওঠা সব অভিযোগই মিথ্যা ছিল। তাই পুলিশ কিছুই করতে পারেনি। তাঁর কথায়, ‘‘সৎ মানুষ তো বুক ফুলিয়ে ঘুরবেই। সত্যিই অপরাধী হলে পুলিশ ছেড়ে দিত? আমাদের কলেজের তরফে যা বলার তখনই বলে দেওয়া হয়েছে।’’ ভর্তি-দুর্নীতি নিয়ে তাঁর দাবি যাই হোক, তিনি তো ছাত্র নন। তা হলে এখনও ছাত্র সংগঠনের মিছিলে তাঁকে দেখা যায় কেন? রাতুল বলেন, ‘‘আমার বাড়ি ঝাড়গ্রামের কাছেই। বাড়ির কাছে ছিলাম তাই গিয়েছি। দীর্ঘদিন ধরে সৎ ভাবে রাজনীতি করি। যাব নাই বা কেন!’’

রাতুলকে নিয়ে পুলিশি তদন্ত কত দূর?

জানতে যোগাযোগ করা হয়েছিল মুচিপাড়া থানায়। ওই থানা এলাকাতেই সুরেন্দ্রনাথ কলেজ। থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক বললেন, ‘‘সেই সময়ে আমাদের টিমের সঙ্গে লালবাজারের আধিকারিকেরা তল্লাশি চালিয়েছিলেন রাতুল নামে ওই যুবকের বাড়িতে। তাঁকে পাওয়া যায়নি। পরেও খোঁজ মেলেনি। ফেরার রয়েছে।’’ যদিও সুরেন্দ্রনাথ কলেজের পড়ুয়াদের একাংশের দাবি, ১৫ অগস্টের অনুষ্ঠানেও রাতুলকে কলেজে উপস্থিত থাকতে দেখা গিয়েছে। বক্তৃতাও করেছেন তিনি।

ভর্তি-দুর্নীতির অন্যতম তদন্তকারী আধিকারিক তথা লালবাজারের এক শীর্ষকর্তা বললেন, ‘‘নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই তখন ওই যুবকের বাড়িতে তল্লাশি হয়েছিল। এর বেশি কিছু বলা এখনই সম্ভব নয়।’’

অভিযোগ থেকে কি নিষ্কৃতি পেয়েছেন রাতুল? পুলিশকর্তার উত্তর মেলেনি। টিএমসিপি-র সদ্য প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি জয়া বললেন, ‘‘মিছিলে কে কোথায় থাকেন, সব সময় দেখা সম্ভব হয় না। দলনেত্রীর নির্দেশ মেনে টিএমসিপিতে অপরাধের কোনও জায়গা নেই।’’

Corruption Admission TMCP Arrest Police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy